মন্দার মুখে নিউইয়র্ক

প্রায় চার দশক পর ব্যাপক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে নিউইয়র্ক। মূলত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পাস করা নতুন কর আইনের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে নিউইয়র্ককে। সঙ্গে রয়েছে ব্যাপক পরিমাণ অপরিশোধিত ঋণের চাপ। এই দুই মিলে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতি বেশ নাজুক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শঙ্কা ঘনিয়ে উঠেছে নিউইয়র্ক নগরকে নিয়ে।
নিউইয়র্ক সিটি ব্যাংক দেউলিয়া ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে বলে এরই মধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদেরা। এর মূল কারণ অপরিশোধিত ঋণ। নিউইয়র্কে দীর্ঘকালীন দেনার পরিমাণ এখন পরিবারপ্রতি ৮১ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার। এদিকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত কর আদায়ের ফলে নিউইয়র্কের অনেক উচ্চবিত্ত অন্য অঙ্গরাজ্যে চলে যাচ্ছেন। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়তে পারে নিউইয়র্ক।
নতুন কর আইনের কারণে নিউইয়র্ক পরিণত হয়েছে উচ্চ কর রাজ্যে। করপোরেট কর কমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনার যুক্তি দেখানো হলেও আদতে তা ধনী ও অতি ধনী ব্যক্তিদের নিউইয়র্কের প্রতি অনাগ্রহী করে তুলছে। কারণ নতুন কর আইনের কারণে নিউইয়র্ক উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের প্রায় ৫০ শতাংশ হারে কর দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সম্পত্তি কর বাড়ায় বেড়ে গেছে আবাসন ব্যয়। ফলে মধ্যবিত্তদের জন্য নিউইয়র্ক কম আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ফলে নিউইয়র্ক ব্যবসা ও বাণিজ্যের জন্য কম আকর্ষণীয় অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে অতি উচ্চ দীর্ঘমেয়াদি দেনা। নিউইয়র্কে দীর্ঘকালীন দেনার পরিমাণ এখন পরিবারপ্রতি ৮১ হাজার ১০০ ডলার। ফলে আর্থিক খাতও ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
নিউইয়র্ক নগর ও অঙ্গরাজ্য আমেরিকায় কর ও দেনার দিক থেকে এক নম্বরে। সম্পত্তি কর থেকে নিউইয়র্ক নগরের আয় মূল বাজেটের প্রায় অর্ধেক। এই কর হু হু করে বাড়ায় নিউইয়র্কবাসীর ত্রাহি অবস্থা। অনেকে অঙ্গরাজ্য ছেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। রয়েছে শিক্ষার্থী ঋণের চাপ। শিক্ষিত তরুণদের জন্য ভদ্রস্থ আয়ের কর্মসংস্থানের ঘাটতি থাকায় এই ঋণ একেবারে তামাদি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে কর ও দেনার এক দুষ্টচক্রে আটকা পড়ছে নিউইয়র্ক। এই সংকট মোকাবিলা করতে হলে এখন থেকে সতর্ক হওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। এ ক্ষেত্রে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের একার পক্ষে খুব বেশি কিছু করা হয়তো সম্ভব হবে না। ফেডারেল সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এর একটি সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগ আকর্ষণেও উদ্যোগ নেওয়া জরুরি, যাতে আঞ্চলিক অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার হয়।