'মোর প্রিয়া হবে এস রাণী'

সোনিয়া কাদের
মোর প্রিয়া হয়ে এস রাণী
দেব খোঁপায় তারার ফুল
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া–তিথির
চৈতী চাঁদের দুল।
যখন হাতে হাতে প্রযুক্তি ছিল না, প্রেমিক তরুণদের পকেট অর্থে পূর্ণ ছিল না, প্রিয়ার মন রাঙাত, মান ভাঙাতে পকেটে থাকতো বেলি ফুলের মালা।

বেলি ফুলের ইংরেজি নাম Jasmine sambac, বাংলা একাডেমির অভিধানে বেলি ফুলের নাম বেলফুল হলেও সব মানুষের কাছে বেলি ফুল নামেই পরিচিত।

এখন লুকোচুরি লুকোচুরি প্রেম প্রযুক্তি–নির্ভর ও লাল গোলাপমুখী হয়ে গেলেও বিগতকালে প্রেমের অনুষঙ্গ, বেলি ফুলের মালার আবেদনের কোনো কমতি হয়নি। এখনো প্রিয়ার মন জয় করতে কিংবা অভিমান ভাঙাতে মাধ্যম হচ্ছে বেলি ফুল।

ঢাকার রাস্তার ভয়াবহ যানজটে বিরক্তি যখন চরমে তখন ‘ম্যাডাম, তাজা বেলি ফুলের মালা নেবেন?’ বলে এগিয়ে আসে শিশু ফুল বিক্রেতা। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ফুল বিক্রেতা শিশুদের হাতে চিকন কঞ্চিতে ঝোলানো থাকে সারি সারি লোভনীয় সৌন্দর্য।
সাদা রঙের তীব্র সুগন্ধযুক্ত, মালা গাঁথার বিশেষ উপযোগী বেলি ফুল বাংলাদেশে সবার পরিচিত।
সাজগোজের জন্য হোক কিংবা মাতাল করা সুগন্ধের কারণেই হোক, বেলি ফুল প্রিয় সবারই। হাজারো ফুলের সৌন্দর্যের মধ্যেও বেলি ফুলের আবেদন এখনো অনন্য।
প্রেমের মালা গাঁথতে বেলির মালার আছে বিশেষ ভূমিকা।
কত মুগ্ধতা, অবাক হওয়া ভালো লাগার স্মৃতি আছে বেলিকে নিয়ে! বেলি ফুলের মালার কাছে তুচ্ছ মনে হতো স্বর্ণের অলংকার। প্রিয়জনের কাছ থেকে যত বই উপহার পেয়েছি সব থাকত বেলি ফুলের মালায় জড়ানো।
সাদা বেলিকে অসম্ভব ভালোবাসি আমি। আমার কাছে বেলিকে মনে হয় পবিত্রতা ও শুভ্রতার প্রতীক।
নানা রকম ফুলে বাজার সমৃদ্ধ। অসংখ্য ফুলের রঙে-রুপে চোখ ফেরানো দায়। কিন্তু এমন স্নিগ্ধ সাদার আবেদন আর কোনোটিতেই নেই। খোঁপায়-বেণিতে কিংবা হাতে একগুচ্ছ বেলি সবার নজর কাড়তে অতুলনীয়। বিয়ের সাজের সেরা অনুষঙ্গ বেলি ফুল।
বেলি ফুল মানুষের স্নায়ুর চাপ কমায়। সাদার শুভ্রতায় নির্মল ও ফুরফুরে হয়ে ওঠে মন। মনের ক্লান্তি দূর করতে এ ফুলের সৌন্দর্য ও সৌরভ কাজ করে জাদুর মতো। রাতে বিছানার পাশে প্লেটে বেলি ফুল রাখলে অবসাদ দূর করে রাতের পরিবেশকে করে মোহনীয়। নির্মল সাদা রাগ-বিরক্তি সরিয়ে ফেলে।
প্রচলিত কথা-বাংলাদেশের কোনো মেয়ে বেলি ফুল পরে রাগ করে থাকতে পারে না।