ছাত্রঋণ নিয়ে মহাসংকটে আমেরিকার অর্থনীতি

আমেরিকায় ঋণ ছাড়া পড়াশোনার কথা ভাবাই যায় না। এর প্রভাব এখন আর ব্যক্তিগত পর্যায়ের টানাপোড়েনের সীমাবদ্ধ নয়। আমেরিকার পুরো অর্থনীতির ওপরও এই ঋণ মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
ছাত্র ঋণের ধরন ও ঋণের পরিমাণ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। ঋণ নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেও অনেকেই প্রত্যাশা মতো চাকরি পাচ্ছেন না। ফলে ঋণ পরিশোধে সময় নিচ্ছেন। এতে সুদ বাড়ছে। শেষ বয়সে এসেও অনেকে ছাত্র ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি—এমনও শোনা যায়। এই ছাত্র ঋণ নিয়ে এখন নড়েচড়ে বসেছে আমেরিকা। এই ঋণ আমেরিকান প্রজন্মের কতটুকু কাজে লাগছে, এ নিয়ে ওয়াশিংটনে চলতি সপ্তাহেই আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।

কলেজে ভর্তি ও উচ্চশিক্ষার ব্যয়ের বিষয়টা বর্তমান সময়ে আমেরিকার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনেক ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথাকথিত সহস্রাব্দ প্রজন্মের জন্য সর্বাধিক সম্ভাব্য স্কুল ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির আকাঙ্ক্ষা পূরণে বাড়তি এই খরচের চাপ কমাতে সম্মিলিতভাবে সরকারকে মূলত অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনতে হবে। ফেডারেল রিজার্ভ স্টাফ থেকে সম্প্রতি এই বিষয়ে বিচার বিশ্লেষণ ও বিবেচনা করা হয়। ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ২৪ থেকে ৩২ বছর বয়সী ছাত্রদের গড় ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ডলার থেকে ১০ হাজার ডলারে বেড়েছে। একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একই সময়ের মধ্যে বাড়ি ও গাড়ি কেনার পরিমাণ ৯ শতাংশ কমে গেছে।
গত বছরজুড়েই গৃহঋণ নেওয়া মানুষের পরিমাণ চার শতাংশের মধ্যে ছিল। কিন্তু এ বছরে তা অনেক কমে গেছে। এর কারণ বিশেষজ্ঞরা প্রজন্মের পর প্রজন্মের ব্যাংক ঋণকে দায়ী করেন। এতে দেখা যায়, সারা বছর ধরেই ছাত্র ঋণের প্রভাবই এর জন্য দায়ী। উত্তর-পশ্চিম মিউচুয়াল লাইফের ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩৬ হাজার ডলার। মিলিনিয়াল গোল বা সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা গবেষণা করতে গিয়ে দেখা গেছে, এই প্রজন্মের সঙ্গে ছাত্র ঋণের প্রভাব দেখা গেছে।
জেনার্স জার্স ও বেবি বুমার্সের মতো ঋণ ব্যবসায়ীদের বৃহত্তম উৎস তাদের বন্ধকি সুদ, যা বয়স অনুযায়ী যথাক্রমে ৩২ ও ২৫ শতাংশ হারে চক্র বৃদ্ধি হতে থাকে। ছাত্রদের জন্য ব্যক্তিগত শিক্ষা ঋণ ২১ শতাংশ। অর্থনীতির হিসাব মতে, তাদের পুরোনো প্রজন্মের প্রায় একই পরিমাণ ঋণ রয়ে গেছে যা সংখ্যায় গুরুতর হলেও ইতিমধ্যে তাদের ঋণ কিছুটা পরিশোধ হয়েছে।
শিক্ষাঋণের প্রভাব শুধু ব্যক্তিগত আর্থিক পরিস্থিতিতে টান পড়ে না। এটি সামগ্রিক অর্থনীতির বড় ক্ষতি করছে। কোটি কোটি আমেরিকান তরুণ সমাজ যথেষ্ট অর্থ সংকটে রয়েছে। তাই তরুণেরা এখন ঘরবাড়ি বা শৌখিন গাড়ি আগের মতো কিনছে না, এতে অর্থনীতির মূল অংশে ক্ষতি হচ্ছে। আসল কথা হচ্ছে, সব ছাত্র ঋণ খারাপ ঋণ না। শিক্ষা ঋণ সাধারণত একটি বিনিয়োগ যা ছাত্ররা চাকরিতে ঢুকেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করে দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কলেজের খরচ ও পড়াশোনার ঋণ এক সঙ্গে হয়ে ঋণের আকার বড় হয়। এই ঋণের বোঝা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অস্বাভাবিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে কিনা।
সম্প্রতি এনবিসি নিউজ/ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক জরিপে মিলিনিয়াল গ্রুপের ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ব্যক্তিদের ‘সমাজতন্ত্র’ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তাদের উত্তরে নেতিবাচক কোনো দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না। তবে ৩৮ শতাংশ মিশ্র মতামত দেয় এবং ২১ শতাংশ ইতিবাচক অনুভূতি ব্যক্ত করে।
মধ্যবয়সীদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের মধ্য ‘সমাজতন্ত্র’ সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। সমাজতন্ত্র সম্পর্কে এমন ধারণার ভিন্ন ভিন্ন কারণ হতে পারে। তরুণ ভোটাররা সাধারণত রাজনৈতিক চিন্তায় বাম ঘরানার হয়ে থাকে। সমাজতান্ত্রিক চিন্তার পক্ষে তরুণ ভোটারদের নির্বাচনী প্রার্থীদের তেমন উদ্বেগ দেখা যায় না। অবশ্য ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স নিজেকে ডেমোক্রেটিক সমাজতান্ত্রিক বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। কিন্তু ছাত্রঋণের ব্যাপারে তিনিও উদাসীন।
উচ্চশিক্ষার শুরুতেই সব ছাত্রের বড় আকারের ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণের বোঝা কাঁধে নিতে হয়। তাই আমেরিকান স্বপ্ন কিনতে ঋণের বোঝা ছাড়া এখনো অন্য কোনো সহজ উপায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে সমাজ ব্যবস্থা কীভাবে পরিচালিত হয়, তা নিয়ে তরুণদের মধ্যে কোনো আগ্রহ নেই। তারা চায় নাটকীয় পরিবর্তন।