সিনেটেও ট্রাম্পের জরুরি অবস্থা প্রত্যাখ্যান

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেট ৫৭-৪১ ভোটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জরুরি অবস্থা ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। মেক্সিকোর সঙ্গে তাঁর প্রস্তাবিত দেয়ালের জন্য কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। এই সিদ্ধান্ত অশাসনতান্ত্রিক, মার্কিন শাসনতন্ত্রে আইন পরিষদ ও নির্বাহী শাখার মধ্যে যে কর্মবিভক্তি নির্ধারিত আছে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা তার পরিপন্থী—এই যুক্তিতে সব ডেমোক্রেটিক সিনেট সদস্যের সঙ্গে ১২ জন রিপাবলিকান সিনেটর প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেন।

এটি ছিল পরপর দ্বিতীয় দিনের মতো ট্রাম্পের অনুসৃত নীতি প্রত্যাখ্যান করে সিনেটের সিদ্ধান্ত। বুধবার ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধে মার্কিন সমর্থন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সিনেটে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। সেই প্রস্তাবের পক্ষে সাতজন রিপাবলিকান সব ডেমোক্র্যাটের সঙ্গে ভোট দেন। ইয়েমেনের যুদ্ধে বিরোধিতা করে গৃহীত প্রস্তাবটি অবশ্য এখনো প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপিত হয়নি। ডেমোক্রেটিক সমর্থনে তা যে গৃহীত হবে, তাতে অবশ্য কোনো সন্দেহ নেই।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই প্রস্তাবে তিনি ভেটো দেবেন। জরুরি অবস্থা প্রত্যাখ্যান করে প্রস্তাবটি সিনেটে গৃহীত হওয়ামাত্রই এক টুইটে তিনি বড় বড় অক্ষরে লিখে জানান, ‘ভেটো’।

জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিরুদ্ধে ভোট না দিতে ট্রাম্প তাঁর দলের সিনেটরদের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। এই ভোট হবে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট। যেসব সিনেটর তাঁর বিরোধিতা করবেন, ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি তাঁদের সমর্থন করবেন না, এমন হুমকিও দিয়েছিলেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার সঙ্গে যুক্ত দেশের নিরাপত্তা, এর সঙ্গে শাসনতন্ত্র লঙ্ঘনের কোনো ব্যাপার নেই। তিনি এমন কথাও বলেছিলেন, এবারের মতো জরুরি অবস্থা ঘোষণা মেনে নেওয়া হোক। এরপর প্রেসিডেন্টের জরুরি অবস্থা ঘোষণার অধিকার সীমিত করে কোনো সংশোধনী উত্থাপিত হলে তিনি তা সমর্থন করবেন। স্পষ্টতই রিপাবলিকান সিনেটররা তাঁর সে কথায় আস্থা রাখতে পারেননি।

নিজ দলের সদস্যদের বাগে আনার এই ব্যর্থতাকে অনেকে ট্রাম্পের জন্য একধরনের ‘কানমলা’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। গত দুই বছর কংগ্রেসের উভয় কক্ষের রিপাবলিকান সদস্যরা বিনা প্রতিবাদে ট্রাম্পের সব সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। এবারই তার ব্যতিক্রম ঘটল। কংগ্রেসের ক্ষমতা লঙ্ঘন করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হজম করা তাঁদের সবার পক্ষে সহজ ছিল না। মার্কিন শাসনতন্ত্র অনুসারে, বাজেট প্রশ্নে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কংগ্রেসের। ট্রাম্প তাঁর দেয়ালের জন্য যে অর্থ দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস তা প্রত্যাখ্যান করার পর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে তিনি সামরিক খাতে বরাদ্দকৃত বাজেটের একাংশ আদায়ের চেষ্টায় ছিলেন। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের একাংশের দাবি, এটি নির্বাহী শাখা ও আইন পরিষদের ক্ষমতা বিযুক্তিকরণের যে বিধান রয়েছে, তার লঙ্ঘন।

কেন ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করে রিপাবলিকান সিনেটর রব পোর্টম্যান বলেছেন, প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই শাসনতন্ত্র মেনে চলতে হবে, তাঁকে কংগ্রেসের ক্ষমতা অস্বীকার করতে হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার মতো আইনি অস্ত্রকে আরও সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

কংগ্রেসের উভয় কক্ষে জরুরি অবস্থা ঘোষণা প্রত্যাখ্যাত হলেও প্রেসিডেন্টের ভেটোর কারণে আপাতত তা বাতিল হচ্ছে না। ভেটো রদ করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন চাই, যা কংগ্রেসের কোনো কক্ষেই অর্জন সম্ভব নয়। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত এই মামলা গড়াবে বলে ভাবা হচ্ছে।