শেষ হয়েও হলো না শেষ

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে ম্যুলারের তদন্ত প্রতিবেদন। ছবি: রয়টার্স
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে ম্যুলারের তদন্ত প্রতিবেদন। ছবি: রয়টার্স

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ বিষয়ে মার্কিন বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের প্রতিবেদনটি অবশেষে প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি সংশোধিত ও সংক্ষেপিত আকারে প্রকাশ হয়। এই প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্য দিয়ে ২২ মাসের দীর্ঘ তদন্তের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি হলেও এটাকে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ম্যুলার রাশিয়ার সঙ্গে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সরাসরি আঁতাতের কোনো প্রমাণ পাননি। তবে বিচার প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, এমন দশটির মতো সুনির্দিষ্ট উদাহরণ তুলে ধরেছেন। এই চেষ্টা সত্ত্বেও ট্রাম্প অপরাধ করেছেন, ম্যুলার এমন কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। তবে সেই অপরাধ থেকে ট্রাম্পকে দায়মুক্তও করেননি। শুধু জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব তাঁর নয়, কংগ্রেসের।

ট্রাম্প এবং তাঁর রিপাবলিকান সমর্থকেরা দাবি করেছেন, এই প্রতিবেদনে রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত ও বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা—দুই প্রশ্নেই প্রেসিডেন্টকে পূর্ণ দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটনে এক অনুষ্ঠানে হাসিমুখে ট্রাম্প বলেন, ‘দিনটা আমার জন্য খুব ভালো। কোনো আঁতাত নেই, বাধা সৃষ্টির অভিযোগও নেই।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার। ছবি: রয়টার্স

বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা অবশ্য প্রতিবেদনটির বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখছেন। তাঁদের দাবি, ট্রাম্প তদন্তকাজে বাধা দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া বানচালের নানা চেষ্টা করেছেন। তিনি সে কাজে সফল হননি এর একমাত্র কারণ তাঁর সহকর্মীরা এই কাজে তাঁকে সমর্থন করেননি।

এদিকে ট্রাম্প কীভাবে এই বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করেন, ম্যুলারের প্রতিবেদনে তার বিভিন্ন উদাহরণ রয়েছে। এফবিআইয়ের প্রধান জেমস কোমিকে তিনি রাশিয়া তদন্ত ঠেকাতে অনুরোধ করেছিলেন, কোমি তাতে সম্মত না হলে ট্রাম্প তাঁকে পদচ্যুত করেন। তিনি হোয়াইট হাউসের আইনজীবী ড্যান মেগানকে ডেকে ম্যুলারকে পদচ্যুত করার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আরেক উপদেষ্টা কোরি লেওয়ানডিস্কিকে ম্যুলার তদন্ত সীমিত রাখার জন্য প্রাক্তন প্রধান আইন কর্মকর্তা জেফ সেশন্সের ওপর চাপ সৃষ্টির নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁরা দুজনেই ট্রাম্পের নির্দেশ অগ্রাহ্য করেন।

রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সরাসরি সাক্ষাৎকারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ম্যুলার লিখিত উত্তর গ্রহণ করেন। বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট ঘটনার ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প কমপক্ষে ৩০ বার জানান, এ বিষয়ে কোনো কথা তাঁর স্মরণে নেই। ইতিপূর্বে ট্রাম্প অবশ্য নিজের অবিশ্বাস্য স্মরণশক্তির কথা অনেকবারই দাবি করেছেন। ট্রাম্পকে সাক্ষাতে বাধ্য করতে ম্যুলার সমন জারির কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু দীর্ঘসূত্রতার আশঙ্কায় সে পথে অগ্রসর হননি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

ম্যুলারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের সমর্থনে রুশ সরকার, বিশেষত এর গোয়েন্দা দপ্তর, বিভিন্ন নাশকতামূলক তৎপরতায় অংশ নেয়। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে এক সভায় ট্রাম্প রাশিয়াকে হিলারি ক্লিনটনের অপ্রকাশিত ৩০ হাজার ই–মেইল অবমুক্ত করার আহ্বান জানান। তাঁর সে বক্তব্যের পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে রুশ গোয়েন্দারা হিলারির ই-মেইল সার্ভার আক্রমণ করেন। ট্রাম্প টাওয়ারে একজন রুশ প্রতিনিধির সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের (ট্রাম্প ক্যাম্পেইন) প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প তাঁর প্রধান তথ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন, তিনি যেন এ ব্যাপারে কোনো তথ্য না দেন।

এসব সত্ত্বেও ম্যুলার মনে করেন, রুশ হস্তক্ষেপের ফলে তাঁরা লাভবান হবেন, ট্রাম্প ক্যাম্পেইন এই প্রত্যাশা করলেও রাশিয়ার সঙ্গে কোনো সমন্বিত তৎপরতায় তাঁরা অংশ নেননি।

এদিকে বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের প্রশ্নের বদলে এই মুহূর্তে বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির যে উদাহরণ ম্যুলার দিয়েছেন, সেদিকেই নজর দিচ্ছেন। তাঁরা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, প্রধান আইন কর্মকর্তা উইলিয়াম বার ও বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারকে কংগ্রেসের সামনে উন্মুক্ত শুনানিতে ডেকে পাঠানো হবে।
প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেটর চাক শুমার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, এই প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট যে ট্রাম্প বারবার মিথ্যা বলেছেন ও ছলনার আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু প্রধান আইন কর্মকর্তা সে তথ্য এড়িয়ে ট্রাম্পকে অপরাধমুক্ত ঘোষণা করেছেন।

এই সমালোচনা সত্ত্বেও ডেমোক্রেটিক নেতৃত্ব ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের কথা ভাবছে না। দলের শীর্ষ নেতা স্টেনি হয়্যার বলেছেন, মাত্র ১৮ মাস পরেই নির্বাচন। আমেরিকার জনগণ ভোটের মাধ্যমেই ট্রাম্পের ব্যাপারে তাঁদের মতামত প্রকাশ করতে সক্ষম হবেন।