কল্পনা অল্প বাকিটা গল্প

অন্য দিনের মতো আজও কাজ সেরে বের হয়েছি। বাইরে নেমেই মনে হলো তাপমাত্রা ক্রমশ নামছে। সেলসিয়াসে ৫ ডিগ্রি। ম্যানহাটনের ডাউনটাউন ব্রডওয়েতে ‘চার্জিং বুলের’ কাছেই আমার কাজের জায়গা। এই এলাকায় পর্যটকের ব্যাপক ভিড় থাকে। এ পথ ধরেই যেতে হয় লিবার্টি আইল্যান্ডে স্ট্যাচু অব লিবার্টি দর্শনে। কাছেই টুইন টাওয়ারের জায়গায় গড়ে ওঠা ফ্রিডম টাওয়ার। তা ছাড়া ঠিক সামনেই বোলিং গ্রিন পার্ক, যা সম্ভবত নিউইয়র্ক সিটির প্রথম পার্ক। সঙ্গে রয়েছে ব্যাটারি পার্ক। আশপাশে রয়েছে অনেকগুলো চেইন ফুডশপ।
রাত তখন ৯টার বেশি, আমাকে ৫ মিনিটের পথ পেরিয়ে ‘জে’ ট্রেন ধরতে হবে। যেতে হবে উডহিভেন; ৪৫ মিনিটের পথ। তাই কিছুটা তাড়া ছিল। কিন্তু দ্রুত রাস্তা পার হয়ে দু পা যেতেই থমকে দাঁড়াতে হলো। কেউ একজন রাস্তার পাশে ফেলে রাখা ময়লার ব্যাগ খুলে কিছু একটা খুঁজছে। সাধারণত এসব ব্যাগ থেকে কেউ কেউ ক্যান বা সোডার প্লাস্টিক বোতল নিয়ে যায় বিক্রির জন্য। কিন্তু এ তো দৈনন্দিন বর্জ্য ফেলার কালো ব্যাগ! পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে গতি একটু কমিয়ে আড়চোখে দেখার চেষ্টা করলাম কী হচ্ছে।
কালো লম্বা জ্যাকেট পরা কেউ জ্যাকেটের হুডে মাথা ঢেকে উপুড় হয়ে ব্যাগটিতে ডানহাতে কিছু একটা খুঁজছে, আর বাম হাতে মোবাইল ফোনের ফ্লাশলাইটের আলো জ্বালানো। চলার গতি আরেকটু শ্লথ করে দেখলাম তার ডানহাতে স্যান্ডউইচ ও বার্গার জাতীয় খাবার। পথচলার ভান করে কিছু দূর এগিয়ে না দেখার ভঙ্গিতে আবারও দেখার চেষ্টা করলাম। হ্যাঁ, মানুষটা এখনো খাবার খুঁজছে। আবার উল্টো ঘুরে ফিরে এলাম নিশ্চিত হতে। এবার চোখে পড়ল সুশির স্বচ্ছ প্লাস্টিক প্যাকেট। এক প্যাকেটে অন্তত ৮ থেকে ১০টা সুশি থাকে। সুশির প্যাকেট দেখেই ফুটপাত থেকে চোখ চলে গেল রাস্তার পাশের ফুডশপে। ‘বেন্টো’, সুশির জন্য খ্যাত, দামও অনেক বেশি। নিউইয়র্কে অধিকাংশ খাবার দোকানে প্রতিদিনের অবিক্রীত খাবার, দোকান বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই ফেলে দিতে হয়। গার্বেজ ব্যাগের মধ্যে রয়েছে ফেলে দেওয়া সেই খাবার, উচ্ছিষ্ট নয়; ভালো খাবার, আজ বিক্রি হয়নি। এটাই নিয়ম। বড় বড় খাবারের দোকানগুলো এটাই করে। বাংলাদেশে কমিউনিটি সেন্টারগুলোর অনুষ্ঠানে উচ্ছিষ্ট খাবার দরিদ্রদের মধ্যে অনেক সময় বিলি করা হয়। আবার এ ধরনের খাবার বিক্রি হতেও দেখেছি ঢাকার নিউ ইস্কাটনে সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে। এর অন্যতম ভোক্তা খেটে খাওয়া হতদরিদ্র মানুষ। ফুটপাতে বিক্রি হওয়া এই খাবারের অধিকাংশই বিরিয়ানি; বিয়ের অনুষ্ঠানের অন্যতম খাবার।
কিন্তু নিউইয়র্কের এই খাবারগুলো মোটামুটি ভালোই বলা চলে। উচ্ছিষ্ট নয়, কেউ ছুঁয়েও দেখেনি, নষ্টও নয়। ইতিমধ্যে গার্বেজ ব্যাগ থেকে বেশ কিছু খাবার সংগ্রহ করেছে লোকটি। হঠাৎ করে খাবার সংগ্রহকারী মানুষটি পেছন ফিরে অনেকটা চিৎকার করেই রাগ ও বিস্ময় নিয়ে বললেন, ‘এক্সকিউজ মি...! হোয়াই আর ইউ ফলোয়িং মি!’
