ঘাসের ঘটনা

ঘটনা যে একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে এটা তিনি জানতেন। বিনয়ের সাথে ঘটনাটিকে তিনি ‘ঘাসের ঘটনা’ বলেই জানালেন পৃথিবীকে। সেই ঘাসই যে একদিন মহিরুহ হয়ে উঠবে, তা টের পেয়েছিল বাংলা সাহিত্য। সেই শুরুতেই আবিদ আজাদ স্বপ্নের ভেতর মানুষের হাত ধরতে গিয়ে জেনে ফেলেন স্তব্ধতার অর্থ; আর আমরা দেখি সেই স্তব্ধতার ভেতর থেকে জাদুমন্ত্রের মতো বেরিয়ে এলেন একজন পরিপূর্ণ কবি। আবিদ আজাদের কবিতার শরীর যেন এক পাহাড়ি নদী, খলবল করে ছুটে চলে সমতলের বুক চিরে; ক্রমশ তা প্লাবিত করেছে, উর্বরা করে তুলেছে আমাদের কাব্যাঙ্গন। যে ‘ঘাসের ঘটনা’ দিয়ে তাঁর এই নতুন জন্মযাত্রা সেই ঘটনাটি তিনি ঘটান এভাবে—
‘স্বপ্নের ভিতর আমার জন্ম হয়েছিল/ সেই প্রথম আমি যখন আসি/ পথের পাশের জিগা-গাছের ডালে তখন চড়চড় করে উঠছিল রোদ/ কচুর পাতার কোষের মধ্যে খণ্ড-খণ্ড রুপালি আগুন/ ঘাসে-ঘাসে নিঃশব্দ চাকচিক্য-ঝরানো গুচ্ছ গুচ্ছ পিচ্ছিল আলজিভ/ এইভাবে আমার রক্তপ্রহর শুরু হয়েছিল/ সবাই উঁকি দিয়েছিল আমাকে দেখার জন্য/ সেই আমার প্রথম আসার দিন/ হিংস্রতা ছিল শুধু মানুষের হাতে,/ ছিল শীত, ঠান্ডা পানি, বাঁশের ধারালো চিলতা, শুকনো খড়/ আর অনন্ত মেঝে ফুঁড়ে গোঙানি-/ আমার মা/ স্বপ্নের ভিতর সেই প্রথম আমি মানুষের হাত ধরতে গিয়ে/ স্তব্ধতার অর্থ জেনে ফেলেছিলাম,/ মানুষকে আমার প্রান্তরের মতো মনে হয়েছিল-/ যে রাহুভুক।/ অন্যমনস্কভাবে আমার এই পুনর্জন্ম দেখেছিল/ তিনজন বিষণ্ন অর্জুন গাছ।/ সেই থেকে আমার ভিতরে আজও আমি স্বপ্ন হয়ে আছি-/ মা, স্বপ্নের ভিতর থেকে আমি জন্ম নেব কবে?’ [জন্মস্মর]
পি বি শেলি কবিতাকে স্বর্গীয় বিষয় বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সুন্দর মনের সুখকর অনুভূতিগুলোর রেকর্ডই হচ্ছে কবিতা।’ ‘জন্মস্মর’ কবিতায় আমরা সেইরকম কিছু সুখকর অনুভূতির রেকর্ড দেখতে পাই। এই কবিতাটিই কবি আবিদ আজাদের কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্মবৃত্তান্ত। নতুন জন্মের ইতিকথা। প্রকৃতির মধ্যে অবগাহনের মধ্য দিয়ে যে এই কবির জন্ম হয়েছে এবং সেই প্রকৃতি যে আধাশহুরে বাংলাদেশের প্রকৃতি, তা আমরা সুস্পষ্টভাবেই দেখতে পাই, যখন জিগা গাছের ডালে চড়চড় করে ওঠে রোদ, কচুপাতার কোষের মধ্যে জ্বলে ওঠে খণ্ড-খণ্ড রূপালি আগুন। বাঁশের ধারালো চিলতা, শুকনো খড় আর অনন্ত মেঝে (অর্থাৎ বাংলাদেশের মাটি) ফুঁড়ে বেরিয়ে আসেন কবি আবিদ আজাদ। তিনি স্বপ্নের ভেতর কী অবলীলায় মানুষের হাত ধরে ফেলেন, সেই হাত নিরুত্তাপ; কবি জেনে ফেলেন স্তব্ধতার নতুন ভাষা। তাঁর এই পুনর্জন্ম প্রত্যক্ষ করেন তিনজন অগ্রজ কবি, যাদের তিনি চিহ্নিত করেছেন তিনটি অর্জুন বৃক্ষ হিসেবে। ‘তিন’ সংখ্যাটির প্রতি আবিদ আজাদের দুর্বলতা অন্য কবিতায়ও লক্ষণীয়।
