মুসলিমদের ঘোর অমানিশায় ট্রাম্পের এমন প্রতিক্রিয়া!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে শ্বেত সন্ত্রাসীর হামলায় ৪৯ জন মুসলিমের নিহত হওয়ার ঘটনাটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষায় খুবই ভয়াবহ একটা ঘটনা। কিন্তু এর দ্বারা শ্বেত উগ্রতাবাদ বিস্তৃত হচ্ছে, সে কথার প্রমাণ হয় না বলে মনে করেন তিনি।

ট্রাম্প বলেছেন, নিউজিল্যান্ডে যা ঘটেছে, তা গুটিকয়েক মানুষের হাতে খুবই ভয়াবহ একটি ঘটনা। কিন্তু শ্বেত জাতীয়তাবাদ কোনো বৈশ্বিক সমস্যা নয়। গতকাল শুক্রবার সকালে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প এ কথা বলেন।

ট্রাম্প তাঁর মন্তব্যের কোথাও ঘটনাটি একটি সন্ত্রাসী বা জঙ্গি হামলা—এ কথা উল্লেখ করেননি। হামলার শিকার যে মুসলিম সম্প্রদায়, সে কথাও উল্লেখ করতে তিনি ব্যর্থ হন।

এক টুইটে ট্রাম্প এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের জন্য নিউজিল্যান্ডের জনগণের প্রতি তাঁর ‘উষ্ণ সহানুভূতি’ জ্ঞাপন করেন। তাতেও মুসলিম বা সন্ত্রাস শব্দটি ছিল না।

পরে ট্রাম্পের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স এক বিবৃতিতে ক্রাইস্টচার্চের হামলার ‘তীব্র নিন্দা’ জানান। সে দেশের মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

এই হামলা যে একজন ইসলামবিদ্বেষী শ্বেত জাতীয়তাবাদীর হাতে সংঘটিত একটি সন্ত্রাসী ঘটনা, তা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থতার কারণে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয় পরিষদ এক নিবন্ধে বলেছে, এই ঘটনা একটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’, যার পেছনে রয়েছে প্রবল ইসলামবিদ্বেষ। অথচ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সে কথা উপেক্ষা করে যে কথা বলেছেন, তাতে একটি ভুল বার্তা পাঠানো হয়েছে। ক্রাইস্টচার্চের সন্ত্রাসী হামলাকারী তাঁর ৮৭ পাতার ইশতেহারে অভিবাসীদের আগমনকে হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ঠিক একইভাবে ট্রাম্প মেক্সিকো থেকে আগত বহিরাগতদের আগমনকে ‘হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেন। এটি ভুল। তাঁর উচিত এ কথার নিঃশর্ত নিন্দা করা।

দ্য নেশন পত্রিকায় জন নিকলস বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন একটি জঘন্য ঘটনার পরেও তার স্পষ্ট নিন্দা করতে ব্যর্থ হলেন। বিশ্বের মুসলিমদের জন্য কৃষ্ণতম এমন একটি দিনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম, ইসলাম, ইসলামবিদ্বেষ, শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদ, বর্ণবাদ, ঘৃণা, বা ধর্মের কারণে ঘৃণাপূর্ণ সহিংসতা—এই কথাগুলো বলতে ব্যর্থ হলেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা এক যৌথ বিবৃতিতে নিউজিল্যান্ডের জনগণ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করেছেন। তাঁরা বলেছেন, যেকোনো ধরনের ঘৃণার বিরুদ্ধে সবাইকে উঠে দাঁড়াতে হবে।

একই কথা বলেছেন হিলারি ক্লিনটন। এক বিবৃতি তিনি বলেন, ইসলামবিদ্বেষ ও বর্ণবাদকে স্বাভাবিক করে নেওয়ার যেকোনো চেষ্টায় বাধা দিতে হবে। বিশ্বের সব নেতারই উচিত, শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদী সন্ত্রাসীদের নিন্দা করা। তাদের সহিংস ঘৃণা যেভাবেই হোক থামাতে হবে।

জন নিকলস লিখেছেন, এখন সারা বিশ্ব যখন সব নেতৃত্বের অপেক্ষায়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টের উচিত ছিল ঠিক এইভাবেই তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা।

ক্রাইস্টচার্চের হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক ভীতি ও উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। এই ঘটনার নিন্দা করতে ট্রাম্পের ব্যর্থতাও তাদের নজর এড়িয়ে যায়নি।

হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত সন্ত্রাসী তাঁর ইশতেহারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘শ্বেত আত্মপরিচয় ও অভিন্ন আদর্শের একটি প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই কথা উল্লেখ করে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ রিচার্ড কোহেন বলেছেন, ট্রাম্পের নিজের কথাতেও অনেক সময় মুসলিমবিদ্বেষ ধরা পড়ে।

কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের একজন মুখপাত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আরও কঠোর ভাষায় এই হত্যাকাণ্ড নিন্দার আবেদন জানিয়েছেন।