-নো, সরি, একচুয়ালি আই এম নট ফলোয়িং ইউ। প্রত্যুত্তর করলেন সাধারণ গোছের একজন; দেখতে স্প্যানিশ বলেই মনে হচ্ছে।
-হোয়াট দ্য হেল ইউ আর ডুইং হিয়ার, ডু ইউ ওয়ান্ট সাম? দ্যান কামঅন।
হ্যাঁ, এবার স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে খাবার খুঁজতে থাকা কণ্ঠটি একজন নারীর। নারীকণ্ঠের তীব্রতা কিছুটা কমলেও রাগে যেন গজগজ করছে প্রতিটি শব্দ।
- একচুয়ালি, হোয়াইল আই ওয়াজ ক্রসিং, আই জাস্ট কিউরিয়াস অ্যাবাউট...।
পুরুষ কণ্ঠের নমনীয় উত্তরে এবার আগুন জ্বলে উঠল খাবার খুঁজতে থাকা নারীকণ্ঠে। কণ্ঠ আরও কিছুটা উঁচুতে তুলে দেহে আক্রমণের ভাব টেনে বললেন, ‘ফাকআপ ইয়র একচুয়ালি, ফাকআপ ইয়র কিউরিয়াস, ইউ আর ইনভেডিং মাই প্রাইভেসি!’ বিপরীত পক্ষের কথা থামিয়ে চরম রাগ নিয়ে কথাগুলো শেষ করলেন তিনি। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উল্টো দিকে ঘুরে তাকাতেই চারপাশের আলোয় চেহারাটা স্পট বোঝা গেল, ক্ষীণকায় সুঠামদেহী এক নারী; গায়ের বর্ণ কালো, উচ্চতায় ৫ ফুট ছয়ের মতো হবে। জ্যাকেটের কারণে শুধু মুখটাই দেখা যাচ্ছে। পিঠে ব্যাকপ্যাক। অপরপক্ষ থেকে শুধু একটাই শব্দ শোনা যাচ্ছে, ‘সরি, সরি, আই অ্যাম সরি।’ বিনীতভাবে কথাগুলো বললেও কালো নারীটি যেন থামবার পাত্র নন। বিপরীত পক্ষ যতই নমনীয় হচ্ছে, তিনি ততই বিস্ফোরিত হচ্ছেন। দুজনের বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে কালো নারী ইংরেজিতে যা বললেন তার অর্থ দাঁড়ায়, ‘তুমি হয়তো বলবে আমাকে দেখে তোমার মানবিকতা জেগে উঠেছে। মানবতার নামে তোমরা আমাদের ঠকাচ্ছ। শোন, এই নিউইয়র্ক আমাদের পিতামহদের গড়া। তাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে। দিনের পর দিন তারা মাটির নিচে কাটিয়েছে, সূর্যের আলো দেখেনি; মাসের পর মাস আত্মীয় পরিজনের দেখা পায়নি। এই শহর আমাদের তৈরি। নিজেরদের গড়া শহরে এখন আমরাই ভবঘুরে, প্রচণ্ড শীতে আবাসহীন; খাবারের জন্য ফুডশপের সামনে গার্বেজ ব্যাগে খাবার খুঁজতে হয়।’
আমি নিথর দাঁড়িয়ে দূর থেকে দেখছি, আর বোঝার চেষ্টা করছি কী হচ্ছে। গল্পটা এমনই হওয়ার কথা। আমি ভেবেছিলাম এমনই হবে। কিন্তু হয়নি। ইতিমধ্যে মিনিটখানেক সময় পার হয়ে গেছে। হঠাৎ তীব্র চিৎকারে যেন আমার ঘোর কাটল। এতক্ষণ যা শুনছিলাম, সবই কি হ্যালুসিনেশন! বিভ্রম! এ কী করে সম্ভব! আসলে নিউইয়র্কে কালো মানুষগুলো এভাবেই তাদের ক্ষোভ উগরে দেয় গোটা সমাজের প্রতি।
ওপরের এই কথাগুলো অনেকবার শুনেছি, তাই সেটাই গভীরভাবে গেঁথে ছিল আমার মনে। আর রাস্তাঘাটে কালো মানুষদের বেশির ভাগ খিস্তিখেউড়ে, সেই কথাগুলোই প্রতিধ্বনিত হয়। ওদের সবার বক্তব্য যেন একই। ওপরের যে কথাগুলো আমি শুনেছি বলে মনে হয়েছে, সেগুলোর কোনো কিছুই এখন কেউ বলেনি। সবই আমার শ্রুতিবিভ্রম। মাঝেমধ্যেই আমি আপন মনে এমন বিভ্রমে ডুবে যাই। ঘোরের মধ্যে কাটে। আজও কী তবে তা-ই হলো! যাক, হ্যালুসিনেশনের মোড়ক থেকে নিজেকে বের করে এবার ঝগড়ার শেষাংশকে বাস্তবে বোঝার চেষ্টা করছি।
