তাহলে কি ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে?

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে মার্কিন মিডিয়া ও সমালোচকদের কি আজ ক্ষমা চাওয়া উচিত? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রবার্ট ম্যুলারের প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই। বহুল আলোচিত ম্যুলার প্রতিবেদন প্রকাশের দু দিন পরই অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বলেছেন, বিচারের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার যথেষ্ট প্রমাণ নেই। আর প্রতিবেদন প্রকাশের মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই ট্রাম্প সমর্থকদের দাবি, মার্কিন প্রচারমাধ্যমের উচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৬৭৫ দিন তদন্ত চালিয়েছেন রবার্ট ম্যুলার। সাংবাদিকেরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাম্পকে ক্যাপিটল হিল থেকে বিতাড়ন করবে। শুধু ট্রাম্পকেই নয়, তাঁর ছেলে, মেয়ে ও মেয়ে জামাইকে ওয়াটারগেটের চেয়েও খারাপ অপরাধের জন্য কারাগারে যেতে হতে পারে বলেও মন্তব্য করা হয়েছিল।

রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের আঁতাত প্রশ্নে প্রায় দুই বছর ধরে তদন্তের পর বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার অবশেষে তাঁর চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করেছেন। ২২ মার্চ অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার জানিয়েছেন, রবার্ট ম্যুলারের তদন্ত শেষ হয়েছে এবং প্রস্তুত চূড়ান্ত প্রতিবেদন তাঁর হাতে পৌঁছেছে। এই সপ্তাহান্তের মধ্যেই তিনি এই প্রতিবেদনের মূল বক্তব্যের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ কংগ্রেসের উদ্দেশে পাঠাবেন।

প্রতিবেদনে কী আছে, সে কথা উইলিয়াম বার ছাড়া অন্য কেউ এখনো জানেন না। বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ম্যুলার নতুন কোনো অভিযোগনামা পেশ করবেন না। এ কথার অর্থ হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা তাঁর পরিবারের কেউ আপাতত কোনো বেআইনি কার্যকলাপের জন্য অভিযুক্ত হচ্ছেন না। এটি ট্রাম্পের জন্য স্বস্তির সংবাদ। প্রথম থেকেই তিনি বলে আসছেন, পুরো তদন্ত কমিটি ডেমোক্র্যাটদের সাজানো একটি চক্রান্ত। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আঁতাতে তিনি জড়িত নন।
তদন্ত শুরুর পর থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বস্তিতে ছিলেন না। নিজের সমর্থনে যতবারই কথা বলার চেষ্টা করেছেন, ততবারই মার্কিন প্রচারমাধ্যম ট্রাম্পের বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছে। জগৎ বিখ্যাত এসব সংবাদমাধ্যম সরাসরি বলেছে, ‘ট্রাম্প মিথ্যাচার করছেন।’ ট্রাম্পের আগে আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এমন একযোগে সরাসরি মিথ্যার অভিযোগ নজিরবিহীন। যদিও কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্তের নজির অনেক আছে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধেও তদন্ত হয়েছে। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম একযোগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিচারের আগেই বিচার করেছে বলে মনে করেন তাঁর সমর্থকেরা। তাই ম্যুলারের প্রতিবেদন প্রকাশের পর অন্তত মার্কিন সংবাদমাধ্যম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হবে বলে প্রত্যাশা করছেন ট্রাম্পের গোঁড়া সমর্থকেরা। শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, কেউ কেউ আরেকটু এগিয়ে ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষ থেকেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছে।
শুরু থেকেই ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, তাঁর প্রচার শিবিরের কোনো সদস্য রাশিয়ান কোনো চরের সঙ্গে কখনোই দেখা করেনি। বলেছিলেন, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো বাণিজ্যিক চুক্তি চালাচ্ছেন না। বলেছিলেন, স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামের নারীর মুখ বন্ধ রাখার জন্য অর্থ দেওয়ার বিষয়েও কিছুই জানতেন না তিনি। ম্যুলারের তদন্তের সময়েই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এসব বক্তব্যের অসারতা প্রমাণিত হয়েছে। এসব সংবাদ নিয়েই গত দুই বছর ব্যস্ত ছিল মার্কিন সংবাদমাধ্যম। ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ম্যুলারের তদন্তের পর বিপাকে পড়বেন, সে বিষয়ে এক রকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল মার্কিন সংবাদমাধ্যম। ডেমোক্রেটিক দলের নেতারা ট্রাম্পের সম্ভাব্য কারাবাস নিয়েও বক্তব্য রাখতে পিছপা হননি।
আমেরিকার গত এক শ বছরের সাড়া জাগানো হত্যা মামলাটি ছিল নিকোল হত্যা মামলা। ওই মামলায় অভিযুক্ত জে সিম্পসন শেষ পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত হননি। কিন্তু মার্কিন সংবাদমাধ্যম তখন সিম্পসনকেই খুনি সাব্যস্ত করেছিল। বিচারে নির্দোষ হয়ে বেরিয়ে আসার পরও সিম্পসনের কাছে মার্কিন গণমাধ্যম ক্ষমা চায়নি। সেই ইতিহাস বলে দেয়, প্রমাণিত হওয়ার আগেই বিচার করে নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছেও মার্কিন মিডিয়া হয়তো ক্ষমা চাইবে না। এমন প্রত্যাশা করা যায় না। যদিও ট্রাম্প সমর্থকেরা মনে করেন, সংবাদমাধ্যমের এ ধরনের আগাম বিচার প্রবণতার জন্য ক্ষমা চাওয়াটাই যথেষ্ট নয়। তাঁরা এ ক্ষেত্রে দায়িত্বহীন সংবাদ পরিবেশনের জন্য কেউ আদৌ দায়বদ্ধ হবে কিনা, সে প্রশ্নও তুলেছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারকে লক্ষ্য করে টুইট করেছেন। গত নভেম্বরে প্রকাশ করা ওই টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, ম্যুলার আর তাঁর ডেমোক্র্যাট সহযোগীরা মানুষকে ধ্বংস করছে। ম্যুলারকে হিলারি ক্লিনটন ও ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদ্রূপ করেছেন টুইট বার্তায়। এবারে কথা উঠেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কি তাঁর ওই আচরণের জন্য বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের কাছে ক্ষমা চাইবেন? বলাই বাহুল্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে যেমন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ক্ষমা প্রার্থনা করবে না, প্রেসিডেন্টও তেমনি ম্যুলারের কাছে ক্ষমা চাইবেন না। এ ধরনের আচরণ উভয় পক্ষ থেকেই না করার সম্ভাব্যতাই সবচেয়ে বেশি।