ঈদের দিনের সাজ

ঈদের সারা দিন নানা সাজে, নানা পোশাকে নিউজার্সির নর্থ ব্রান্সউইকে বসবাসরত প্রযুক্তিবিদ নিশাত চৌধুরী
ঈদের সারা দিন নানা সাজে, নানা পোশাকে নিউজার্সির নর্থ ব্রান্সউইকে বসবাসরত প্রযুক্তিবিদ নিশাত চৌধুরী

ঈদ মানে আনন্দ! ঈদ মানে উৎসব! ঈদ মানে নতুন জামার ঘ্রাণে হৃদয় মাতোয়ারা! সংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও শুদ্ধতার মাস পবিত্র মাহে রমজানের মাঝামাঝি এসে পৌঁছে গেছি আমরা! বিশ্বের ধর্মপ্রাণ স মুসলমানের সঙ্গে উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশি মুসলমানরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে তাঁদের সর্ববৃহৎ উৎসব ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপনের। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার মাধ্যমে ঈদ আনন্দের সূচনা হয়, রমজান মাসের সমাপ্তি ঘটে।

ঈদ উৎসবের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জড়িয়ে আছে মেহেদি রাতের সাজসজ্জা। চাঁদ রাতে মেহেদির রঙিন আলপনার মধ্য দিয়ে ঈদের সাজসজ্জা শুরু হয়। নিউইয়র্কের বাতাসে এখন বসন্তের মিষ্টি সুঘ্রাণ বইছে। চারদিকে প্রাকৃতিক মাধুর্যের মনোমুগ্ধকর হাতছানি মানুষের হৃদয়ে দোল খেয়ে যায়। যত দূর চোখ যায়, সবুজের হাতছানি আর ফুলেল সৌন্দর্যে অবলোকন করে মনে হয় পৃথিবীর মতো এত সুন্দর জায়গা অন্য কোথায়ও আর নেই। বছরের বেশির ভাগ সময় বরফে ঢাকা দেশ আমেরিকায় শীতের তীব্রতাকে উপেক্ষা করে গ্রীষ্মের এই নয়নাভিরাম দৃশ্য শুধু কয়েক মাসের জন্য চোখে পড়ে। প্রান্তরের পর প্রান্তরজুড়ে প্রকৃতির এই বর্ণিল সাজ সাজ রব মুসলমানদের প্রাণের উৎসব ঈদ আনন্দকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেবে এবার।

বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের শহর নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের বসবাস এখন চোখে পড়ার মতো। মানুষ নিজের দেশ ছেড়ে প্রবাসে আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে আসে তাঁদের সংস্কৃতি, পোশাক–পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে। বাঙালি পৃথিবীর যে প্রান্তেই অবস্থান করুক না কেন, বুকের মাঝে লাল-সবুজ রং ও নিজস্বতা বহন করে চলে। ভিন্ন গোলার্ধের দেশ আমেরিকায় বসবাস করলেও উৎসবের আনন্দে বাঙালি নিজস্ব ঐতিহ্যের পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

ঈদের দিনের শুরুটা হওয়া চাই স্নিগ্ধ, সুন্দর ও ঝলমলে সকাল দিয়ে! তাহলে ভালো লাগার রেশটা রয়ে যাবে দিনভর। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই গোসল শেষে নতুন জামা পরে, সতেজ দেহ-মনে পরিবারের সবার সঙ্গে মিষ্টি মুখ করে ঈদের নামাজে শরিক হওয়ার মাধ্যমে দিনের শুরু হয়। ঈদের দিন সকালে মিষ্টি খাওয়া সুন্নত। দেহ, মনের সতেজতার সঙ্গে পোশাকের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। শুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে ঈদের নামাজের পোশাকটি সাদা কিংবা যেকোনো হালকা নরম রঙের নির্বাচন করা যেতে পারে। নারী–পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে পোশাকের রং নির্বাচনের বিষয়টি একইরকম। যদিও ঈদের পোশাক যেকোনো রঙের-ই হতে পারে। এতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

ঈদের সারা দিন নানা সাজে, নানা পোশাকে নিউজার্সির নর্থ ব্রান্সউইকে বসবাসরত প্রযুক্তিবিদ নিশাত চৌধুরী
ঈদের সারা দিন নানা সাজে, নানা পোশাকে নিউজার্সির নর্থ ব্রান্সউইকে বসবাসরত প্রযুক্তিবিদ নিশাত চৌধুরী