খুব কম কবিই তার প্রথম কাব্যগ্রন্থে নিজস্ব একটি কাব্যভাষা তৈরি করে ফেলতে পারেন। নিজস্ব কাব্যভাষা কেবল বই পড়ে তৈরি হয় না। এ জন্য দরকার অভিজ্ঞতা এবং পৃথিবীকে, পরিবেশ ও প্রতিবেশকে দেখার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। কবি আবিদ আজাদের সেই অভিজ্ঞতা এবং চোখ ছিল বলেই তিনি ‘ঘাসের ঘটনা’ দিয়েই কাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলেন। এই দক্ষতাই তাঁকে বাংলা ভাষার একজন প্রধান কবি বা মেজর পোয়েট করে তোলে।
একটি ভাষার কাব্যসাহিত্যে নতুন কিছু যোগ করতে না পারলে কেউ ‘মেজর পোয়েট’ হয়ে উঠতে পারে না। আবিদ আজাদের বলার ভঙ্গিটিই সত্তরের দশককে পূর্ববর্তী কবিতার ধারা থেকে বের করে আনে। ত্রিশে নির্মিত আধুনিক বাংলা কবিতার ধারাকে চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের কবিরা কেবল অনুকরণ করেছেন। ত্রিশ থেকে ষাট, এই সময়ের মধ্যে বাংলা কবিতায় নতুন কোনো তরঙ্গ দেখা যায়নি। হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে, একটি নতুন ধারাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সময়ের প্রয়োজন। ত্রিশের কবিরা যে ধারাটি নির্মাণ করেছেন, সেটিকে গণমানুষের (কবিতাপ্রেমী জনগোষ্ঠীর কথা বলছি) কাছে পৌঁছে দেবার কাজটি করেছেন পঞ্চাশ ও ষাটের কবিরা। সময়ই তাদেরকে দিয়ে সেই কাজটি করিয়েছে। সময়ই আবার আবিদ আজাদকে নির্বাচন করেছে বাংলা কবিতায় নতুন তরঙ্গ তোলার জন্য। দক্ষ নাবিকের মতোই তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে সেই কাজ করেছেন।
‘মেঘেরাও যৌনকর্ম করে/ গোধূলিবেলায় যখন ওদের শরীরে প্রচুর অবসর/ যখন নির্মল থাকে মন/ তখনই কেবল মিলিত হয় ওরা আকাশ-শৃঙ্গারে/ একটি মেঘের কোমর জড়িয়ে ধরে এসে আরেকটি মেঘ/ চুমু খায় স্তনান্তের নীলে, আলিঙ্গন ব্যবহার করে- শুদ্ধললাটিকা/ তারপর মিশে যায় অনাবৃত সুন্দর আসনে।/ মেঘদের এই চুমুকরোজ্জ্বল অলস পদ্ধতি/ মানুষের জন্যে হতে পারে সর্বোত্তম কামকলা/ লিপ্ত থাকা দুটি মেঘ মনে হলো যেরকম গভীর অযৌন।’ [মেঘদের কামসূত্র]
সাহিত্যে বহুল ব্যবহৃত ও সুপ্রাচীন ‘কামসূত্র’ শব্দটির সঙ্গে ‘মেঘদের’ জুড়ে দিয়ে তিনি প্রাচীন শব্দটিকে আধুনিক করে তোলেন কবিতার শিরোনামেই। এটিই কবির কাজ। মেঘের সাথে মেঘের সংঘর্ষ, যা থেকে তৈরি হয় বিদ্যুৎ, তাকে কবি দেখছেন মিলনের দৃশ্যে এবং সেই মিলন চুমুকরোজ্জ্বল অলস পদ্ধতির মিলন, যা আবার মানুষের জন্য সুপারিশও করছেন। এটিই তাঁর কালের, অর্থাৎ সত্তরের দশকের কবিতায় অভিনবত্ব নিয়ে আসে। লক্ষণীয় যে, এই কবিতায় তিনি ‘চুমুকরোজ্জ্বল’-এর মতো একটি নতুন শব্দও উপহার দিয়েছেন বাংলা ভাষাকে। শুধুমাত্র এই শব্দটিই একটি ভীষণ ইতিবাচক চিত্রকল্পের জন্ম দেয়। পাঠকের মন ইতিবাচক শক্তিতে ভরে ওঠে। ছন্দকে তিনি ভেঙেছেন যদিও, সঠিক ছন্দে পয়ার রচনায়ই তাঁকে অধিক প্রত্যয়ী দেখা গেছে। ‘মেঘদের কামসূত্র’ কবিতাটিও তিনি নির্ভুল অক্ষরবৃত্তে লিখেছেন।
