ট্রাম্পের অভিশংসনের দাবি জোরালো হচ্ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ এখন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে, তাঁরা চাইলেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করার ক্ষমতাও তাঁদের রয়েছে। তবে ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি অভিশংসনের ঘোর বিরোধী। তাঁর যুক্তি, এর ফলে ট্রাম্পের অনুগত সমর্থকদের উজ্জীবিত করা হবে। তাতে ২০২০ সালের নির্বাচনে হিতে বিপরীত হতে পারে।

পেলোসির আপত্তি সত্ত্বেও ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসে অভিশংসনের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। ম্যুলার প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্পষ্ট হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশের কোনো প্রমাণ না পাওয়া গেলেও বিচার প্রক্রিয়ায় ট্রাম্প বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর সে প্রশ্নে তদন্তের জন্য কংগ্রেস অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার সহ ট্রাম্পের বিভিন্ন সহকর্মী ও আইনজীবীদের শুনানিতে ডেকে পাঠিয়েছেন। ট্রাম্পের আয়করের হিসাব ও আর্থিক লেনদেনের নথিপত্রও তাঁরা চেয়েছেন। হোয়াইট হাউস থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনো নথিপত্র দেওয়া হবে না, কেউ কংগ্রেসের সামনে শুনানিতেও অংশ নেবে না। হোয়াইট হাউসের চোখে, ম্যুলার রিপোর্ট প্রকাশের পর এই প্রশ্নে অতিরিক্ত কোনো তদন্তের প্রয়োজন নেই। কংগ্রেস এখন যা করছে তা প্রেসিডেন্টকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিব্রত করা ছাড়া আর কিছু নয়।

হোয়াইট হাউসের এই ঢালাও অসহযোগিতার কারণেই কংগ্রেসের ভেতর ডেমোক্রেটিক সদস্যরা বিকল্প হিসেবে অভিশংসন, নিদেন পক্ষে অভিশংসনের লক্ষ্যে অনুসন্ধান শুরু করার দাবি জানানো শুরু করেছেন। দলের শীর্ষ নেতাদেরও অনেকে বলছেন, এ ছাড়া অন্য কোনো পথ আর খোলা নেই। যাঁরা এত দিন অভিশংসনের বিরোধী ছিলেন, তাঁরাও বলছেন, কংগ্রেসের দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের কার্যকলাপের ওপর নজরদারি করা। সে কাজে বাধা দিয়ে ট্রাম্প কংগ্রেসের অধিকার খর্ব করেছেন। প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত কংগ্রেস সদস্য আলেজান্দ্রিয়া ওকাসিও-করতেস বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করার চেয়ে অনেক জরুরি দেশে আইনের শাসন রক্ষা করা। আর সে জন্য অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন।

একজন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ট্রাম্প অভিশংসন-যোগ্য অপরাধ করেছেন এমন মন্তব্য করায় অভিশংসনের পক্ষে ডেমোক্র্যাটদের দাবি আরও জোরদার হয়েছে। মিশিগান থেকে নির্বাচিত জাস্টিন আমাস হলেন প্রথম ও একমাত্র রিপাবলিকান সদস্য যিনি পুরো ম্যুলার প্রতিবেদন পাঠের পর অভিশংসনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁর এই কথা ট্রাম্প ও রিপাবলিকান নেতৃত্বকে ভীষণ ক্ষিপ্ত করেছে। তাঁরা বলছেন, আমাস কেবল নামেই রিপাবলিকান, কাজে নন। কোনো কোনো ভাষ্যকারের ধারণা, নিজ দল থেকে বেরিয়ে লিবার্টারিয়ান পার্টির প্রার্থী হিসেবে আমাস হয়তো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।

আমাসের কথায় উৎসাহী হয়ে একাধিক ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্য খোলামেলা ভাবেই বলা শুরু করেছেন, আর বিলম্ব নয়। একজন আফ্রিকান-আমেরিকান সদস্য বলেছেন, ‘আমরা যেভাবে হাত গুটিয়ে বসে আছি, তা দেখে আমাদের সমর্থকেরা বিস্মিত। তারা অভিযোগ করছে আমাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করছি না।’

টেক্সাস থেকে নির্বাচিত সদস্য হোয়াকিম জেফ্রি বলেছেন, অভিশংসন শুরুর সময় এসেছে।

কংগ্রেসের প্রগতিশীল গ্রুপের যুগ্ম সভাপতি ওয়াশিংটন থেকে নির্বাচিত সদস্য প্রমীলা জয়পাল বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন কংগ্রেসকে তার দায়িত্ব পালনে শুধু বাধা দিচ্ছে তাই নয়, শাসনতন্ত্রে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্সে’র যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিচার বিভাগীয় কমিটির সামনে প্রশ্নোত্তরে অংশ নেওয়ার জন্য হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন আইনজীবী ডন ম্যাগেনের নামে সমন জারি করা হয়েছিল। ট্রাম্পের নির্দেশে তিনি সে সমন উপেক্ষা করেন। এই ঘটনার পর যেসব ডেমোক্র্যাট অভিশংসনের বিপক্ষে তাঁরাও বলা শুরু করেছেন, একটা কিছু করা দরকার। যেমন, মিসৌরি থেকে নির্বাচিত ইমানুয়েল ক্লিভার বলেছেন, ‘এ রকম ঘটনা যদি আরও ঘটে তাহলে আমাকেও বলতে হবে অভিশংসন ছাড়া বিকল্প নেই।’

পেলোসি অবশ্য এখনো অভিশংসনের দাবি উপেক্ষা করে যাচ্ছেন। গত সোমবার কংগ্রেসের বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রধান জেরি ন্যাডলারের সঙ্গে এক ব্যক্তিগত বৈঠকে তিনি বলেছেন, অভিশংসন শুরু করার সময় এখনো আসেনি।