আমেরিকার ভিসা আবেদন নাকচের হার বাড়ছে

আমেরিকায় ভিসা আবেদন নাকচের হার বিশেষ করে পারিবারিক অভিবাসন প্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে ভিসা খারিজের হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। অভিবাসন আইনজীবী, অভিবাসনপ্রত্যাশী ব্যক্তি ও আমেরিকায় থাকা তাদের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এমনকি প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা থাকার পরও অনেককেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ভিসা আবেদন খারিজের ক্ষেত্রে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে সম্ভাব্য ঝুঁকি ও সরকারি বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের সংখ্যা বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে। অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, আবেদনকারীদের অনেকেই সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভিসা পাচ্ছেন না। এমনকি আর্থিকভাবে সরকারি প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না এমন প্রমাণ হাজির করার পরও তাদের আবেদন খারিজ করা হচ্ছে। এর ফলে বহু মানুষ পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে জট।

হঠাৎ করেই ভিসা আবেদন নাকচের হার বৃদ্ধি পাওয়াটা অভিবাসীদের শঙ্কার মধ্যে ফেলছে। পারিবারিক ভিসা আবেদন ছাড়াও মেক্সিকো থেকে আমেরিকায় অভিবাসন প্রত্যাশীদের ভিসা আবেদন নাকচের হার সবচেয়ে বেশি। এ কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনে। বিশেষত বিভিন্ন দেশে থাকা মার্কিন কূটনীতিকদের ভিসা আবেদন নাকচের ক্ষমতা বাড়ানো হয়। এই পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে তেমন প্রচার করা হয়নি। আর এই পরিবর্তনগুলোর কারণেই অনেকের করা আবেদনে ত্রুটি থেকে যাচ্ছে, যা আবেদনটি খারিজ করে দেওয়াটা সহজ করে দিচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সরকারি সেবার ওপর নির্ভরশীলদের সংখ্যা কমাতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) সরকারি সেবার ওপর নির্ভরশীল হতে পারে এমন অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কঠোর নীতি গ্রহণের প্রস্তাব করে, যা একই বছরের অক্টোবরে গৃহীত হয়। তবে এ বিষয়ে জনমত গ্রহণের কাজ এখনো চলছে। কিন্তু এরই মধ্যে ওই প্রস্তাব অনুযায়ীই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশে থাকা তাদের দূতাবাসগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। ভিসা খারিজের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় কূটনীতিকদের। এর ফলেই এ বছরে এসে মার্কিন ভিসা খারিজের হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
ক্যাথলিক লিগ্যাল ইমিগ্রেশন নেটওয়ার্কের আইনজীবী চার্লস হুইলার বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জনমতকে এড়িয়ে নিজের মতো করে সরকারি সেবা-সম্পর্কিত নীতিটি কার্যকরের চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে এটি ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
তবে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এ সম্পর্কিত এক মামলার শুনানিতে মেরিল্যান্ড ফেডারেল কোর্টে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ রকম নির্দেশনা অভিবাসী-বিদ্বেষী অবস্থান থেকে দেওয়া হয়নি। আর এটি যেহেতু শুধু নির্দেশনাই, কোনো আইন নয়, তাই এর জন্য কোনো জনমতের প্রয়োজন পড়ে না।
সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, এই নির্দেশনা আলাদাভাবে ভিসা আবেদন খারিজে তেমন বড় ভূমিকা রাখছে না। ২০১৫ সাল থেকেই মার্কিন ভিসা আবেদন খারিজের হার বাড়ছে। কিন্তু সরকারি তথ্যই বলছে ভিন্ন কথা। ২০১৮ অর্থবছরে সরকারি সেবার ওপর নির্ভরশীল হতে পারে বিবেচনায় প্রায় সাড়ে তেরো হাজার ভিসা আবেদন খারিজ করা হয়, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় চারগুণ।