মিটার পার্কিংয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ

নিউইয়র্কে মিটার পার্কিং নিয়ে বিড়ম্বনা বাড়ছে। সামান্য অসতর্কতার জন্য গুনতে হচ্ছে কড়া মাশুল। নগরীর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আসছে শুধু এই পার্কিং জরিমানা থেকে। এ ক্ষেত্রে মিটার পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অনেক ক্ষেত্রেই সড়কপাশের পার্কিং নির্দেশনা ঠিকমতো না দেখেই অনেকেই গাড়ি পার্ক করেন। এ কারণে বড় অঙ্কের জরিমানাও গুনতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এ ক্ষেত্রে পার্কিং স্থান নিয়ে নির্দেশনাগুলোয় বিদ্যমান অস্পষ্টতাও কিছুটা দায়ী। তবে গাড়ি পার্ক করার সময় সংশ্লিষ্ট স্থানের পার্কিং নির্দেশনা ঠিকমতো পাঠ না করাকেই বড় কারণ হিসেবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আমেরিকায় গাড়ি কোনো বিলাসী বাহন নয়। গাড়ি এখানকার অনেক মানুষেরই চলাচলের অপরিহার্য বাহন। প্রতিদিনের কাজকর্ম সম্পাদন, সপ্তাহের ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে বেড়ানো থেকে শুরু করে সংসারের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতেও গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে হয়। সুপার মার্কেট, শপিং সেন্টার ছাড়া গ্রোসারি বা রেস্তোরাঁয় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকে না অনেক ক্ষেত্রেই। ফলে সড়কপথে মিটার পার্কিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

অনেক এলাকায় সপ্তাহের শনিবার ও রোববার ফ্রি মিটার পার্কিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় সপ্তাহের সাত দিনই মিটার পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। অনেকে শনিবার ও রোববার ফ্রি মিটার পার্কিং ভেবে বেখেয়ালে গাড়ি পার্ক করে চলে যান। ফিরে এসে দেখেন লাল-গোলাপি রঙের পার্কিং জরিমানার খাম ঝুলে রয়েছে গাড়ির গায়ে। তখন দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।
এদিকে ইদানীং পার্কিং জরিমানার হার বেড়েছে। নিউইয়র্ক নগরীর প্রতিটি এলাকায় সিটির নিয়োগ করা শত শত ট্রাফিক এজেন্ট টহল দিচ্ছে। এজেন্টদের কাজই হচ্ছে জরিমানার টিকিটটি লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট গাড়ির গায়ে সেঁটে দেওয়া। প্রযুক্তির সহায়তায় স্ক্যান মেশিনের মাধ্যমে গাড়ির নিবন্ধন স্ক্যান করে রাখেন ট্রাফিক এজেন্টরা। এ সময় যদি টিকিট লেখা সম্ভব নাও হয়, তাতেও সমস্যা নেই। কারণ স্ক্যান হয়ে গেছে। যেকোনো সময় সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিকের কাছ থেকে জরিমানার অর্থ আদায় করা তাদের পক্ষে সম্ভব।
অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে এ নিয়ে বিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায় সাধারণ নাগরিকদের। জরিমানার নোটিশ দেখে অনেকেই চটে যাচ্ছেন। ‘কেন টিকিট দিয়েছেন’ অথবা ‘একটি মিনিট হয়েছে মাত্র’-এমন নানা বিষয় নিয়ে এজেন্টদের সঙ্গে জড়াতে দেখা যায় অনেককেই। কিন্তু এ ধরনের তর্ককেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা ফোজদারি আইনের আওতায় পড়ে। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, ভুলেও পুলিশ কিংবা ট্রাফিক এজেন্টদের সঙ্গে তর্ক করা যাবে না। মেশিনে পে স্লিপ থাকে এবং পুলিশ বা ট্রাফিক এজেন্টের সমন জারির সময়ের সঙ্গে এর সময়ের মোটামুটি মিল থাকলে জরিমানার হাত থেকে মাফ পাওয়া যাবে। অনেকাংশে অনলাইনেও শুনানির মাধ্যমে জরিমানা মওকুফ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এও তো এক বিড়ম্বনাই। তাই সতর্ক থাকাটাই সবচেয়ে ভালো।
ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করে লাভ নেই। কারণ, এ কাজের জন্যই তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন শুধু যানবাহন-সংক্রান্ত আইন অমান্যকারীদের কাছ থেকে নিউইয়র্ক নগরী সংগ্রহ করছে লাখ লাখ ডলার। আদায়কৃত জরিমানা নগরীর বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়। এ ক্ষেত্রে একজন ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাকে তার দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই তাদের সঙ্গে তর্কে না গিয়ে নিজে সতর্ক থাকাটাই জরুরি। পার্কিং করার সময় পার্কিং বোর্ডটি ভালোভাবে পড়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে রাস্তা পরিষ্কারের সময়সূচিটিও জরুরি। কারণ নির্ধারিত সময়ে যেসব গাড়ি পার্ক করা থাকে, সেগুলোর জন্যও রয়েছে জরিমানার বিধান।