কবিতায় নতুন নতুন চমক তৈরিতে আবিদ আজাদ ছিলেন তাঁর সামসময়িক কবিদের মধ্যে সবচেয়ে সিদ্ধহস্ত। অপ্রচলিত বিষয়, শব্দ, পঙক্তিবিন্যাস সবই পাওয়া যায় আবিদ আজাদের কবিতায়। এমনকি তিনি মৃদু গালাগালিও কবিতায় ব্যবহার করেছেন খুব দক্ষতার সাথে।
‘দে শালাকে গুনে-গুনে লাগিয়ে দে ক’খানা অদ্ভুত-/ প্রথমে পাছায় দু’টো জোর পদাঘাত/ তারপর শার্টের কলার ধরে দুই গালে বাছাই থাপ্পড়/ দে শালাকে লাগিয়ে দে ক’খানা নির্মম অপরূপ’ [গোধূলির হত্যাকাণ্ডে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সংলাপ]
এই রকম পঙ্‌ক্তি রচনার প্রয়াস আমরা দেখি আরও দুই দশক পরে নব্বইয়ের তরুণদের হাতে স্ফূর্তি পায়। প্রচলিত ধারা থেকে তিনি কতখানি বের করে এনেছেন কবিতাকে, এটি তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিষয়বস্তু তেমন জোরালো কিছু নয়; কিন্তু উপস্থাপন কী অসাধারণ! নিজের ভেতরের আরও একটি সত্তার কথা হয়তো বলেছেন, যা প্রায়শই চতুর রংবাজ হয়ে ওঠে। অথবা এমনও হতে পারে, পাড়ার কোনো মাস্তান, বন্ধুদের মধ্যে কেউ, অথবা কোনো অসৎ রাজনীতিক। বিষয়টিকে নানান প্রেক্ষাপটেই উপস্থাপন করা যায়। কিন্তু মুনশিয়ানাটা হচ্ছে এর উপস্থাপন কৌশলে, যা এটিকে একটি মাস্টারপিস কবিতা করে তুলেছে। এই কবিতায় তিনি প্রচুর গালি ব্যবহার করেছেন, প্রায়োগিক মুনশিয়ানার কারণে যা হয়ে উঠেছে সুখপাঠ্য এবং আমি বলব নান্দনিকও। ‘গোয়ামারা’র মতো অশ্লীল শব্দের প্রয়োগ যখন এভাবে হয়— ‘বাস্তবের রংবাজি আর গোয়ামারা খেতে-খেতে/ আমাদের মতো শুধু-শুধু বেঁচে থেকে দেখে যাক/ গোধূলির রাঙা-মৃত্যু, দেখে যাক উজ্জ্বল যন্ত্রণা’, তখন অশ্লীল শব্দ প্রয়োগের দায় থেকে আমরা তাঁকে অনায়াসেই মুক্তি দিতে পারি। বরং এই অশোভন ও অপ্রচলিত শব্দের সাহসী প্রয়োগের জন্য এটি হয়ে ওঠে নান্দনিক। এ জন্য তাঁকে খানিকটা প্রশংসাই করতে চাই। সত্যি বলতে কি এই কবিতা পড়ে আমি বরং অনুপ্রাণিত হচ্ছি বাংলা গালিসমূহকে কবিতায় পুনর্বাসনের। অনেক গালি হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো তো আমাদের ভাষার গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। মনে আছে, একবার কবি নির্মলেন্দু গুণ গালির অভিধান তৈরির ঘোষণা দিয়েছিলেন। কাজটি করতে পারলে খুব ভালো হতো। উত্তর প্রজন্ম জানতে পারত তাদের পূর্বপুরুষেরা কিভাবে নেতিবাচক আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেন। অপ্রচলিত প্রেক্ষিতে চেনা শব্দের ব্যবহার কবিতাটিকে দিয়েছে অসাধারণ এক কাব্যিক দ্যোতনা। যেমন- ‘গুনে-গুনে লাগিয়ে দে ক’খানা অদ্ভুত’, ‘দুই গালে বাছাই থাপ্পড়’, ‘লাগিয়ে দে ক’খানা নির্মম অপরূপ’, ‘আবোল-তাবোল ঘুষি’, ‘সুন্দরের পায়ের পাতায়’, ‘জীবনের ভিতরে উপুড় হয়ে পড়ে পড়ে’, ‘উজ্জ্বল যন্ত্রণা’। আগেই বলেছি কবিতায় নতুন চমক সৃষ্টিতে আবিদ আজাদের দক্ষতা ছিল ঈর্ষণীয়। আর কী টনটনে ছন্দ সচেতনতা, কী নিটোল অক্ষরবৃত্তের বুনন পুরো কবিতাটির শরীরজুড়ে!
