আইনপ্রণেতা হওয়ার স্বপ্ন

মা কিয়া দত্ত ও বাবা সোমবার্তার সঙ্গে রিয়া দত্ত সোম। ছবি: প্রথম আলো
মা কিয়া দত্ত ও বাবা সোমবার্তার সঙ্গে রিয়া দত্ত সোম। ছবি: প্রথম আলো

রিয়া দত্ত সোম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান। বিস্ময়কর এ প্রতিভা নেব্রাস্কা ওয়েসলেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীববিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে দুটি স্নাতক করেছেন। বর্তমানে অপেক্ষায় রয়েছেন ইংল্যান্ডে যাওয়ার অপেক্ষায়। বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ডের রয়্যাল হলওয়ে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য যাচ্ছেন তিনি। সেখানে তিনি পড়বেন বিশ্বপরিবেশ নিয়ে। স্বপ্ন দেখেন এভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে আমেরিকার ভবিষ্যৎ আইনপ্রণেতা হবেন। জীববিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতো দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রাখা রিয়ার স্বপ্ন যে এমন বড় হবে তাতে আর বিস্ময়ের কী!

রিয়া দত্ত সোমের পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। আরও ভালো করে বললে, বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মিরসরাই মিঠাছড়া উকিলবাড়ি তাঁর বাবা সোমবার্তার জন্ম। বাবা সোমবার্তা ও মা কিয়া দত্তের যত্নে রিয়া বেড়ে উঠেছেন কানসাসের উচিটাতে। এখানেই তাঁর জন্ম। সে হিসেবে আমেরিকাই তাঁর জন্মভূমি। কিন্তু তাও শিকড়ের টান বলে একটা কথা থাকে। এই টান যে সত্য, তার পরিচয় পাওয়া গেল রিয়ার কথাতেই। মা-বাবার ফেলে আসা দেশকেই নিজের দেশ মনে করেন। ভালোবাসেন ভীষণ। মা-বাবার সুবাদেই বাংলায় বেশ সড়গড়। শুনলে বোঝাই যাবে না আমেরিকায় জন্ম তাঁর। ইংরেজি ও বাংলার পাশাপাশি স্প্যানিশ ভাষাতেও দক্ষ তিনি। ইতিমধ্যে আর্জেন্টিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন স্প্যানিশ ভাষায় উচ্চতর ডিগ্রি।
রিয়া দত্ত সোম এরই মধ্যে অর্জন করেছেন অনেক। কানসাস সিটির ওভারল্যান্ড পার্ক এলাকার কানসাস ব্লু-ভ্যালি নর্থ হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পড়ালেখা শেষ করেন বর্ষসেরা শিক্ষার্থী হিসেবে। ভর্তি হন নেব্রাস্কা ওয়েসলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। অতি অল্প সময়ে রিয়া সেখানে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বগুণের প্রমাণ পাওয়া যায় এই সাংগঠনিক অর্জন থেকেই। পড়ালেখার পাশাপাশি শারীরিক প্রশিক্ষণেও যুক্ত হন তিনি। কারাতের ব্ল্যাক বেল্ট পেয়ে সামর্থ্যে প্রমাণ রাখেন সেখানেও। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিই নয়। তাঁর লেখা বেরিয়েছে ৬০টি প্রকাশনায়। শিক্ষা ও সংগঠনসংশ্লিষ্ট কাজে গিয়েছেন ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের নানা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর নেতৃত্বগুণ এরই মধ্যে মুগ্ধ করেছে অনেককে।
পড়ালেখা, খেলাধুলা, সাংগঠনিক নেতৃত্বসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা ও মেধার স্বাক্ষর রাখা রিয়ার স্বপ্নের বিস্তৃতি যে বেশি হবে, তা তো না বললেও চলে। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় বেরিয়ে এল সেই স্বপ্নের কথা। বললেন, ‘আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাই। সে লক্ষ্যে নিজেকে তৈরি করতেই কাজ করছি। লক্ষ্য আমেরিকার কংগ্রেস সদস্য হওয়া।’
ছোট থেকেই রিয়া একটু একটু করে নিজেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য করে তুলেছেন। যদিও বাবা সোমবার্তার ইচ্ছে ছিল মেয়ে চিকিৎসক হবে। অবশ্য বাবার এ স্বপ্নটিরও রয়েছে ইতিহাস। সোমবার্তা বলেন, ‘আমার বাবার ইচ্ছা ছিল আমি চিকিৎসক হব। কিন্তু পড়াশোনায় অমনোযোগী ছিলাম। এ জন্য বাবার কাছ থেকে কম শাসন পাইনি। কিন্তু আমার চিকিৎসক হওয়া হয়নি। বাবার অপূর্ণ এ ইচ্ছাই মেয়েকে দিয়ে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলাম। আমার মন রক্ষায় কিছুদিন পড়ালেখাও (জীববিজ্ঞান) করেছিল সে। কিন্তু পরে তাকে তার পছন্দের পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছি আমি। এখন সে নিজের মতো করে নিজেকে গড়ে নেওয়ার অবস্থানে পৌঁছেছে।’
মা কিয়া দত্ত মেয়ের সাফল্যে গর্বিত। মেয়েকে সব সময় স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে দিয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘আজ তার অর্জন আমাদের গর্বিত করছে। তার এ সাফল্যে আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ।’
কিন্তু যে রিয়াকে নিয়ে এত কথা, তিনি কী করে এতগুলো ক্ষেত্রে সফল হলেন এবং ভবিষ্যতের জন্য এত বড় একটি লক্ষ্য ঠিক করলেন? প্রশ্ন করতেই একগাল হেসে জানালেন, ‘সময়ানুবর্তিতা। সময় ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাকভাবে করতে পারলে এবং নিজের কাজের প্রতি যত্নবান হলে যেকোনো কাজেই সফল হওয়া যায়। কাজের পরিধি যত বাড়ে, দেখার দৃষ্টি তত প্রসারিত হয়। আর এই প্রসারিত দৃষ্টিই পারে নতুন অভিজ্ঞতার আলোয় ঋদ্ধ করতে।’ উদাহরণ হিসেবে বললেন, ‘নিবিড় পড়ালেখার পাশাপাশি কমিউনিটি হেল্প করতে গিয়েই নতুন ভাষা শেখার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। সেখান থেকেই স্প্যানিশ ভাষা শেখা।’
রিয়ার শেষ কথাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজের স্বপ্নের পথে কতটা যেতে পারবেন এমন প্রশ্ন নিয়ে না ভেবে নিজের কাজ নিয়েই ভাবতে চান। নিজের শক্তির দিকেই তাকাতে চান। বললেন, ‘সময়। আমি খুব সময় মেনে চলি। নিজের কাজের প্রতি আমি যত্নবান। আর এ দুইয়ের শক্তিই আমাকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাবে বলে মনে করি।’