মায়ের জন্য একটু সময় রাখি

মা সব সময় শ্রোতা: স্বামীর কোনো কিছু পছন্দ না হলে বউকে দোষারোপ। সন্তানদের বায়না পূরণ না হলে মাকে শুনতে হয় সন্তানের ধিক্কার। সন্তান মানুষ না হলে সব মায়ের দোষ। সন্তানের শরীর খারাপ, মাকে বলা হয়। এই মা কখনই বক্তা হতে পারে না। কারণ তার কথা শোনার কে আছে? একসময় অভ্যস্ত হয়ে যায় নিজের সব কিছুকে উপেক্ষা করে মা।
মা হিসাব–নিকাশে কাঁচা: একটা রুটি চাইলে পেট ভরার জন্য দুটো রুটি দেয়। ক্ষুধা যাতে না লাগে একটা চাইলে অনেক কিছু তৈরি করে নিয়ে আসে। শীতে ঠান্ডা যাতে না লাগে জ্যাকেটের নিচে আরও দুটো কাপড় পরিয়ে দেয়। সকালে ৫ টাকার জায়গায় ১০ টাকা দেয়। অথচ নিজে শীতে কষ্ট করে তবুও সন্তানকে বুঝতে দেয় না। পেটে ক্ষুধা থাকলেও সন্তান, স্বামীকে আগে না খাইয়ে নিজে খায় না।
মা স্বার্থ পর: নিজের সন্তানের জন্য মা স্বার্থপর এতটাই, সন্তানকে ভালোবাসে তাদের জন্য না–ঘুমিয়ে না–খেয়ে স্বার্থপরের মতো শুধু তাদের ভালোবাসে।
মা ইংলিশ বুঝে না: I hate you বললে I love you বলে।
মা মিথ্যা কথা বলে: নিজে না–খেয়ে বলে খেয়েছি। ভালো খাবার নিজের খেতে ইচ্ছা করলেও সন্তান পছন্দ করে বলে যত্ন করে সন্তানের জন্য রেখে দেয়, আর বলে আমার খেতে ইচ্ছা করে না।
মা নিজের সম্বন্ধে কিছুই বোঝে না: সন্তানের শরীর খারাপ হলে দৌড়ান ডাক্তারের কাছে। কীভাবে সন্তানকে সুস্থ করা যায়। নানা রকমের খাবার রান্না করে সন্তানকে খাওয়ান যাতে সন্তানের রুচি ফিরে পায়, শক্তি হয়। অথচ নিজের অসুস্থতায় ডাক্তারকে দেখানোর সময়ও হাতে থাকে না। মুখ ফুটে বলেও না, আমার রুচি নেই।
মার বুদ্ধি কম: শীত ও গরম ছাড়া জীবনটাই তার কাটে স্বামী আর সন্তানের সেবা করে রান্না ঘরে, আর সংসারের চার দেয়ালের মাঝে। ভাবে, সন্তান বড় হলে তখন আরাম করবে। সন্তান বড় হয় যখন-তখন তার শরীরে সব আরাম শেষ হয়ে যায় অযত্ন আর অবহেলায়, তত দিনে ডায়বেটিসসহ নানা রোগের উপসর্গে মার তখন বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে দাঁড়ায়।
মা ব্যাংক: কখনো কোনো বিপদে সন্তান পরলে এটিএম মেশিনের মতো মা তার জমানো টাকা বের করে সন্তানের সমস্যার সমাধান করতে দ্বিধা করে না।
মা নির্লজ্জ: সন্তানের জিনিসে হাত না দেওয়ার জন্য কত ধমক মাকে খেতে হয়। ঘরের জিনিসপত্র গোছানোর কোনো দরকার নেই। তারপরও এলো মেলো ঘরের সবকিছু গুছিয়ে রেখে দেয় এতেই তার সুখ খুঁজে পায়। এলো মেলো বিছানা। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাপড় আর জিনিস পত্র গুছিয়ে রাখতে মার যেন কখনই ক্লান্তি আসে না। অথচ নিজের এই কাজের কোনো মূল্যায়ন কেউ করে না। মনে করে এটা মা’দের দায়।