আমরা অনেক ছন্দ সচেতন কবির কবিতায় শুদ্ধ ছন্দ ঠিকই পাই কিন্তু কবিতা পাই না, পাই কিছু আরোপিত শব্দরাজি। কিন্তু আবিদ আজাদ যেন এক জাদুকর, তাঁর হাতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাষাটি বাঙ্‌ময় হয়ে ওঠে সঠিক ছন্দে। একটি পাঁচ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতার উদ্ধৃতি দেওয়া যাক—
‘যে বাড়িটার খোঁপার নিচে ছুরিকাঘাতে/ একটি মেয়ে খুন হলো কাল মধ্যরাতে/ সেই বাড়িটার চোখে মুখে হাত বা কাঁধের/ কোথাও কোনো চিহ্নও নেই আর্তনাদের।/ সেই বাড়িটার গলায় ভোর, বুকের কাছে/ তাকিয়ে দেখি পাতাবাহার তেমনি আছে/ নির্জনতার কোমরে সেই আগের মতোই/ ছায়াছন্ন লেপ্টে আছে পাতার অথৈ-/ ভিতরে কে টেলিফোনে বলছে কী-কী/ বন্ধ গ্যারেজ, বৃষ্টিতে খুব ভিজছে দেখি/ সারা দুপুর অলিভ রঙের একটি গাড়ি।/ মাঠের পাড়ের আটপৌরে সেই বিজন বাড়ি/ গ্রীবায় তার একটি নখের আঁচড়ও নেই।/ আজকে দেখে মনেই হয় না গতরাতেই/ একটি মেয়ে খুন হয়েছে এই বাড়িতেই।’
একটি খুনের গল্প কী সুন্দর মিষ্টি ছন্দে তিনি তুলে এনেছেন, সেই সঙ্গে অলংকার হিসেবে উপহার দিয়েছেন মনোমুগ্ধকর বেশ কিছু উপমা/উৎপ্রেক্ষা। ‘যে বাড়িটার খোঁপার নিচে’ কী চমৎকার নান্দনিক উৎপ্রেক্ষা। ‘সেই বাড়িটার গলায় ভোর’ আরেকটি সুন্দর উৎপ্রেক্ষা। হয়তো কবি দেখছেন এক চিলতে ভোরের আলো এসে পড়েছে অন্য বাড়ির দেয়ালের ফাঁক দিয়ে এই বাড়িটির গেটের কাছে। এভাবে তিনি জানাচ্ছেন, সকাল হয়ে গেছে, সবকিছু তেমনি আছে, শুধু সেই মেয়েটি নেই। আবার এও হতে পারে আক্ষরিক অর্থে খুন হয়নি মেয়েটি; কিন্তু খুন হয়ে গেছে তার স্বাধীনতা, খুন হয়ে গেছে তার প্রেম, খুন হয়ে গেছে তার কৈশোর।
নানান বিষয়ে লিখেছেন তিনি। আধা-নাগরিক জীবনকে উপজীব্য করে তাঁর বিষয়বস্তুর ঘূর্ণাবর্ত কিন্তু সত্তরের যে নিজস্বতা, যে উচ্চকণ্ঠ, যে দামামা, যে দ্রোহ তা থেকে মোটেও বিচ্ছিন্ন থাকেননি কবি আবিদ আজাদ, যেমনটি আমরা দেখেছি শিহাব সরকারের বেলায়।
‘এখন যে কবিতাটি লিখবো আমি’ কবিতায় কবি আবিদ আজাদ ফেটে পড়েছেন তাঁর সমস্ত দ্রোহ ও সাহস নিয়ে, সার্থক করে তুলেছেন সত্তরের কাব্যাঙ্গনকে। দশকটি হয়ে উঠেছে সাহসী সত্তর।
একাকিত্বের মধ্যেও যখন তিনি বলেন ‘মেঘলা ঘরবাড়ি/ বুকের নিচে ঢালু হাওয়া ধরেছে তরবারি।’ তখনই এটি আবিদ আজাদের কবিতা হয়ে ওঠে, হয়ে ওঠে আবিদের একাকিত্ব, যা আর সকলের চেয়ে আলাদা। এটিই তাঁর নিজস্ব কাব্য ভাষা।