ঈদের নামাজ শেষে ঘরে ফিরে মনের মতো পুরো দিন উৎসবের আমেজে পরিবারের সঙ্গে কাটানোর জন্য একটি ছক তৈরি করা যায়। ফুরফুরে মেজাজে সবার সঙ্গে দুপুরের খাবার শেষে আড্ডা, গল্পে সময় অতিবাহিত করা যেতে পারে। ঈদের দিনের পোশাক যেমন দেখতে সুন্দর ও শৈল্পিক হতে হবে তেমনি আরামদায়কও হওয়া চাই। বিশেষ করে শিশু ও মেয়েদের জন্য এটি জরুরি। খাবার পরিবেশন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের আপ্যায়নে ঈদের দিন মেয়েদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। এ সময় মেয়েদের এমন পোশাক পরা উচিত; যে পোশাকে কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই তাঁরা সহজে চলাফেরা করতে পারবে। দুপুরে ব্যস্ততা বেশি থাকে। আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে ও উৎসবের আমেজ বজায় রেখে দুপুরে মেয়েরা সুতি শাড়ি কিংবা আরামদায়ক পছন্দসই ইচ্ছেমতো যেকোনো ধরনের জামা পরতে পারে। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মেহেদির সাজে সজ্জিত হাতভর্তি চুড়ি, কপালে টিপ, গলায় মালা, নূপুরের রিনিঝিনি শব্দ ঈদের উৎসবকে অনেক বেশি রঙিন করে তুলবে নিঃসন্দেহে। ছেলেরা বাসায় এ সময় ট্রাউজার, টি-শার্ট, ফতুয়া কিংবা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে প্যান্ট-শার্ট পরতে পারেন।

ঈদে শিশুদের আনন্দ সবচেয়ে বেশি থাকে। এ দিনে শিশুরা ঘাসফড়িংয়ের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায় সর্বত্র। তাই তাদের ঈদের দিন যতটা সম্ভব আরামদায়ক পোশাক পরাতে হবে। নিউইয়র্কের এখনকার তাপমাত্রায় ঈদের নামাজ থেকে ফেরার পর শিশুদের পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিবর্তন করে দুপুরে তাদের হাফপ্যান্ট সঙ্গে সুতি গেঞ্জি পরিয়ে দিতে হবে। এ পোশাকে তারা প্রজাপতির মতো উড়ে উড়ে আনন্দ করতে পারবে। ঈদ উৎসবের দিনটিতে নারী, পুরুষ, শিশু যে-ই হোক না কেন, স্বাভাবিক, নান্দনিক পোশাক পারে তাঁদের ঈদের আনন্দকে কয়েক শ গুণ বেশি বাড়িয়ে দিতে। পোশাক ও পোশাকের রং নির্ধারণে ব্যক্তিভেদে সবার আলাদা রুচি থাকতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে, পোশাকটি যেন পরিবেশ ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই হয়। দুপুরের হই হুল্লোড় ও খাওয়া-দাওয়া শেষে বিকেলে আয়েশ করে কফি কাপ হাতে টেলিভিশন দেখা বা পছন্দের গান, কবিতা শোনা যেতে পারে। প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে গান, কবিতা, আড্ডা ঈদের দিনকে আরও বেশি আনন্দঘন করে তুলবে।

ঈদের সারা দিন নানা সাজে, নানা পোশাকে নিউজার্সির নর্থ ব্রান্সউইকে বসবাসরত প্রযুক্তিবিদ নিশাত চৌধুরী
ঈদের সারা দিন নানা সাজে, নানা পোশাকে নিউজার্সির নর্থ ব্রান্সউইকে বসবাসরত প্রযুক্তিবিদ নিশাত চৌধুরী

সারা দিন পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর পর বিকেলে দল বেঁধে বাইরে কোনো দর্শনীয় স্থান বা বন্ধুদের বাসায় ঘুরতে গেলে ভালো লাগবে। এ সময় মেয়েরা রংচঙে শাড়ি, জামা ও ছেলেরা চাইলে ফরমাল ড্রেসও পরতে পারেন। যদিও ঈদের দিন সকাল, দুপুর, রাত্রিবেলা ছেলেরা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরতেই স্বাচ্ছন্দ্যে বোধ করেন বেশি। বিদেশে বসবাস করায় চাইলেও বছরের অন্য সময়ে ছেলেরা যেহেতু তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পায়জামা-পাঞ্জাবি পরতে পারেন না, তাই ঈদের দিনের এই সুযোগে পুরোটা সময় তাঁরা বেশির ভাগ সময় পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে থাকেন।

মানুষের রুচির পরিচয় মেলে তার পোশাকে। পোশাক মানেই মন জুড়ে নির্মল প্রশান্তি। পোশাকের সঙ্গে সুন্দর, পরিপাটি সাজসজ্জা মানুষের মন প্রফুল্ল রাখে। নিউইয়র্কের অপরূপ প্রকৃতি বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কাটানো ঈদের রাতটি বছরের বাকি সময়টুকুতে হৃদয়ে কড়া নাড়বেই। মনে হবে এই দিনটির স্মৃতি নিয়ে অপেক্ষায় থাকা যাবে আগামী ঈদ পর্যন্ত।

আশা করি, পশ্চিমা এ দেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আমাদের সন্তানেরাও ভবিষ্যতে আমাদের মতো ঈদ উৎসবে দেশি পোশাকে সজ্জিত হয়ে বিদেশিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে আমাদের ঈদ উৎসবকে! সবার ঈদ উৎসব ভরে থাকুক আনন্দের সব রঙে।