ওষুধ ব্যবসায় বাংলাদেশিরা

তল্পিতল্পা নিয়ে কেউ দেশান্তরি হয় না। দেশান্তরি হওয়া মানেই এক অনিশ্চিত যাত্রা। সময়ের সঙ্গে এ যাত্রার গতিমুখ পাল্টে যায়। দেশান্তরি হওয়া মানুষের পরিচয় পাল্টে যায়। একসময় আরব-ইউরোপসহ সারা বিশ্বের নজর ছিল এই ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে। দলে দলে বিচিত্র বর্ণের মানুষের দল এসে এই অঞ্চলে নতুন করে ভাগ্যের খোঁজ করেছিল। আজ দৃশ্যপট পাল্টে গেছে।
বিশ্বায়নের এ যুগে নতুন যে বিশ্বকাঠামো তৈরি হয়েছে, সেখানেও রয়েছে উন্নত-উন্নয়নশীল-অনুন্নত দেশের শ্রেণীকরণ। কারণ, সম্পদের বিস্তার সমান নয় সবখানে। আর তাই অতীতের মতো ‘ভাগ্যান্বেষণ’ শব্দটি এখনো জারি রয়েছে। অতীতের মতোই দলে দলে মানুষ শিক্ষা, নিরাপত্তা, উপার্জনসহ নানা কারণে দেশান্তরি হয়। নতুন পরিবেশে খোঁজে জীবনের মোক্ষ।
এককালে এই বঙ্গভূমিতে যে কারণে ভিড় করেছিল ইউরোপীয়রা, ঠিক একই রকম কারণে আজকের বাস্তবতায় বাংলার সন্তানেরা ছুটছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। উন্নত জীবনের আশায় উন্নত বিশ্বের দ্বারে কড়া নাড়ছে। এই কড়া নাড়ার শুরু অনেক আগে। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে এরই মধ্যে। বাংলার সন্তানেরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজগুণেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বিস্তার করছে নিজেকে।
তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বর্তমান এ পুঁজির কাঠামোয় প্রতিষ্ঠা পাওয়াটা যেনতেন কথা নয়। অনেক শ্রম লাগে, লাগে অনেক স্বপ্ন ও নিবেদন। এই শ্রম, স্বপ্ন ও নিবেদনের ফল হিসেবেই এসেছে আমেরিকার নিউইয়র্কের মতো শহরে ওষুধ ব্যবসায় বাংলাদেশিদের প্রাধান্যের তথ্যটি, যা একই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য গৌরব ও সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে এসেছে।
নিউইয়র্ক নগরীর পাঁচটি বরোতেই ওষুধের ব্যবসায় অভিবাসী বাংলাদেশিরা বেশ সফল। এই সাফল্য আরও অনেক বাংলাদেশি অভিবাসীকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। স্বপ্নের মহিমাই এই যে, তা ছড়িয়ে পড়ে। এই ওষুধের দোকানগুলো একই সঙ্গে বাংলাদেশি অভিবাসীদের চিকিৎসাসেবাপ্রাপ্তিও সহজ করে দিয়েছে। নিউইয়র্কের ওষুধ খাতে ডুয়েনরিড, ওয়ালগ্রিন, রাইট এইড, ওয়ালমার্টসহ বড় বড় আমেরিকান কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসা এখন আর নেই। এই বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখন বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধর্তব্যে নিতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে গ্রাহকসেবার মান। এই অর্জন রাতারাতি আসেনি। উন্নত সেবা দিয়ে আস্থা অর্জনের মাধ্যমেই এটি সম্ভব হয়েছে।
এর আগে ডানকিন ডোনাটের দোকানগুলোতেও বাংলাদেশি-আমেরিকানদের জয়জয়কার শোনা গিয়েছিল, যা এখনো অব্যাহত। নিউইয়র্কে তথ্যপ্রযুক্তি, বিভিন্ন টিউটোরিয়াল সেন্টার, খাবারের দোকান থেকে শুরু করে অনেক খাতেই বাংলাদেশিদের এখন সরব উপস্থিতি রয়েছে। এই সাফল্যের মুকুটে নতুন সংযোজন ওষুধ ব্যবসা। বাংলাদেশি-আমেরিকানদের এই সাফল্যযাত্রা আরও সামনে এগিয়ে যাবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আরও নতুন নতুন ক্ষেত্রে নিজেদের বিস্তার ঘটাবেন—এটাই প্রত্যাশা।