হঠাৎ কিটো

একটা হাইব্রিড গাড়ি দুই প্রকার জ্বালানি দিয়ে চলতে পারে। ব্যাটারি (যদিও জ্বালানি নয় তবে শক্তির উৎস) এবং গ্যাস (পেট্রল)। যখন ব্যাটারি থাকে না, তখন গ্যাসে চলে। দুই জ্বালানির মধ্যে কোনটা ভালো? নিঃসন্দেহে ব্যাটারি। ইলেকট্রিক কার। ইফিসিয়েন্সি বেশি, এনজিনটাও হালকা পাতলা, ঝরঝরে। ঝামেলা কম, দূষণ কম।
মানুষেরও জ্বালানি দরকার হয়। কোষ পুষ্টি না পেলে কাজ করতে পারে না, বাঁচে না। রক্ত সেখানে জ্বালানি পৌঁছে দেয়। রক্তকে সেটা আবার দেয় খাদ্য। আর মানুষ ক্ষুধা নিবারণের জন্য অথবা নিছক মনোরঞ্জনের লোভে নিজেই দুই মিনিট চিবিয়ে, স্বাদ নিয়ে, দেহকে খাদ্য সরবরাহ করে। সুতরাং খাওয়া-দাওয়ার একটা প্রধান কারণ দেহকে জ্বালানি সরবরাহ, যেটা আমরা জেনেও ভুলে থাকি।
কিটো (Keto) ব্যাপারটা হঠাৎ শুরু হলো। সেদিন শনিবার। সকালে উঠে এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। তার অনেক শখের মধ্যে একটা হলো স্বর্ণমুদ্রা কিনে জমানো। একদিন দুনিয়ায় অর্থনৈতিক দুর্যোগ লেগে যাবে, সেদিন সোনা ছাড়া আর প্রায় কোনো কিছুরই মূল্য থাকবে না। টাকা হয়ে যাবে কাগজের মতো, স্টক ঠেকে যাবে তলানিতে। সেই মহাসঙ্কটের দিন চিন্তা করে সে স্বর্ণমুদ্রা জমাচ্ছে। তার যে পরিমাণ মুদ্রা জমেছে আমার মনে হয় আগেকার দিনের রাজাদের খাজাঞ্চিখানায় স্বর্ণমুদ্রার সঙ্গে সেটা পাল্লা দিতে পারবে। তার খাজাঞ্চি খানাটা কোথায় সেটা অবশ্য সে বলে না।
আবার সেই মহাসঙ্কটের দিনে নাকি ধুন্ধুমার অরাজকতাও শুরু হয়ে যাবে। মানুষ বাসায় ঢুকে জোর করে সোনা দানা ছিনিয়ে নিতে পারে। হয়তো প্রতিবেশী, ডাকাতের বেশে দরজা ভেঙে ঢুকল। অথবা বন্ধু, এমনকি আত্মীয়স্বজন। সেদিন কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না। এ কারণে সে বন্দুকও কিনেছে। শুটিং রেঞ্জে গিয়ে সত্যি সত্যি সে টার্গেট প্র্যাকটিস করে। এই দেশে গান কন্ট্রোল নাই, যে কেউ দোকানে গিয়ে বন্দুক কিনতে পারে। সেও কিনেছে। তার নিজের কন্ট্রোল ভালো। বলা কি যায়, আত্মরক্ষার প্রয়োজন একদিন সত্যি হয়তো হতে পারে।
যা হোক, অনেক দিন পর সেদিন গিয়ে দেখি তার শরীর আরও সুঠাম হয়েছে, কোথাও কোনো বয়সের ছাপ নেই। সে নিয়মিত মুগুর ভাজত। জিজ্ঞেস করতেই বলল এক্সারসাইজে ভাটা পড়েছে। তবে নতুন গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে সে। সেটা হলো কিটো ডায়েট। এই কিটোই নাকি তাকে ভালো শেপ এ রেখেছে।