এতক্ষণে খাবার কুড়ানি কৃষ্ণাঙ্গ নারী কালো চিতার মতো ফুঁসে উঠেছেন; চিৎকার করছেন, আর আঙুল নাড়িয়ে বলছেন, ‘ইউ বিচ আর রেসপন্সিবল ফর এভরিথিং।’
তারপর চেহারায় তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা নিয়ে যা বললেন, তার মানে হচ্ছে, ‘তুমি জান কত কষ্ট করে আমি চলছি? তুমি কি জান আমার ছেলেটার বয়স এখন সাত বছর? তার জন্য খাবার নিতে এই তীব্র শীতে আমি এখানে। এক রুমের একটা বেসমেন্টে আমরা মা-ছেলে থাকি। তুমি জান? ও স্কুলে যায়। আমি জানি তুমি এসবের কিছুই জান না। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল তোমার মতো লম্পটকে বয়ফ্রেন্ড করা। যখন আমি প্রেগন্যান্ট হলাম, বিয়ের কথা বলতেই তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে। তারপর পুলিশ, কোর্ট। কোর্টে তুমি অস্বীকার করেছিলে। বলেছিলে, এই সন্তান তোমার নয়। তারপর জেনেটিক টেস্টে তুমি আটকে গেলে। কোর্টের আদেশে প্রতি মাসে যে পরিমাণ টাকা আমি পেতাম, তোমার অ্যাকাউন্ট থেকে একসময় সেটাও বন্ধ হল। কারণ তুমি এখন হোমলেস। ইউ আর ড্রাগ অ্যাডিক্ট। সেল্টার থেকে তুমি পালিয়ে যাও। কারণ, সেখানে থাকতে হলে ভালো হয়ে থাকতে হয়। থ্যাংকস গড, হি সেভড মি ফ্রম ইউ।’
স্প্যানিশ পুরুষটি, কিছুটা কাতর কণ্ঠে বললেন, ‘আই অ্যাম সরি। কিন্তু তুমি কী করে জান, এসব?’
-আমি জানি। কারণ, রিলিজ ইনফরমেশন ফর্মে সাইন করে তুমিই এই অধিকার আমাকে দিয়েছিলে।
কৃষ্ণাঙ্গ নারী এলোপাতাড়ি অশ্রাব্য গালি দিয়ে যাচ্ছেন। পুরুষটি কিছুটা নমনীয়, ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে নারীর দিকে একটু এগিয়ে যেতেই আবার চিৎকার, ‘ডোন্ট ট্রাই টু টাচ মি, আই উইল কল দ্য কপস।’ লোকটা পিছিয়ে যায়। একরাশ সহানুভূতি নিয়ে আরও পিছিয়ে যায়। বড় অসময়ে সহানুভূতি দেখাচ্ছে সে, এই সহানুভূতি এখন মূল্যহীন।
এই ঘটনার একটা সুন্দর সমাপ্তি হতে পারত আপনার-আমার কল্পনার মতো। অনেকটা বাংলা সিনেমায় যা হয়, দুজন দুজনকে জড়িয়ে আবার ফিরে যেতে পারত সংসারে। ছেলেটা পেতে পারত বাবার আদর। কিন্তু তা হয়নি। লোকটা শুধু বললেন, ‘সরি।’ তারপর আস্তে আস্তে পিছু হটে, হেঁটে আড়াল হওয়ার আগেই পুলিশ এসে হাজির! কী অবাক ব্যাপার মহিলা কোন ফাঁকে পুলিশ কল করেছে বুঝতেই পারলাম না। এই এলাকার আশপাশে প্রায় সব সময়েই পুলিশ থাকে। তাই হয়তো দ্রুত চলে এসেছে। পুলিশ এসেই হ্যান্ডকাফ পরিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে। হয়তো অনেক দিন থেকেই খুঁজছে। সন্তানের খরচ না দিলেও এই দেশে জেল খাটতে হয়। কী ঘটনা মুহূর্তে কী হয়ে গেল!
