সাবওয়ের আরও ৮টি কবিতা

কবিতার চর্চা আমাদের দেশের তুলনায় আমেরিকায় কম কি বেশি সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। তবে নিউইয়র্কে গণপরিবহনে লোকজন যেভাবে চলতে চলতে বই পড়ে, তা থেকে এটা ধরে নেওয়া যেতেই পারে যে, এখানে পাঠক অনেক। সেই সঙ্গে অনেকেই মোবাইল ফোন কিংবা আইপ্যাডে পড়ছেন আমাজনের কিন্ডল অ্যাপ থেকে। ২৫ বছর আগে থেকে আমেরিকার খ্যাতিমান কবিদের কবিতা ‘সাবওয়ে’ মানে নিউইয়র্কের পাতাল রেলের দেয়ালে সেঁটে দেওয়ার কার্যক্রম চালু হয়। সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্ম। সেখান থেকে নেওয়া আমেরিকার বিখ্যাত আট কবির আটটি কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করা হলো।

প্যাট্রিক ফিলিপস
স্বর্গ
মূল কবিতা: হ্যাভেন

এটাও অতীত হবে
যেখানে আমরা এক সাথে করব বসবাস।

এটা কোনো যাপিত জীবন নয় যে, একপলকেই
মনে পড়ে যাবে সব,
এটাও অতীত হবে।

আমরা সবাই একসঙ্গে সেখানে ফিরে যাব।
সবাই, আমরা যাদের ভালোবেসেছি, হারিয়েছি, মনে রেখেছি।
এটাও অতীত হবে
আর সেটা হবে অনন্তজীবন।


ডব্লিউ এস মারউয়িন
গ্রীষ্ম স্মরণ
মূল কবিতা: রিমেম্বারিং সামার

অতি উষ্ণতায় আর্দ্র হতে হতে এক বৃদ্ধা
আমাকে বললেন—
এখন বুঝতে পারছি, অনেক ঠান্ডায় থাকার চেয়ে
এটিই অনেক ভালো।
তবে এই দুয়ের মাঝামাঝি সময়টা আরও ভালো,
যদিও সেই সময়টা খুব ছোট বলে
তা নিয়ে ভাবনার হয়নি কোনো অবকাশ।

আজও মনে পড়ে ক্রূর ঠান্ডায় শাসিত
শীতের সব মৌসুম, কোনোভাবেই কোথাও
কিছুটা উষ্ণ করতে পারছিলাম না নিজেকে!
কিন্তু আমি তো গ্রীষ্মের উত্তাপকে সেভাবে মনেও রাখিনি।
শুধু মনে পড়ে, দীর্ঘ দিনজুড়ে প্রতিবেশী বৃক্ষের শ্বাস-প্রশ্বাস,
সন্ধ্যায় গলিতে কথোপকথনরত কুক্কুট,
এবং প্রলম্বিত আলোর আলিঙ্গনবদ্ধ
দিগন্তের উপত্যকা, নিচে দূর থেকে ভেসে আসা
ঘণ্টার প্রচ্ছন্ন আহ্বান।

এই সবকিছু শোনার জন্য আমি
এখন বসে থাকতে পারি এখানেই।


ম্যারি রুফল
জলযাত্রী
মূল কবিতা: ভয়েজার

ক্রমান্বয়ে সৈকতে সফেদ নোনাজলে ধোয়া বিবর্ণ অর্কিড হয়ে গেছি।
আহা স্মৃতি!
এই অর্কিড জীবন দিয়ে
আমি আর কীভাবে পেতে পারি তোমার
নির্জর মুগ্ধতা,
অপচয়ে ক্ষয়িষ্ণু জীবন কি এখনো তবে
অলৌকিক বিচ্ছুরণে মিশে আছে?

গ্যারি স্নাইডার
এইখানে
মূল কবিতা: হিয়ার

কচি চাঁদ ডুবে গেছে,
সতেজ আঁধার পেতেছে আসন দীর্ঘ শাসনের
মৃদুমন্দ বাতাসের সুরেলা গোঙানি দূর আকাশে সদ্য উড়ে যাওয়া
জেটের শব্দের মতো ক্রমশ বিলীয়মান।
পূবাকাশে পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে।
উদীয়মান কোন গ্রহের আলো।
বছরের পর বছর ধরে ভাবছি
আমরা কেন যে এখানে আছি!

ডরোথি ট্যানিং
সমাবর্তন
মূল কবিতা: গ্র্যাজুয়েশন

তিনি আমাদের বললেন,
‘বছরের পর বছর ধরে তোমরা এই পৃথিবীকে ভালোবাসতে আসবে।’
তারপর থেকে সেখানেই বসে ছিলাম আমরা
আত্মাকে পরম আদরে কোলে নিয়ে এবং
যা অবশেষে তাদেরও স্বস্তি দিয়েছিল।

বিলি কলিন্স
গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল
মূল কবিতা: গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল

এই শহর মহাবিশ্বের আশি লক্ষ কেন্দ্রস্থলকে
প্রদক্ষিণ করেছে,
এবং ঘুরছে, এই স্থানের স্থিরবিন্দু ‘গোল্ডেন ক্লক’ ঘেরা অক্ষ পথে।
মৌচাক থেকে বিচ্ছুরিত মৌমাছির মতো জনসমুদ্র থেকে
চোখ সরিয়ে ওপর থেকে তাকালে দেখতে পাবে,
তারকাশোভিত খিলানের নিচে ঘূর্ণমান সময়। আর
জেনে নাও ঠিক কখন, কোথায় তুমি আছ।

চেজ টুইচেল
গোধূলির পাঠক
মূল কবিতা: টু দ্য রিডার টোয়াইলাইট

যখনই এ বেলায় বাইরে তাকাই তুষারঢাকা পাহাড়ের দিকে,
কথা বলি সরাসরি আকাশের সাথে কানে কানে,
এটাই তো তুমি, যাকে নিয়ে আমি ভাবছি।
তুমি সেই অদম্য স্পৃহা, যা দিয়ে অনায়াসে একটি শিশু উদ্ভাবন করে
খেলনা ঘোড়াসহ পুতুলের নিরাপদ আবাসন।
আমি জানি না কেউ আমাকে শুনছে কি না
জানি না কে কথা বলে
যখন ঘোড়া কথা বলে!

এরাসেলিস গারমাই
সান সালভাদরের বৃষ্টিমুখর রাত
মূল কবিতা: নো চে ড্য ইউভিয়া সান সালভাডর

বৃষ্টি ভেদ করেছে ভূমিকে।
তার অন্তহীন পল্লবিত বাহু পেরেকের মতো নির্বিবাদে
ভেদ করেছে মাটির বুক।
বৃষ্টির রূপালীমুখ স্পর্শ করেছে আমার মুখ
আমি তাকে বাঁধি দেহ-মনের শক্ত শেকলে।
তারপর নিযুতরকম বন্য বৃষ্টির হল্লা শোনার জন্য
খুলে দিই ঘরের সব জানালা
হ্যাঁ, হ্যাঁ
যদি
হ্যাঁ।