বিমানবন্দরে হয়রানি

আধুনিক বাজারব্যবস্থায় ক্রেতা আকর্ষণে কত কিছুই তো দস্তুর। কখনো একটির সঙ্গে একটি ফ্রি, কখনো বা মূল্যছাড়ের আকর্ষণীয় সব অফার থাকে। এসব আকর্ষণীয় অফারের আবার থাকে নানা ফাঁকফোকর, যেখানে অনেক সময় সাধারণ ক্রেতাদের ফেঁসে যেতে দেখা যায়। নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে যেতে বিশেষ ছাড়ে উড়োজাহাজের টিকিট কিনে অনেকে এভাবেই বিপাকে পড়েছেন।
বিদেশ-বিভুঁইয়ে থাকা মানুষদের মন অনেকটাই হয় চিলের মতো। যত উঁচু আকাশেই উড়ুক না কেন, চিলের মন পড়ে থাকে মাটি ও জলে। ঠিক একইভাবে প্রবাসে থাকা মানুষদের মন পড়ে থাকে জন্মভূমিতে। তাই সুযোগ পাওয়া মাত্রই সেই ভূমিতে ফিরে আসার এক তীব্র আকর্ষণ তার মধ্যে সব সময় কাজ করে। অনেক সময় উচ্চ পথখরচের কারণে অনেকের পক্ষে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেশে আসা সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় সাধ ও সাধ্যের মিল ঘটাতে প্রবাসীদের চোখ উড়োজাহাজের টিকিটের মূল্যছাড়ের খোঁজে নেমে পড়াটাই স্বাভাবিক। তাঁরা তা খোঁজেনও। কিন্তু এই মূল্যছাড়ের টিকিট কিনেই সম্প্রতি নিউইয়র্কপ্রবাসী বাংলাদেশি অনেকে বিপাকে পড়েছেন।
মূল্যছাড়ের আকর্ষণীয় অফারের আড়ালে থাকা শর্তগুলো না দেখার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশি বেশ কয়েকজন যাত্রী সম্প্রতি বিমানবন্দরে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ছাড়কৃত মূল্যের টিকিটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাঁদের লাগেজ বহনের সুবিধা সীমিত করার বিষয়টি সম্পর্কে তাঁরা অবহিত ছিলেন না। বিষয়টি তাঁরা জানতে পারেন লাগেজপত্র নিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার পর। ফলে শেষ পর্যন্ত তাঁদের বিপুল অঙ্কের জরিমানা গুনে লাগেজ ছাড় করাতে হয়। এ ছাড়া আর কোনো উপায় তাঁদের ছিল না। কারণ, দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশে যাওয়ার সময় আত্মীয়-বন্ধুদের জন্য কেনা উপহার তো আর ফেলে যাওয়া যায় না। অথচ এমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ট্রাভেল এজেন্টরাই বিষয়টি সম্পর্কে যাত্রীদের অবহিত করার কথা। সাধারণত উড়োজাহাজের টিকিটে মূল্যছাড়ের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ শর্ত থাকে। এই শর্তগুলো সম্পর্কে যাত্রীকে অবহিত করার দায়িত্বটা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের। এ দায়িত্ব তারা পালন করছে না। এমনকি বিমানবন্দরে গিয়ে বিপাকে পড়ার পর সহায়তা চেয়ে যোগাযোগ করলেও তারা নীরবতা দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে আসার সময় সাধারণত বাংলাদেশি মালিকানাধীন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো থেকেই সেবা নিয়ে থাকেন। তাই এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ তাঁদের মর্মাহত করছে।
অবশ্য এ ক্ষেত্রে কিছুটা দায়িত্ব যাত্রীদের ওপরও বর্তায়। কারণ, আধুনিক বাজারব্যবস্থায় ক্রেতা আকর্ষণে নানা অফার দেওয়াটা যেমন দস্তুর, তেমনি এসব অফারের পেছনের নানা কঠোর শর্তকে আড়াল করাটাও একটা রেওয়াজ। ফলে বিশেষ অফারের আওতায় কোনো পণ্য বা সেবা কেনার সময় ক্রেতাদের একটু বেশি সচেতন হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আমেরিকাপ্রবাসী বাংলাদেশি, সে সেবাদাতা বা সেবাগ্রহীতা, যে-ই হোক, সবাই এ ক্ষেত্রে সচেতন হবেন, এটাই কাম্য।