মধ্যপ্রাচ্যে লক্ষাধিক মার্কিন সেনা পাঠানোর পরিকল্পনার খবর ভুয়া: ট্রাম্প

ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে ১ লাখ ২০ হাজার সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের—এমন তথ্যে কথা অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে ১ লাখ ২০ হাজার সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের—এমন তথ্যে কথা অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে ১ লাখ ২০ হাজার সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র—এমন তথ্যের কথা অস্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলছেন, এটা ভুয়া খবর।

গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে করি এটা ভুয়া সংবাদ। ঠিক আছে? আমাদের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। আশা করছি, এমন কোনো পরিকল্পনা আমাদের করতেও হবে না। আর আমরা যদি তা করি, তাহলে এর চেয়ে অনেক বেশি সৈন্য আমরা পাঠাব।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে দ্য টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শ্যানন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইরানকে প্রতিরোধসংক্রান্ত পরিকল্পনা হস্তান্তর করেছেন। ওই পরিকল্পনায় ইরানের হামলা ঠেকাতে ও পরমাণু কর্মসূচি জোরদারের বিষয়টি প্রতিহত করতে মধ্যপ্রাচ্যে ১ লাখ ২০ হাজার সেনা পাঠানোর প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে টাইমস জানায়, ওই পরিকল্পনায় ইরানের ভূমিকে আক্রমণের কোনো কথা বলা হয়নি। এ জন্য আরও অনেক বেশি সেনার প্রয়োজন হবে। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ড অঞ্চলে (সেন্টকম) বোমারু বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত, ইরানের উসকানিমূলক আচরণ ও হুমকির পাল্টা জবাব হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোল্টন।

গত বছর ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক মহলে ইরানকে একঘরে করে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের ওপর চাপের পারদ আরও এক ধাপ বাড়ানোর অংশ হিসেবে সে দেশের ‘এলিট বাহিনী’ রেভল্যুশনারি গার্ডকে (আইআরজিসি) বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মাসের শেষে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইরান থেকে যারা এখনো তেল কিনছে, নিষেধাজ্ঞা থেকে তাদের অব্যাহতির বিষয়টি তুলে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এপ্রিল মাসের পর চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্ককে নিষেধাজ্ঞার গ্যাঁড়াকল থেকে অব্যাহতির সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি আর বাড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের তেল রপ্তানি–বাণিজ্যকে শূন্যের কোটায় নিয়ে যেতেই এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি পারমাণবিক চুক্তি করেছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। সে চুক্তির মূল বিষয় ছিল ইরান পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধ রাখবে এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন ইরানের যেকোনো পারমাণবিক স্থাপনায় যেকোনো সময় পরিদর্শন করতে পারবে। অর্থাৎ, ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরানকে নজরদারির মধ্যে রাখতে পারবে। এর বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আবার নতুন করে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছেন ইরানের ওপর।