অভিবাসন আইন বদলের দাবি জোরালো হচ্ছে

আমেরিকার করদাতা নাগরিকদের প্রতি সুবিচার করে সমন্বিত অভিবাসন আইন প্রণয়নের দাবি উঠছে। চলমান অভিবাসন আইন নাগরিকদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে । সময়ের চাহিদা মোকাবিলা করে, একটি ভারসাম্যের অভিবাসন আইন প্রণয়নের জন্য আমেরিকার জনসমাজে মতৈক্য থাকলেও রাজনীতিবিদদের বিতর্ক ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
আমেরিকার আগামী যেকোনো নির্বাচনে অভিবাসন সমস্যাই এখন জয়–পরাজয়ের নিয়ামক হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে সীমান্ত দিয়ে প্রতি দিন গড়ে ৪০০ অভিবাসী আমেরিকায় ঢুকছে। এসব অভিবাসীর আমেরিকায় আসার কোনো বৈধ ভিসা নেই। স্থল সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা এ জনপ্রবাহ আমেরিকা বন্ধ করতে পারছে না। চাপ পড়ছে অর্থনীতিতে। শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীলরা মনে করছে, দেশে বছরে দশ লাখ অবৈধ অভিবাসী যোগ হচ্ছে। উদারনৈতিকেরা এখনো অবৈধ অভিবাসীদের পক্ষে উচ্চ কণ্ঠ হলেও দেশের ভেতরে অভিবাসীদের নিয়ে মনোভাব দ্রুত পাল্টাচ্ছে। আমেরিকার করদাতা নাগরিকদের প্রতি সুবিচার করে সমন্বিত অভিবাসন আইন প্রণয়নের দাবি এখন তুঙ্গে।
আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার জনমানসে এ চেতনাকে উসকে দিয়েছেন। তাঁর পুনর্নির্বাচন পর্যন্ত অভিবাসন আইনের কোনো সুরাহা না করে বিতর্ক ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। অভিবাসীবান্ধব হিসেবে পরিচিত ডেমোক্র্যাটরাও এখন অভিবাসন আইন নিয়ে কী ভাবছেন, তা পরিষ্কার নয়। তাদের মধ্যেও বিরাজ করছে ভিন্ন মত।

ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ফোরামের পরিচালক নুরানি আলী বলছেন, আমেরিকার বিরাজমান অভিবাসন আইন আমেরিকার নাগরিকদের প্রতি ন্যায্য আচরণ করছে না। এর পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী এক শ বিলিয়ন ডলার বছরে খরচ হয় আমেরিকার অবৈধ অভিবাসীদের জন্য, যা আসলে আমেরিকার করদাতাদের অর্থ। আমেরিকার ফেডারেল অর্থের বরাদ্দ আইন অনুযায়ী কাগজপত্র অভিবাসীরা ভোগ করতে পারে না। বাস্তবে অবস্থা ভিন্ন। বহু কাগজপত্রহীন অভিবাসী সরকারি বরাদ্দের আবাসন সুবিধা পাচ্ছে। আমেরিকায় থাকার বৈধ কাগজপত্র নেই, এমন কারও ঘরে সন্তান জন্ম নিলে ফেডারেল তহবিল সে পরিবারটির জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। কাগজপত্রহীন লোকজনের চিকিৎসা সেবায় ফেডারেল সহযোগিতা পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু ভিন্ন আইনে বলা হয়েছে, আমেরিকার হাসপাতালে কোনো জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেবাগ্রহণকারীর নথি চাওয়া যাবে না। প্রসূতি সেবা ও প্রসূতি চিকিৎসা বাধ্যতামূলক। এসব ক্ষেত্রে অবহেলার জন্য দণ্ড গ্রহণ করতে হবে অবহেলাকারী প্রতিষ্ঠানকে।
