ট্রাম্পকে ঠেকাতে পারবেন ডেমোক্র্যাটরা?

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

রাজনৈতিকভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিপাকে থাকলেও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর আরেক দফা নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা এখনো উজ্জ্বল। আমেরিকার আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে একে একে সরে দাঁড়াচ্ছেন সব তারকা প্রার্থীরা। হিলারি ক্লিনটন থেকে শুরু করে নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা নির্বাচন করবেন না। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এরিখ হোল্ডার, সিনেটর জেফ মাররকেলির মতো আমেরিকাজুড়ে পরিচিত নেতাদের সরে যাওয়ায় এখনই উদ্বেগ শুরু হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা নির্বাচন ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তুতি ও প্রার্থিতা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
গত নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের ভিন্ন ধারার প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স এবারও নির্বাচনে আছেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর পক্ষে তোড়জোড় চলছে। তহবিলের অবস্থাও ভালো। নিজেকে সমাজতন্ত্রী পরিচয় দেওয়া বার্নি স্যান্ডার্স তরুণ ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে গত নির্বাচনেও জনপ্রিয় ছিলেন; এবারও থাকবেন। তবে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে থামাতে পারবেন বলে দলের সমর্থকেরাও মনে করেন না। এদিকে আমেরিকার রাজনীতিতে ক্যারিশমাটিক নেতা হিসেবে পরিচিত ধনকুবের মাইকেল ব্লুমবার্গ প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ালেও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঠেকানোর জন্য ডেমোক্র্যাটদের উদ্দেশে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। ডেমোক্রেটিক দলে অতি বাম ও অতি উদারনৈতিকদের উত্থান জাতীয়ভাবে ডেমোক্র্যাটদের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে বলে মনে করেন মাইকেল ব্লুমবার্গ।

বাকি আছেন একজন ডেমোক্র্যাট তারকা নেতা। তিনি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁকে নিয়ে আলোচনা চলছে এখন। নিজের ছেলের অকাল মৃত্যুর শোকের কারণে গত নির্বাচনে জো বাইডেন প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ান। ডেমোক্রেটিক দলে মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত জো বাইডেনকে নিয়ে আশাবাদী অনেক ডেমোক্র্যাট।
হিলারি ক্লিনটন আগামী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেকটা বিদ্রূপ করে টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘তাহলে আমাকে হোয়াইট হাউসের জন্য “ক্রুক” হিলারির সঙ্গে লড়তে হবে না! তাঁকে খুব মিস করব!’
এদিকে জো বাইডেন এখনো ঘোষণা করেননি তিনি কী করবেন। তাঁর দিকে চেয়ে আছেন বহু সমর্থক। সমর্থকদের একটি বড় অংশ শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে নিউইয়র্ক নগরীর সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গের দিকে তাকিয়ে ছিল। স্বচ্ছ রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ও ধনকুবের হওয়ায় তাঁর নির্বাচনী তহবিল নিয়েও এক ধরনের নিশ্চয়তা ছিল। নিজের অর্থ থেকে অন্তত ১০ কোটি ডলার নির্বাচনী প্রচারে ব্যয় করার কথা এসেছিল মার্কিন সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু ৫ মার্চ মাইকেল ব্লুমবার্গ জানিয়ে দেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। হোয়াইট হাউসে না গিয়েও দেশের সেবা করা যাবে। একই সঙ্গে আমেরিকায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানির নিশ্চয়তার জন্য নিজের সময় ও অর্থ ব্যয় করার কথাও বলেছেন তিনি। ব্লুমবার্গে লেখা মন্তব্য প্রতিবেদনে তিনি পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঠেকাতে কাজ করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে বলেছেন, ডেমোক্রেটিক দলের অনেকেই প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। ফলে বাছাই পর্বে তাঁর উতরে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি নিঃশংসয় নন। বামপন্থীদের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থিতা পাওয়া কঠিন হবে উল্লেখ করে তিনি সতর্ক করেছেন, বাছাই পর্বে ডেমোক্রেটিক দল যদি অতি উদারনৈতিকতায় ডুবে যায়, তাহলে তা মূল নির্বাচনে বিপর্যয় নিয়ে আসবে। এই একই বিষয়ে অবশ্য মাইকেল ব্লুমবার্গের সঙ্গে অনেক ঘাগু ডেমোক্র্যাট নেতাও একমত।
নির্বচনে নিজেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঠেকাতে সক্রিয় থাকবেন হিলারি ক্লিনটন, মাইকেল ব্লুমবার্গের মতো রাজনীতিবিদরা। যদিও তাঁদের এ সক্রিয় বিরোধিতা ট্রাম্পকে দমাতে কতটা সহায়ক হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ভালো নেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও যে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে তিনি গত নির্বাচনে পার পেয়েছেন, তাঁর সে ভিত্তি এখনো বেশ শক্ত। একের পর এক খেয়ালি আচরণ করেও তিনি টিকে আছেন। ছেড়ে যায়নি সমর্থকেরা। এখনো রিপাবলিকান দলে ডোনাল্ড ট্রাম্পই জনপ্রিয়। বিশেষত শ্বেতাঙ্গ সমর্থকদের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা এখনো তুঙ্গস্পর্শী। যদিও কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটরা যে হারে তদন্ত শুরু করেছেন, তা প্রেসিডেন্টের জন্য শিরপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে। যত দিন রিপাবলিকান পার্টির হাতে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ ছিল, তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে প্রেসিডেন্টকে আগলে রাখতে। কিন্তু গত নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ভার চলে গেছে ডেমোক্র্যাটদের হাতে।
ট্রাম্প কতটা উদ্বিগ্ন, তা বেশ বোঝা যায় সম্প্রতি দেওয়া তাঁর এক টুইটার পোস্ট থেকে। ওই পোস্টে তিনি দাবি করেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। একদল বাজে লোক আমার বিরুদ্ধে অবৈধ তদন্তে মেতে উঠেছে। আমার একমাত্র অপরাধ গত নির্বাচনে আমি জিতেছি।’
ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন উদারনৈতিকদের তারকা প্রার্থী এলিজাবেথ ওয়ার্নার। তিনি বলে রেখেছেন, ‘আগামী নির্বাচনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন মুক্ত মানুষ হিসেবে থাকছেন না। তাঁকে কারাগারেই থাকতে হবে।’
আমেরিকার ইতিহাসে যা আগে কখনো ঘটেনি, তেমন অনেক কিছুই ঘটেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত আমেরিকার রাজনীতিতে শুধু ডোনাল্ড ট্রাম্পই নয়, ডেমোক্র্যাটরাও যে নানা নাটকীয়তা নিয়ে আসবে, তার আলামত এখনই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যদিও এ নাটকের ফল কোনদিকে যাবে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।