খালাম্মা দই আর মিষ্টি খেতে দিলেন। ডায়াবেটিস নাই, তবু মিষ্টি বেশি একটা খাই না। কিন্তু দই মিষ্টি দুটোই খুব মজা লাগল। এমন মজা যে অল্পে মন ভরে না।
“ডায়েটিং” কথাটা প্রায় জন্মের পর থেকেই শুনে আসছি। অল্প বয়সে ভারী ভারী মহিলাদের মুখে ডায়েটিং কথাটা শুনতাম। তার মানে ছিল খাওয়া কমিয়ে দেওয়া। নায়িকারা ডায়েটিং করে শুকাত। প্রায় না খেয়ে থাকত। তারপর এ দেশে এসে “এটকিন” ডায়েটের কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। তারপর এল বিভিন্ন ধরনের ডায়েট, হালে এসেছে কিটো। এটা অবশ্য ভীষণই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চেনা জানা, প্রতিদিন দেখা হয় এমন অনেকেই কিটো করছে।
তবে আমার নিজের ডায়েটিং করার প্রয়োজন হয়নি। ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকে। তাই বন্ধুর কথায় কোনো উৎসাহ না দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ওজন তো ভালোই কমেছে দেখছি।
উত্তরে সে যা বলল, তাতে আমার এই প্রথম কিটোর প্রতি সত্যিকার কৌতূহল সৃষ্টি হলো। সে বলল, ওজন কমানো কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য ভালো করা। ওজন কমা হলো এর একটা “উপজাত” উপকারিতা। .
এটা জানা ছিল না। নড়েচড়ে বসলাম। মানুষ কিটো করে বাড়তি মেদ ঝরাচ্ছে তাই শুধু দেখেছি। ভেতরে কি হচ্ছে তা জানতাম না।
স্বাস্থ্য ভালো করা কথাটির অর্থ ব্যাপক। “স্বাস্থ্য” শব্দটার একটা অত্যন্ত ভুল ব্যবহার প্রচলিত আছে, যেখানে “স্বাস্থ্য ভালো” মানে মোটা সোটা চর্বিবহুল একটি মানুষকে বোঝায়। সেটা সবাই অবশ্য করে না। এই স্বাস্থ্য হচ্ছে শরীরে ভেতরের কলকবজা ভালো রাখা, সেটা রাখতে হলে সব নম্বর ঠিক রাখতে হবে। যেমন সুগার নিচে রাখতে হবে, ট্রাইগ্লিসারয়েড নিচে রাখতে হবে, এলডিএল নিচে রাখতে হবে। ভালো নম্বরগুলো ওপরে রাখতে হবে। এটা করতে গিয়ে কত এক্সারসাইজ, কত বাছ-বিচার, শেষে কতজনে ওষুধও খাচ্ছে। আমার সেই স্বর্ণমুদ্রা বন্ধু নিজেও ডায়াবেটিসের জন্য ওষুধ খেত এখন নাকি ছেড়ে দিয়েছে। সুগারের নম্বর কমে গিয়ে একেবারে ঝরঝরে সুস্থ সবল মানুষ।
এত দিন জানতাম শুধু ওজন কমানোর জন্য ডায়েট, এখন তো দেখি ব্যাপার আরও মারাত্মক!
অর্ধেক মিষ্টি খেয়ে তার পীড়াপীড়িতে এক চামচ দই নিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ভাত-রুটি না খেলে খিদে লাগবে না?
