বাইডেন সবার চেয়ে এগিয়ে

সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে এখন পর্যন্ত মোট ২১ জন বাছাইপর্বে নিজেদের নাম ঘোষণা করেছেন। এঁদের মধ্যে ৪০ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ৭৬ বছর বয়স্ক সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বঘোষিত সমাজতন্ত্রী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তাঁর প্রতি ডেমোক্রেটিক ভোটারদের সমর্থন রয়েছে ২১ শতাংশ। এই দুজনের বাইরে অন্য কারও ৭ থেকে ৮ শতাংশের বেশি জনসমর্থন নেই।

বেশির ভাগ ভাষ্যকার মনে করেন, বাইডেনের এগিয়ে থাকার কারণ বাছাইপর্বে ডেমোক্রেটিক ভোটাররা এমন একজনকে খুঁজছেন, যিনি তাঁদের চোখে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে সক্ষম।

২০১৬ সালের নির্বাচনে স্যান্ডার্স তাঁর প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য আমেরিকার নবীন ভোটারদের নজর কেড়েছিলেন। তাঁদের সমর্থনেই অভাবিত তহবিল সংগ্রহে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। এবারে অবস্থা ভিন্ন। ডেমোক্র্যাটদের মূল লক্ষ্য যেভাবেই হোক ট্রাম্পকে পরাজিত করা। এ জন্য তাঁরা মধ্যপন্থী বাইডেনের নানা অতীত দুর্বলতা উপেক্ষা করতেও প্রস্তুত।

জনমতে এই মুহূর্তে এগিয়ে থাকলেও স্যান্ডার্সকে উপেক্ষা করা অবশ্য বাইডেনের পক্ষে সম্ভব হবে না। তরুণদের চোখে তিনি এখনো বিদ্রোহী নায়ক। বাছাইপর্বের নির্বাচনে নিজের অবস্থান সংহত করতে স্যান্ডার্স কিছুটা অপ্রত্যাশিত তীব্রতায় বাইডেনের সমালোচনা করে চলছেন। বাইডেন এর আগে ত্রিদেশীয় বাণিজ্য চুক্তি নাফটা ও চীনের সঙ্গে স্থায়ী বাণিজ্য চুক্তি সমর্থন করেছিলেন। স্যান্ডার্সের অভিযোগ, এই দুই চুক্তির ফলে আমেরিকার শ্রমিকশ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্ভবত ৪০ লাখের মতো কর্মসংস্থান খোয়া গেছে। স্বাস্থ্যবিমা প্রশ্নে বাইডেনের প্রস্তাবেরও সমালোচনা করেছেন স্যান্ডার্স। এই পরিকল্পনা মোটেই বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মন্তব্য তাঁর।

বাছাইপর্ব অনেকটা দূরপাল্লার দৌড়। আগামী বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি আইওয়ায় প্রথম বাছাইপর্বের নির্বাচন হবে। এই সময়ের মধ্যে অবস্থা অনেকটা বদলেও যেতে পারে। অতীতে দেখা গেছে, প্রথমে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন অনেকে। তবে এই মুহূর্তের নির্বাচনী হাওয়া থেকে এমন ভাবা অসম্ভব নয় যে বাইডেন ও স্যান্ডার্সের মধ্যেই ডেমোক্রেটিক বাছাইপর্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকবে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে নারী ও সংখ্যালঘু ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির তৃণমূল পর্যায়ের অনেকে আশা করেছিলেন, ২০২০ সালের নির্বাচনে নারী ও সংখ্যালঘু প্রার্থীরা অনেক বেশি নজর কাড়বেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির যে ২১ জন প্রার্থী বাছাইপর্বে নিজেদের নাম ঘোষণা করেছেন, তাঁদের মধ্যে সিনেটর কমলা হ্যারিস ও সিনেটর কোরি বুকার এই যোগ্যতার মাপকাঠিতে উতরে যান। কিন্তু দুজনের কেউ তেমন জনসমর্থন আদায় করতে পারেননি। এই অবস্থায় বাস্তবতা স্বীকার করে কেউ কেউ কমলা হ্যারিসকে জো বাইডেনের রানিংমেট হিসেবে দেখার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

৫৪ বছর বয়স্ক হ্যারিস শুধু একজন আফ্রিকান-আমেরিকান নারীই নন, তিনি বাইডেনের তুলনায় অধিক প্রগতিশীল। ফলে, দলের বামঘেঁষা অংশ, যারা বাইডেনের ব্যাপারে সন্দিহান, তারা হ্যারিসকে বাইডেনের পাশে দেখলে হয়তো কিছুটা আশ্বস্ত হবে। এই মনোভাব ব্যক্ত করে ম্যারিল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্য অ্যান্থনি ব্রাউন বলেছেন, এঁরা দুজনে একজোট হলে সবদিক দিয়েই ‘ভারসাম্য’ অর্জিত হয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, ২০২০ সালে তাঁকে বাইডেনের সঙ্গেই লড়তে হবে। একাধিক সূত্রে বলা হয়েছে, মধ্যপন্থী ও শ্রমজীবী শ্বেতকায় আমেরিকানদের মধ্যে বাইডেনের অব্যাহত জনসমর্থনে ট্রাম্প কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন। বাইডেন ইতিমধ্যে একাধিক শ্রমিক ইউনিয়নের সমর্থন অর্জন করেছেন। ২০১৬ সালে এদের অনেকেই ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছিলে। আগামী বছর হোয়াইট হাউস দখল করতে হলে ডেমোক্র্যাটদের তাদের এই সাবেক সমর্থকদের ফের নিজ তাঁবুতে ফিরিয়ে আনতে হবে। অনেকেই বলছেন, কাজটা এই মুহূর্তে অন্য যে–কারও চেয়ে বাইডেনের পক্ষেই অধিক সাফল্যের সঙ্গে করা সম্ভব।