ট্রাম্পের ঢিলের বদলে চীনের পাটকেল

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি অগ্রাহ্য করে মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিল চীন। অনেকেই বলছেন, এটি হলো ট্রাম্পের ঢিলের জবাবে চীনের পাটকেল।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনকে সাবধান করে দিয়েছিলেন, চীনা আমদানির ওপর তিনি যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, তার জবাবে তারা যেন পাল্টা শুল্ক আরোপ না করে। করলে বিপদ চীনেরই হবে। ট্রাম্প চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের উদ্দেশে বলেছিলেন, নিজের স্বার্থেই তাঁর উচিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা। সে কথার জবাবে দিন ফুরানোর আগেই চীন জানিয়ে দেয়, ৬০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর তারাও অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।

বিশ্বের এই প্রধান দুই অর্থনীতির মধ্যে খোলামেলা বাণিজ্য যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় ইতিমধ্যেই মার্কিন শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। গতকাল সোমবার নিউইয়র্কের অন্যতম শেয়ারবাজার ডাউ ইন্ডাস্ট্রিয়ালের সূচক ৬০০ পয়েন্টের বেশি পড়ে গেছে। অবস্থা না বদলালে মার্কিন অর্থনীতিতে বড় রকমের চাপ পড়বে, এমনকি মন্দাবস্থা ফিরে আসতে পারে—এমনভাবেই সাবধান করে দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনায় সেটি হবে বড় রকমের ধাক্কা।

ট্রাম্প অবশ্য এখনো বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। তিনি দাবি করেছেন, শুল্ক আরোপের ফলে আমেরিকার খাজাঞ্চিখানায় কোটি কোটি ডলার জমা পড়বে। কীভাবে, তা অবশ্য ব্যাখ্যা করেননি। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আসলে একরকমের কর, যা ক্রেতাদেরই বহন করতে হয়। চীন থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসে, তা কিনতে হলে মার্কিন ক্রেতাদেরই অতিরিক্ত মূল্য দিতে হবে।

এমনকি ট্রাম্পের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ল্যারি কাডলো স্বীকার করেছেন, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন ভোক্তাদের বাড়তি খরচ বহন করতে হবে। তিনি অবশ্য এ কথাও বলেন, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চীনের রপ্তানি হ্রাস পাবে, ফলে ক্ষতি তাদেরও হবে। ট্রাম্প সেই যুক্তি খণ্ডন করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নয়, বেশি ক্ষতি হবে চীনেরই। গতকাল হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য কম।’ ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে তিনি মার্কিন কোম্পানিগুলোকে চীন থেকে নিজেদের কারখানা সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন।

চীন যেসব মার্কিন পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে, তার অধিকাংশই কৃষিজাত। কৃষিপ্রধান অঙ্গরাজ্যগুলোর অধিকাংশ ভোটার ২০১৬ সালে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু চীনের সঙ্গে অব্যাহত বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে এদের অনেকেই বিপদে পড়েছে। নেব্রাস্কার একজন খামারমালিকের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, এদের অনেকে এখনো ট্রাম্পের প্রতি বিশ্বস্ত। কিন্তু এই আস্থা কত দিন টিকে থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কোনো বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদিত না হলে ১ জুন থেকে চীনের এই শুল্ক আরোপ হবে।

রক্ষণশীল দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মনে করে, ট্রাম্প নিজেই সাধ করে বিপদ ডেকে এনেছেন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন শুল্ক আরোপের হুমকিতে চীন ভড়কে যাবে এবং ওয়াশিংটনের শর্তে নতুন বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করবে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রয়োজনে প্রেসিডেন্ট শি কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতি স্বীকার করতে পারবেন না। ট্রাম্পের মতো প্রেসিডেন্ট শিও চাইছেন নিজেকে শক্তিশালী নেতা হিসেবে প্রতিপন্ন করতে।

বিশেষজ্ঞেরা একমত, এই যুদ্ধ দীর্ঘকাল টিকে থাকলে চীন ও আমেরিকা উভয়েরই ক্ষতি হবে। তবে ক্ষতির পাল্লা যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই বেশি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উপাত্ত উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীনের অবস্থা অনেক শক্ত। বিশ্ব অর্থনীতির চলতি প্রবৃদ্ধির এক-তৃতীয়াংশই এসেছে চীনের কারণে। ফলে, ট্রাম্প যদি চান যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যেকোনো একজনকে বিশ্ব বেছে নিক, তাহলে সম্ভবত তারা চীনকেই বেছে নেবে।