সে বলল, খিদে লাগে না। ভাত খাওয়ার কারণে আমাদের শরীরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণ হয়। শর্করা (carbohydrate) ভেঙে গ্লুকোজ/ফ্রুকটোজ করার জন্য ইনসুলিন লাগে। কিন্তু সেটা মাপমতো আসে না। কাজেই অব্যবহৃত যে ইনসুলিন থেকে যায় সেটাই খিদের কারণ। কিটো ডায়েটে শর্করা নেই বললেই চলে, তাই শরীর ইনসুলিন নিঃসরণ করে না। খিদেও লাগে না।
আমি চামচের সুস্বাদু দইটুকুর দিকে তাকালাম, এর মধ্যে শর্করা আছে। কিটোতে এই খাবার চলবে না। সেটা মুখে দিয়ে শেষ করার আগেই সিদ্ধান্ত নিলাম, কিটো ডায়েট শুরু করব।
মাত্র দুদিনের মাথায় অনেক তথ্য জোগাড় করে ফেললাম। যত দেখছি, ততই অবাক হচ্ছি। এটা নিছক কোনো ডায়েটিশিয়ানের ডায়েট নয়। অনেক গবেষণার ফসল এই কিটো ডায়েট। এর পেছনে শরীর বৃত্তীয় ভালো একটা ভিত্তি আছে। এটা শরীরের ভেতরের একটা বিশেষ রসায়ন।
আবার হাইব্রিড গাড়ির কথায় ফিরে আসি। মানুষের দেহও যে হাইব্রিড এই তথ্যটা জানা ছিল না। সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই প্রকার জ্বালানি দিয়ে কোষ বাঁচতে পারে। গ্লুকোজ ও কিটোন (Ketone)। দু’টি ভিন্ন জিনিস। ভিন্ন ভাবে, ভিন্ন খাদ্যে তৈরি হয়। গ্লুকোজ তৈরি হয় চিনি এবং শর্করা থেকে, কিটোন তৈরি হয় স্নেহপদার্থ (Fat) ও আমিষ (Protein) থেকে। দেখা গেছে, খাদ্যে চিনি এবং শর্করা খুব কম থাকলে (২০ গ্রামের নিচে ), এবং যথেষ্ট স্নেহজ এবং আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলে, শরীর আর গ্লুকোজ তৈরি করে না। পুষ্টি বা জ্বালানি হিসেবে কিটোন তৈরি করে। এ যেন হাইব্রিড গাড়ি গ্যাস থেকে ইলেক্ট্রিসিটিতে চলে গেল। তাতে গাড়ির জন্য যেমন ভালো, শরীরের জন্যও ভালো।
কিটো করলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক ভাবেই কমে যাচ্ছে। কারণ শর্করার বালাই নাই, ইনসুলিনের বালাই নাই, এবং গ্লুকোজ/ফ্রুকটোজও তৈরি হচ্ছে না। মানুষের মস্তিষ্ক গ্লুকোজের থেকে এই কিটোন পেলে আরও ভালোভাবে কাজ করে। মস্তিষ্কের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। এপিলেপ্সি বা মৃগী রোগের চিকিৎসার জন্য ১৯২০ এ কিটো ডায়েট বের হয়। তখন এপিলেপ্সির জন্য কোনো ওষুধও ছিল না। কিটো ডায়েট দিয়ে রোগী ভালো করা হতো। কিন্তু দশ বছরের মধ্যেই ওষুধ বেরিয়ে যায়, ফলে কিটোর আর দরকার হয় না। তার অনেক পরে আলঝেইমার রোগের জন্যও কিটো ডায়েট ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়। কারণ, কিটোনের পুষ্টিতে মস্তিষ্ক অনেক ভালো কাজ করে। এ যেন কেরোসিন বনাম অক্টেন!