মা নিজের যত্নের কেয়ারলেস: হাতে ব্যথা। তারপরও ভোরে উঠে সন্তান আর স্বামীর খাবার তৈরি করতে কোনো অসুবিধা বোধ করে না। নিজের জ্বর কাশি হলে ওটার গুরুত্ব না দিয়ে সন্তানের শরীরের গুরুত্ব দেয়। সে পানি খেয়েছে কিনা, জ্বর কমেছে কিনা। সন্তানের হাড় শক্ত হওয়ার জন্য দুধ এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ায়। অথচ নিজের হাড় ক্যালসিয়ামের অভাবে একদিন হাঁটা–চলা করা বন্ধ হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখার সময় মায়ের থাকে না।
মা সাধারণ: নিজে কম দামের কাপড় পরে অথচ সন্তানকে ব্রেনড নামের কাপড় কিনে দেয়। নিজে ভারী বোঝা গাড়ি ছাড়া হাতে বহন করে হাড়ের সংযোগে সমস্যা তৈরি করে অথচ সেই টাকা জমিয়ে একদিন সন্তানকে গাড়ি কিনে দেয় তার আরামের জন্য।
মায়ের পৃথিবী ঘৃণিত: ছোট বেলায় সন্তানদের প্রস্রাব–পায়খানা পরিষ্কার করে করে মায়ের হাতে ঘা হয়ে যায়। তারপরও মায়ের কোনো ক্লান্তি থাকে না। এত ত্যাগের পর সন্তান বড় হয়ে তাদের কথা শুনতে চায় না। কারণে–অকারণে ধমক দেয়। তারপর বৃদ্ধাবস্থায় তাদের বোঝা মনে করে। যে সন্তান সত্যিই একদিন বোঝা ছিল মায়ের জন্য, সেই মা তার সব কাজকে নিজের আনন্দ মনে করেছে। ১০ জন সন্তানকে বড় করা, তাদের জন্য নিজের পুরো জীবনকে বিসর্জন দেওয়া—সবই ছিল একজন মায়ের আনন্দ। সেই ১০ জন সন্তান বড় হয়ে সেই একজন মাকে বোঝা মনে করে।
মা নিজের মৃত্যুর চিন্তা করে না: জায়নামাজে বসে মায়ের দোয়া থাকে সন্তানের জন্য, যেন আল্লাহ তাকে অসুখ–বিসুখ, বিপদ–আপদ থেকে রক্ষা করে। আল্লাহ আমার হায়াত নিয়ে আমার সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখুক। সন্তানকে বাঁচানোর জন্য এহেন কোনো কাজ নেই, মা করতে পরে না। সব ক্ষেত্রে মা আপস করলেও সন্তানের ক্ষেত্রে কোনো আপস করে না। সন্তানের কথা ভেবে ত্যাগ শিকার করে। একদিন হয়তো জীবনের বেঁচে থাকাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সন্তানের ভালো দেখলে জায়নামাজে শুকরিয়া আদায় করে। সেই মাকে অবহেলা করতে আমরা দুবার ভাবি না। দেখার লোকের অভাবে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। পরে ওখানে গিয়ে দেখার সময় থাকে না। অথচ বন্ধু–বান্ধবদের সঙ্গে পার্টি, নিজের বাড়ি–গাড়ি—এসবের সময়ের অভাব থাকে না। এই দুনিয়ায় নয়ন মেলে যে মাকে প্রথম দেখি, যার বুকে মুখ লুকিয়ে নিজেকে নিরাপদ ভাবি, সেই মাকে কোন বিবেকে নিজের ঘর থেকে বিদায় করে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসি? সন্তান আঘাত পেলে আগে মায়ের চোখে পানি আসে। যেদিন এই মা থাকবে না, সুখে থাকি আর দুঃখে থাকি, কারও কোনো আসবে–যাবে না। আসুন আমরা আসছে মা দিবসে প্রতিজ্ঞা করি, মায়ের সেবার করার। তারা আমাদের কাছে কিছু চায় না। তাদের জন্য সামান্য সময়, যত্ন ভালোবাসা এটুকুই যথেষ্ট!