ট্রাম্পের অভিশংসন প্রশ্নে ডেমোক্রেটিক পার্টিতে বিভক্তি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার আঁতাত প্রশ্নে রবার্ট ম্যুলার প্রতিবেদন প্রকাশের পর দ্বিধায় পড়ে গেছে বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি। ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা হবে, নাকি হবে না—এই প্রশ্নে দলটির ভেতরে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

ডেমোক্রেটিক পার্টির সবচেয়ে কট্টর সমর্থকেরা চান, কংগ্রেসে অভিশংসনের প্রশ্নটি উত্থাপন করা হোক। তাঁদের দাবি, মাথায় রেখেই ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট পদে দলের মনোনয়ন চান—এমন একাধিক ডেমোক্রেটিক প্রার্থী অভিশংসনের পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও কংগ্রেসে দলটির একাধিক নেতা এই প্রশ্নে রয়েসয়ে এগোতে চান।

আপাতত ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা ট্রাম্পের অভিশংসনের প্রশ্নটি নিয়ে টিভির পর্দায় আলোচনাতেই অধিক সময় ব্যয় করছেন। তাঁরা জানেন, ট্রাম্পের মিথ্যাচার ও বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধাচেষ্টা নিয়ে যত আলোচনা হবে, ট্রাম্পের সমর্থন তত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রতিবেদনটি অবমুক্ত হওয়ার পর গৃহীত প্রথম জনমত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্প অন্তত ৩ শতাংশ সমর্থন হারিয়েছেন।

গতকাল রোববার প্রায় প্রতিটি প্রধান টিভি চ্যানেলে ডেমোক্রেটিক নেতারা ম্যুলার রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেছেন। কেউ কেউ অভিশংসনের পক্ষেও মত দিয়েছেন। সঙ্গে এ কথাও বলছেন, প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্প যদি অভিশংসিত হন, তা হলেও তাঁকে ক্ষমতা থেকে বহিষ্কারের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, এর জন্য প্রয়োজন পড়বে সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন। রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত চলতি সিনেটে তেমন সমর্থন যে মিলবে না, সে কথা বলাই বাহুল্য।

প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির প্রধান অ্যাডাম শিফ গতকাল এক টিভি সাক্ষাৎকারে সে কথা অকপটেই স্বীকার করলেন। তাঁর কথায়, উভয় দলের সমর্থন ছাড়া অভিশংসন সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও কংগ্রেসকে হয়তো বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ, বিষয়টি উত্থাপিত হোক, আমেরিকার জনগণ তা-ই চায়।

একই কথা বলেছেন বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রধান জেরি ন্যাডলার। এনবিসি টিভিকে তিনি জানান, ম্যুলার প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট, ট্রাম্প বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সে কারণে তাঁকে অনায়াসে অভিশংসিত করা যায়।

নজরদারি কমিটির প্রধান এলাইজাহ কামিংসও একই কথা বলেছেন। তাঁর মতে, হয়তো অভিশংসন সফল হবে না, কিন্তু ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই উদ্যোগ নিতে হতে পারে।

তবে মুখে যত কথাই বলা হোক না কেন, এই মুহূর্তে সরাসরি অভিশংসনের বদলে ট্রাম্পের সম্ভাব্য অপরাধ নিয়ে আরও তদন্তের কথাই ভাবছেন ডেমোক্রেটিক নেতারা। তাঁরা ইতিমধ্যে অবিকৃত ও পূর্ণাঙ্গ ম্যুলার প্রতিবেদন চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁকে ও ম্যুলারকে উন্মুক্ত শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন তাঁরা। পাশাপাশি চলছে ট্রাম্পের আয়করের হিসাব নিয়ে তদন্ত।

গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটি ও অর্থবিষয়ক কমিটির প্রধান আলাদা আলাদাভাবে ট্রাম্পের আর্থিক লেনদেনের হিসাব সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন। রাজস্ব দপ্তর ছাড়াও ডয়েচে ব্যাংক ও একাধিক আমেরিকান ব্যাংকের কাছে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে সমন পাঠিয়েছেন তাঁরা। ট্রাম্প ও তাঁর আইনজীবীরা এই চেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করছেন। কংগ্রেসের রিপাবলিকানরাও একে একপেশে তদন্ত নামে অভিহিত করে তার বিরোধিতা করছেন।

ট্রাম্পের অভিশংসনের চেষ্টা বা তাঁকে নিয়ে একের পর এক তদন্ত চলতে থাকলে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। ডেমোক্র্যাটরা এ বিষয়ও মাথায় রাখছেন। স্পিকার পেলোসি ও সিনেটে ডেমোক্রেটিক নেতা চাক শুমার সে কারণে খোলামেলাভাবে ট্রাম্পের অভিশংসনের ব্যাপারে তাঁদের আপত্তি জানিয়েছেন। রাজ্যপর্যায়ের দলীয় নেতারাও বিষয়টির বিরোধিতা করেছেন। নিউ হ্যাম্পশায়ারের পার্টিপ্রধান বলেছেন, এর ফলে রিপাবলিকান–সমর্থকদের উজ্জীবিত করা হবে। সিনেটে যদি অভিশংসনের প্রস্তাব ব্যর্থ হয়, তাহলে ট্রাম্প দাবি করতে পারেন, পুরো ব্যাপারটাই ছিল ‘উইচ হান্ট’, ডেমোক্র্যাটদের পাতানো খেলা।