রক্তে যে ট্রাইগ্লিসারয়েড থাকে, যেটা আসলে যকৃতে (Liver) বাড়তি শর্করা থেকে তৈরি হচ্ছে, যা শরীরে রক্তনালিতে লিপোপ্রোটিনের সঙ্গে জমে গিয়ে ব্লক তৈরি করে, হার্টের ক্ষতি করে, সেটাও কিটোজেনিক (Ketogenic) পদ্ধতিতে অনেক কমে যাচ্ছে। ব্লাড প্রেসার কমে যাচ্ছে। উপকারের শেষ নেই। তারপর কিটোজেনিক প্রক্রিয়া যেহেতু স্নেহ পদার্থ থেকেই জ্বালানি আহরণ করছে, কাজেই সে শরীরের মধ্যে জমানো মেদ ভাঙতে শুরু করে। তাকে জ্বালানিতে রূপান্তরিত করে। সেই “উপজাত” উপকার হিসেবে মানুষের অতিরিক্ত মেদ ঝরতে থাকে। তাকে কিন্তু খাবার কম খেতে হচ্ছে না। শুধু শর্করার পরিমাণ কমিয়ে কিটোজেনিক প্রক্রিয়াটাকে চালু করে দিলেই হলো, ব্যাস। তখন শরীরে কিটোসিস (Ketosis) শুরু হয়, অর্থাৎ স্নেহ পদার্থ শক্তি জোগান দিতে থাকে।
মেদ ঝরছে, ভেতরের নম্বরগুলো ভালো হচ্ছে। কেউ যদি ওগুলোর জন্য ওষুধ খেয়ে থাকে, সেই ওষুধও এই প্রক্রিয়ায় অনেকাংশেই আর দরকার হবে না।
হলিউডের নামকরা অভিনেত্রী, সুদেহী কৃষ্ণ নায়িকা হেলিবেরি। তিনি বহু বছর ধরে কিটো করছেন, এবং এই কিটোর প্রশংসায় তিনি পঞ্চমুখ। অল্প বয়সে তার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। এখন বয়স ৫১। তিনি বলেন কিটো তার টাইপ-২ ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিরাময় করে দিয়েছে। তিনি এটাকে ডায়েট বলতে চান না। কিটোতে মোটেও কম খেতে হচ্ছে না। মাছ-মাংস, ডিম, শাক-সবজি, ঘি-মাখন পর্যাপ্ত খাওয়া যাচ্ছে। শুধু শর্করা এবং চিনি জাতীয় জিনিস খাওয়া যাবে না। অন্য অনেক মজার খাবার থাকছে। স্নেহ পদার্থই বেশি খেতে বলে, ষাট ভাগই স্নেহ পদার্থ। এটা আসলে সেই অর্থে ডায়েট নয়। হেলিবেরির মতে, এটা একটা “লাইফ স্টাইল”।
আমার ধারণা ছিল ডায়েটে থাকলে মানুষ দুর্বল বোধ করে, কিন্তু কিটোতে মানুষ উল্টো সবল ও সতেজ হয়ে যায়। কারণ হলো অক্টেন কেরোসিনের চেয়ে ভালো জ্বালানি। বেশি শক্তি জোগায়।
তারপর ক্ষুধার ব্যাপারটা। ভাত না খেলে অন্য জিনিস যতই খাওয়া যাক না কেন, ক্ষুধা কি মিটবে? তৃপ্তি মিটবে?
সে ক্ষেত্রেও উল্টো। কিটো ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। কিছুদিন কিটো করলে নাকি নিজেকে অভুক্ত মনে হয় না। এমনকি ঘন ঘন অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছাটাও নাকি থাকে না। তাহলে আর নিজেকে কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত মনে হবে কেন?
এটা ডায়েটিশিয়ানের ওজন কমানোর চার্ট নয়, এটা একটা আবিষ্কার। মনে হচ্ছে এই আবিষ্কারটা বেশ সহজে ও বিনা কষ্টে বিপুলসংখ্যক মানুষকে সুস্বাস্থ্য এনে দিতে পারে। কষ্টটা শুধু কয়েক দিন, প্রথম প্রথম হতে পারে। তারপর নিরাময় ও সুস্বাস্থ্য। একদম প্রাকৃতিক উপায়েই। সাংঘাতিক একটা ব্যাপার!
