বাউল দাদা জিতলেন, জিতল ৩০০ ভেন্ডর

বৃষ্টির মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ড্রামের কর্মকর্তা। পাশে প্ল্যাকার্ড হাতে বাউল দাদা (বাঁ থেকে তৃতীয়)
বৃষ্টির মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ড্রামের কর্মকর্তা। পাশে প্ল্যাকার্ড হাতে বাউল দাদা (বাঁ থেকে তৃতীয়)

জীবনের নোঙর ফেলেছেন নিউইয়র্ক নগরের জ্যাকসন হাইটসে। আছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। ফুটপাতে ব্যবসা করেন। জ্যাকসন হাইট্‌সের ৭৩ স্ট্রিটের ফুটপাতে বসেন মুড়ি আর পান সুপারই নিয়ে। তাঁর ঝালমুড়ি খাননি এমন বাংলাদেশি জ্যাকসন হাইট্‌সে নেই। সবাই তাঁকে একনামে চেনেন। তিনি বাউল দাদা। আসল নাম সানোয়ার হোসেন। সবাই তাঁকে বাউল দাদা বলেই ডাকেন। সেই বাউল দাদা হঠাৎই সর্বস্ব হারিয়ে পড়ে যান বিপদে। তবে দেশিজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং বা ড্রাম নামের একটি সংগঠন তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাদের নিয়ে লড়াই করে তিনি হয়ে উঠেছেন ফুটপাতের অন্য ব্যবসায়ীদেরও ত্রাতা।

জানা যায়, আর দশটা বাংলাদেশির মতো ভাগ্যের অন্বেষণে প্রায় তিন যুগ আগে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান সানোয়ার। তখন থেকে এখানে বসবাস করছেন। তবে কোন এক অজানা কারণে তাঁর গ্রিনকার্ড হয়নি। ব্যবসার জন্য করা হয়নি কোনো ভেন্ডর লাইসেন্স। এখন বয়সের ভারে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন।
সম্প্রতি নিউইয়র্কের স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন এসে বাউল দাদার ফুটপাতের দোকান উঠিয়ে দেয়। বাক্স–পেটরা ছুড়ে ফেলে দেয়। সব হারিয়ে পথে বসার অবস্থা তাঁর। উপায় না পেয়ে দ্বারস্থ হয়েছিলেন ড্রাম নামের সংগঠনের। সংগঠনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পুঁজি জোগাড় করে তার রোজগারের পথ খোলা রাখা হয়। তিনি সেই অর্থে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তরল পানীয় আর পানি বিক্রি শুরু করেন। পরে সংগঠনটি উদ্যোগ নিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করে বাউল দাদাকে বাদী করে মামলা করে। এতে সর্বাত্মক আইনি সহায়তা দেয় ড্রাম।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আদালতের বিচারক বাউল দাদার পক্ষে রায় দেন। আদালতের রায়ে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছে নিউইয়র্কের স্বাস্থ্যবিভাগ। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন।
আদালতের রায়ের পর জানা গেল, স্বাস্থ্য বিভাগের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের ফুটপাতের প্রায় ৩০০ ব্যবসায়ী বা ভেন্ডরের মালামাল নষ্ট করার অভিযোগ ছিল। বাউল দাদার মামলার ফলে এসব ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। ভেন্ডরদের পক্ষে এই কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে নিউইয়র্কের অলাভজনক সংগঠন ড্রাম।
সাধারণ ভেন্ডরদের পক্ষে মামলায় লড়ে তাদের পক্ষে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সাফল্যের বিষয়টি জানাতে ২২ এপ্রিল জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ড্রাম। এদিন বৃষ্টির মধ্যেও দুপুরে ড্রামের স্বেচ্ছাসেবীরা মামলায় জয়ের আনন্দে যোগ দেন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্যরা বলেন, অধিকার আদায়ের যেকোনো লড়াই যে বৃথা যেতে পারে না, বাউল দাদা আর অন্য ভেন্ডরদের মামলা জয় তার উদাহরণ।
ড্রামের অন্যতম সংগঠক কাজী ফৌজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ এশীয় অনগ্রসর অভিবাসীদের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকতে ড্রাম বদ্ধপরিকর। বাউল দাদার মামলাটি মানবিক ছিল। এই মামলায় অনগ্রসর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।