গল্পটা যে এমন হবে, ভাবিনি। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিষয় নিয়ে আমি অনেক দিন থেকেই ভাবছি। কিন্তু তেমনভাবে উত্তর খুঁজিনি বা পাইনি।
এক, রেস্টুরেন্টগুলোতে ‘ক্লোজড’ সাইন ঝুলিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিসপ্লে থাকা সব খাবার ঢেলে দেওয়া হয় গার্বেজ কন্টেইনারে। আমি নিজে দেখেছি বেলা ৩টায় অনেক বুফে রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশন করা খাবারগুলো ট্রে থেকে গলগল করে ঢেলে ড্রামে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আমি হয়তো খাবার তখনো নিচ্ছি সেদিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। রেস্টুরেন্টের কর্মচারীরা খাবার সরিয়ে নিয়ে সোজা ফেলে দিচ্ছে গার্বেজ ব্যাগে। সময় শেষ, খাবার ফেলো, সব পরিষ্কার করো, রেস্টুরেন্ট বন্ধ করো, এটাই নিয়মিত চিত্র। ফেলে দেওয়া এসব খাবার ক্ষুধার্ত মানুষের মাঝে কেন বিলি করা হয় না? অনেক সংগঠন ক্ষুধার্তের জন্য খাবার সংগ্রহের কাজ করছে। তারা রেস্টুরেন্ট থেকে এই খাবারগুলো সংগ্রহ করলেই তো পারে! যেমনটি অনেক সংগঠন করে; বাড়ি থেকে ব্যবহৃত পরিধানযোগ্য পোশাক, ব্ল্যাংকেট, জুতো ইত্যাদি সংগ্রহ করে দরিদ্রদের মধ্যে বিলি করে। কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। নিশ্চয়ই কোনো আইনের বা ব্যবসায়িক মারপ্যাঁচ রয়েছে। এত সাধারণ বুদ্ধি তাদের নেই, তেমনটা ভাবা ঠিক নয়। আমেরিকানরা ডলার চেনে, নিশ্চয়ই এখানে লাভ ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয় আছে। বাণিজ্য আগে, মানবতা পরে।
আমেরিকানদের মধ্যে বিয়ের প্রবণতা কম। বিয়েতে নাকি অনেক খরচ। অনেক দায়িত্ব, আইনের মারপ্যাঁচ বেশি। কিন্তু তাতে কী! সন্তানের দায়িত্ব এড়ানো সম্ভব নয়। আপসে না হলে আছে কোর্ট। পালিয়ে থাকার উপায় নেই, আছে পুলিশ। তারপর রাষ্ট্র দায়িত্ব নেয়। দাম্পত্যকলহ, ডিভোর্সসহ অন্যান্য পারিবারিক সমস্যায় আইনি জটিলতায় পড়তে হয়। অনেকের কাছে তাই লিভটুগেদারই পছন্দ। কিন্তু এতে করে সিঙ্গেল মাদারের সারি ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। আমেরিকাতে বিচ্ছেদের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। বাড়ছে সিঙ্গেল মাদারের সংখ্যা। তাদের জন্য বেশ কিছু আর্থিক সুবিধাও রয়েছে।
পাঁচ বছর বয়সের শিশুরা খাদ্য পায়, যদি তাদের মা-বাবার আয় দারিদ্র্যসীমার মধ্যে থাকে। শেষ পর্যন্ত সিঙ্গেল মাদাররাই লালন-পালন করছে সন্তানদের, কাজ করছে, খরচ চালাচ্ছে, কেউ আবার পড়াশোনাও করছে। এসব চাপের কারণে তৈরি হচ্ছে বাড়তি মানসিক চাপ। ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে এরা প্রথমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে পরিবার থেকে। ভোগবাদী ও শৃঙ্খলহীন জীবনের নামে এদের অধিকাংশই পারিবারিক বন্ধনকে মেনে নিতে পারে না। ক্ষণিকের আকর্ষণে জড়িয়ে যায় লিভটুগেদারের মতো বন্ধনহীন সম্পর্কে। আবেগ মূল্যহীন হয়ে পড়ছে। ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধাই প্রাধান্য পাচ্ছে। কেউ অন্যের অসুবিধা নিয়ে ভাবে না। এরাও হয়তো বড় হয়েছে এভাবেই লাভ-চাইল্ড হিসেবে। রাষ্ট্র এদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে না; এদের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার দায়িত্ব নিচ্ছে। কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেড়ে উঠছে অনাদরে, নানা মানসিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে। এই শিশুরাও বড় হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ফেলে যাচ্ছে একই সমস্যায়। সবাই সময়ের যাত্রী হয়ে পাড়ি দিচ্ছে স্টেশনের পর স্টেশন। কেউ কোনো স্টেশনে নেমে ভিন্নপথের যাত্রী হতে চাইছে না। ফলে সহসা বদলাচ্ছে না পরিস্থিতিও।