শিল্পিত শৈলীর মেধাবী স্বাক্ষর

নতুন আকাঙ্ক্ষা আসে
চলে আসে নতুন সময়
পুরোনো সে নক্ষত্রের দিন শেষ হয়
নতুনেরা আসিতেছে বলে।
বহুলপঠিত ‘নির্জন স্বাক্ষর’ কবিতায় জীবনানন্দের উচ্চারণ, কেবল প্রসিদ্ধ নয়, পাঠকদের ভাবনারও দিকনির্দেশক।
মেয়েটির জন্মের পর নাম যখন সুভাষিণী রাখা হলো তখন, কে জানিত সে আসলেই সু-ভাষিণী হবে।
প্রথম আলোর প্রাণপুরুষ মতিউর রহমান জানতেন, প্রথম আলো প্রথমই থাকবে, দ্বিতীয়-তৃতীয় হবে না। আলোকে বাধা দেওয়া যাবে কিন্তু আটকানো যাবে না।
প্রথম আলো সংবাদপত্র প্রকাশনা শিল্পে নিয়ে এসেছে এক নতুন মোড়।
অভিজ্ঞতা, চিন্তা আর পরিশ্রম, এই তিনটির উন্নত সংমিশ্রণে শিল্প সৃষ্টি হলে, এক সময় শিল্প তার নিজ গুণেই বাজার ও জনপ্রিয়তা তৈরি করে নেয়।
প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের পরিক্রমায় লক্ষ্য করি, মানুষমুখী প্রথম আলোর চরিত্র। গণবিরোধী পত্রিকা কোনো দিন পাঠক হৃদয় জয় করতে পারে না। কত বিচিত্র বিষয়কে নির্ভেজাল শিল্পবোধ ও সৌন্দর্যের প্রতীকে পরিণত করে বৈচিত্র্যের মাধ্যমে আকর্ষক ও পাঠকপ্রিয় করে তোলে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা। কত কত কালপুরুষের বৈচিত্র্যময় শস্য বুকে করে প্রতি শুক্রবার নতুন চরের মতো জেগে ওঠে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা।
আমরা জানি, নক্ষত্রেরাও আলোকহীন হয়। কক্ষপথ থেকে হারিয়ে যায়। বলা বাহুল্য, প্রথম আলো যে আলোহীন হবে না, পাঠকদের প্রান্তর থেকে হারিয়ে যাবে না, তা ধ্রুব সত্যি দিয়ে বলা যায় না। তবে প্রথম আলোর কৃতির প্রাতিস্বিকতা বহুকাল যে তাকে বাঁচিয়ে রাখবে, সে প্রমাণ রচনা করেছে তার নির্ভীক পথচলার বাস্তবতা।
প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকনের পরিশ্রম যত্ন ও নিষ্ঠায়, পত্রিকাটি বাংলাদেশি কমিউনিটির আস্থা অর্জন করেছে ও ঘরে ঘরে সমাদৃত হচ্ছে। উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী একঝাঁক উদ্যমী কর্মী তৈরি ইব্রাহীম চৌধুরীর সামাজিক ও পেশাদারি দায়িত্ববোধের অনুপম নিদর্শন। বাংলা সাহিত্য গবেষক আহমাদ মাযহার প্রথম আলো উত্তর আমেরিকায় যুক্ত হয়ে এখানে শিক্ষিত চোখওয়ালা পাঠক তৈরি করে যাচ্ছেন।
কিশোরবেলায় এ পথে হেঁটে যাব বলে স্বপ্ন দেখতাম। এখন বহু-বহুদূর চলে গেছে সেই পথ। আমরা ব্যাগ-বোঁচকা, র‍্যাকস্যাক-ব্যাকপ্যাক পুত্রকন্যাসহ একদিন ঘর থেকে বের হই। ঠিক যেমন মুসা নবীর কওমগণ পৌঁছেছিল জেরুসালেম।
রাজাহীন রাজপথে মানুষ চাপা দিয়ে সগর্বে ছুটে যানবাহন। বিচারহীনতায় কত প্রাণ ভক্ষণ করে জ্বলন্ত অনল। গরিব জনগণের মৌলিক অঞ্চলটি মরুভূমি হলেও ক্ষমতার দাপটে চলে রক্তপিপাসুদের উল্লাসযাপন। হায়েনা আক্রান্ত হয় শহর-গাঁ। অমানুষের হাতুড়ি ভেঙে টুকরো টুকরো করে মানুষের হাত-পা।
কার হাতের বাঁশিতে কে দেয় ফুঁ-উ। তখন-ঘাড়ের রগ ফুলিয়ে হুংকার দিই—
‘প্রথম আলোকে কইয়া দিমু—এক্কেবারে ফিলিপস বাত্তির লাখান ফকফকা পরিষ্কার কইরা দিব।’
বহুর জন্য যখন কিছু সৃষ্টি হয় তখন তাতে জাতি, ভাষা, বর্ণ, ভূগোল নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার। শনি থেকে বৃহস্পতি কাজে কাজে বাজে বাজে আমাদের শরীর-মন, যখন ঝোল-ঝোল তখন সন্ধানে নামি—
জ্বালাইয়া জ্ঞানের বাতি
কোথায় তুমি আছো রে...
দাও দেখা দাও আমারে...
প্রথম আলো দাও দেখা দাও আমারে।
দুই বছর বয়সী সুঠামদেহী প্রথম আলোর দ্বিতীয় জন্মদিনে, প্রথম আলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা।
আলোর পথযাত্রী প্রথম আলোর কর্মীদের অভিনন্দন। প্রথম আলো দীর্ঘজীবী হোক।