আমেরিকান জার্নাল অব দা আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য মতে ফেডারেল, স্টেট ইমিগ্রান্ট ইনস্যুরেন্স কর্মসূচিতে অবৈধদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবায় বছরে ব্যয় হয় দুই বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া প্রসূতি সেবায় ব্যয় হয় আরও সোয়া বিলিয়ন ডলার। শিশুদের শিক্ষা, প্রি– স্কুলসহ বয়স্ক শিক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক। স্কুলে প্রাতরাশ থেকে দুপুরের খাবার পর্যন্ত দিতে হয়। এসবের পেছনে ব্যয় হচ্ছে আমেরিকার নাগরিকদের করের অর্থ।
কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের ফুড স্ট্যাম্প বা সরকারি খাদ্য ভর্তুকি পাওয়ার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু পরিবারে আমেরিকায় জন্ম নেওয়া কোনো শিশু থাকলেই ফুড স্ট্যাম্পের দরজা খুলে যায়। সেন্টার অব ইমিগ্রেশন স্টাডিজের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ৩২ শতাংশ কাগজপত্রহীন অভিবাসী পরিবার সরকারি খাদ্য ভর্তুকি গ্রহণ করে থাকে। পাশাপাশি সেন্ট্রাল আমেরিকা আসা অভিবাসী পরিবারের অর্ধেকই কোনো না কোনো ওয়েলফেয়ার প্রোগ্রাম গ্রহীতা বলে তথ্য জরিপে দেখা গেছে।
সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন নামের রক্ষণশীল সংস্থার কর্মকর্তা সাবেক ইমিগ্রেশন জজ আর্ট আর্থার বলেছেন, আমেরিকায় আশ্রয়প্রার্থীরা আবেদন করেই এ দেশে তাঁর শেকড় প্রথিত করতে শুরু করে। আবেদন সুরাহা করতে যে সময় লাগে, এর মধ্যে দেখা যায় আবেদনকারী সন্তানের জন্ম দিচ্ছে, ঘর বাড়ি কিনছে, কাজ করছে বা ব্যবসা-বাণিজ্যতে জড়িয়ে পড়ছে। এক সময় নিজ দেশে নিরাপদ নয় বলে আশ্রয়ের আবেদন জানানোর পরের ধাপে যুক্ত হয়ে পড়ে অনেক কিছু। ফলে আর তাদের ফেরত যাওয়া হয় না।
আমেরিকায় অবৈধদের চাপে স্থানীয়রা চাকরি পাচ্ছে না, এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিন থেকে করা হচ্ছে। অভিবাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত নগরগুলোতে অবৈধরা অবাধে কাজ কর্ম করছে। আমেরিকার ২৬টি অঙ্গরাজ্যে সরকারের তহবিল থেকে কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের নানা সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। নিউইয়র্কে ৩০০ ডলার পর্যন্ত নগদ সাহায্যের জন্য বৈধ–অবৈধ কোনো বিবেচনা করা হয় না । ১১টা রাজ্যে স্বাস্থ্যসেবা ও হাসপাতাল সেবা হয় বিনা মূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা পেয়ে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়াতে সবার জন্য আছে ফুড স্টাম্প সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবাসহ কাগজপত্রহীনদের জন্য রাজ্য তহবিল থেকে আইনগত সহযোগিতাও দেওয়া হয়ে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর রাজ্যের কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের সামাল দেওয়ার জন্য সম্প্রতি আইন প্রণেতাদের কাছে ৫০ মিলিয়ন বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছেন।
সেনসাস ব্যুরোর ২০১৮ সালের তথ্য মতে, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আগত অভিবাসীদের মধ্যে আর্থিক টানাপোড়েন থাকলেও তাঁদের অধিকাংশই কাজের মধ্যে। নেটিভ আমেরিকানদের মধ্যে কর্ম হার ৭৩ শতাংশ হলেও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অভিবাসীদের মধ্যে কর্ম হার ৭৬ শতাংশ।