কিটো শরীরে প্রদাহ কমিয়ে দেয়। অনেক প্রকার ক্যানসার পর্যন্ত দূর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কীভাবে? সেটার ব্যাখ্যাটাও দেখছি কঠিন নয়। ক্যানসার কোষ গ্লুকোজে বাঁচে, কিটোনে বাঁচতে পারে না। সে কারণে শরীর যখন গ্লুকোজ তৈরি না করে কিটোন তৈরি করে, তখন ক্যানসার আর ছড়াতে পারে না। শরীরে ক্ষয় হয়ে যাওয়া কোষগুলোকেও এই কিটোজেনিক প্রক্রিয়া সমূলে দূর করে দিচ্ছে। এই নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়েছে। এনআইএইচএ গবেষণা হচ্ছে, ইউনিভার্সিটি অব আরকানসাতে হচ্ছে, আরও অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কিটো দিয়ে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য রোগের নিরাময়ের জন্য গবেষণা চলছে।
দীর্ঘ সময় উপবাস থাকলেও এমন কাজ হয়। দীর্ঘ উপবাসের বিশেষ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া আবিষ্কার করে জাপানি বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওসুমি ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান। তাঁর গবেষণার মূল বিষয় ছিল “অটোফেজি” (Autophagy)। উপবাসেও গ্লুকোজ চক্র থেকে শরীর কিটোন চক্রে চলে যায়। কারণ শরীরে কোনো শর্করা যাচ্ছে না, তখন নিজের মেদকেই সে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। ইয়োশিনোরি আরও দেখিয়েছেন, শরীরে ভেতরে দীর্ঘ উপবাসে জীর্ণ কোষগুলো ঝরে যায়। নতুন কোষ জন্ম হয়। একে বলে “অটোফেজি”। এভাবে শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে উপবাস। গবেষকেরা বলছেন, কিটোজেনিক প্রক্রিয়া একইভাবে শরীরে কাজ করছে। জীর্ণ কোষগুলোকে সরিয়ে দিচ্ছে। দেহকে নবীন করে তুলছে। অথচ সে জন্য কষ্ট করে দীর্ঘ উপবাসের প্রয়োজন হচ্ছে না।
অনেকেই অবশ্য একে সন্দেহের চোখে দেখছেন। অনেকে বলেন, এমন ডায়েট কত আসে, কত যায়। দুদিন পরে বের হবে কিটোর উপকার যত, ক্ষতি আরও বেশি। হয়তো ক্ষতিগুলো এখনো বিজ্ঞানীদের নজরে আসেনি। শর্করা না খেলে শরীরে পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, ইত্যাদি ইত্যাদি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে দীক্ষিত অনেকে আবার এটাকে কিটোএসিডোসিস (Ketoacidosis) ভেবে ভয় পান।
ব্যাপারটা কিন্তু সেরকম নয়। কিটো দীর্ঘদিনের একটা পদ্ধতি। খুবই সফল, পরীক্ষিত। এর উপকার প্রায় বৈপ্লবিক। অনেক ডাক্তার যেমন এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তেমনি অনেক ডাক্তার শুধু যে এর সপক্ষে তাই নয়, জোরে শোরে নিজেরাই কিটো করছেন।
কিটো ডায়েট শরীরে কাজ করছে কি না, এবং করলে কতটুকু করছে, সেটা খুব সহজে বের করা যায়। ডায়াবেটিস মাপার মতোই, তবে এ ক্ষেত্রে সুগারের বদলে কিটোন মাপা হয়। কাজেই অনুমানের ওপর নির্ভর করতে হবে না। ঘরে বসেই জানা যেতে পারে। সেই স্ট্রিপ সিভিএস বা যেকোনো ফার্মেসিতে পাওয়া যায়।
আরেকটি ভালো দিক হলো, হঠাৎ একদিন কিটো পরিত্যাগ করলে কোনো মহাপাপ হয় না। এমনকি বেশ কয়েক দিন পোলাও-বিরিয়ানি, মিষ্টি-মণ্ডা খেয়ে আবার কিটোতে চলে আসা যায়। বিরিয়ানির সময়টাতে শরীর গ্লুকোজ চক্রে চলে যাচ্ছে। তারপর আবার কিটোজেনিক চক্রে ফিরে আসছে।
সর্বশেষ বলা দরকার যে, শরীরে বিশেষ সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কিটো ডায়েট করা ভুল হবে। যেমন কেউ যদি উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে থাকে, তার জন্য সমস্যা হতে পারে। ওষুধ রক্তচাপ কমাচ্ছে, আবার কিটোও রক্তচাপ কমাচ্ছে। তখন দেখা গেল রক্তচাপ আশঙ্কাজনক ভাবে কমে গেল। এটা শুরু করার আগে ভালো ভাবে জেনে নিন।
জীবনে নানান ভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যেতে পারে। সন্দেহ নেই কিটো তেমনি বড় একটা ইতিবাচক পরিবর্তন, যার ফলাফল বিস্ময়কর ও সুদূরপ্রসারী।