পুতিন-কিম বৈঠকের গুজব, মস্কোয় মার্কিন দূত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করছেন—এমন খবরে উত্তর কোরিয়া-বিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত ছুটেছেন রাশিয়া অভিমুখে।

সিএনএনে প্রকাশিত এ–সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কিম উন খুব শিগগির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বলে খবর চাউর হয়েছে। এ খবরে আমেরিকার উত্তর কোরিয়া-বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন বিগান রাশিয়া যাচ্ছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কিম জং–উনের দ্বিতীয় বৈঠকটি উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি এনে দিতে পারেনি। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তাঁর আলোচনায় বসাটাকে বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখাতে তৎপর। ফলে, ওই নিষ্ফলা বৈঠকের পর তৃতীয় আরেকটি বৈঠকে বসার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। এ অবস্থায় কিম উন রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসলে সম্ভাব্য তৃতীয় বৈঠক নিয়ে সংশয় তৈরি হতে পারে—এমন চিন্তা থেকেই এ–সম্পর্কিত খবরে এতটা তৎপর হয়ে উঠেছে ওয়াশিংটন। ওয়াশিংটন স্পষ্টত উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিটি দ্রুততম সময়ে করতে চায়।


ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ট্রাম্প-কিম বৈঠকে উভয় পক্ষ কোনো চুক্তিতে উপনীত হতে পারেনি। মূলত, উত্তর কোরিয়ার ওপর থাকা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হতে পারেনি বলেই বৈঠকটি নিষ্ফলা থেকে যায়। এদিকে রাশিয়া আগেই পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসার বদলে উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ার প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছিল। অন্যদিকে, আমেরিকা চাইছিল উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করা হোক। তারপরই শুধু তারা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা করবে।


এদিকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির কেন্দ্র ইয়ংবিয়নে নতুন করে কার্যক্রম শুরু হয়েছে এমন তথ্য স্যাটেলাইটে ধরা পড়ে। স্যাটেলাইটে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, ঠিক সে সময়ই কিম-পুতিন সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়টি সামনে আসে।


ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং–উনের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে মস্কো ও পিয়ংইয়ং এখনো নিশ্চুপ। এ–সম্পর্কিত কোনো ঘোষণা কারও পক্ষ থেকেই আসেনি। কিন্তু ১৬ এপ্রিল দক্ষিণ কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম ইন-চুল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার দুই নেতার মধ্যে একটি বৈঠকের তোড়জোড় চলছে বলে সিউল জানতে পেরেছে।’


এখন পর্যন্ত পুতিনের সঙ্গে কিম উনের সাক্ষাৎ হয়নি। গত বছর সিঙ্গাপুরে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বৈঠকের কয়েক দিন আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন কিম উন। সেই সময়েই পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসার সময়েই ধাপে ধাপে উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় রাশিয়া। আর এটিই উভয় দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে বসার ক্ষেত্রটি তৈরি করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া জানাচ্ছে, চলতি মাসে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোডের ফোরামে দুই দেশই যোগ দেবে। আর এ সময়েই এ বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


এদিকে কিম-পুতিন বৈঠকটি রাশিয়ার বন্দরনগরী ভ্লাদিভস্তকেও অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছে ফ্লাইটঅ্যাওয়্যার ডটকম। ওয়েবসাইটটি জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন এয়ার কোরিয়ার একটি ফ্লাইট ১৮ এপ্রিল পিয়ংইয়ং থেকে ভ্লাদিভস্তকে যাবে। এই ফ্লাইটটি সাধারণত সোম ও শুক্রবার পরিচালিত হয়। তবে এখনো সিদ্ধান্ত পৌঁছানোর সময় আসেনি বলে মনে করেন কোরিয়া রিস্ক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী চ্যাড ও’ক্যারল। তাঁর মতে, ফ্লাইটটির তথ্য অস্বাভাবিক লাগলেও এটি সম্ভাব্য কিম-পুতিন বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না, তা বলার সময় এখনো আসেনি। যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণেও এটি হতে পারে। গত বছরও এ ধরনের বাড়তি ফ্লাইট দেখা গেছে।


তবে এ ভাবনাকে একেবারে উড়িয়েও দিতে চান না ক্যারল। সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘সাধারণত এই রুটে যে উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হয়, ১৮ এপ্রিলের ফ্লাইটটি তার থেকে আলাদা। ভ্লাদিভস্তকে এর আগে এ ধরনের উড়োজাহাজ কখনো উড়ে যায়নি। হতে পারে এটি সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য।’