এ যেন আরেক বাংলাদেশ

নিউইয়র্কের বিভিন্ন এলাকায় জনবসতি, চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে বাংলাদেশিরা বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেদের অবস্থান অনেকটাই শক্ত করে নিয়েছে বাংলাদেশি অভিবাসীরা। স্কুল, মসজিদ ও মন্দির নির্মাণেও বাংলাদেশিদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। এই শহরে রয়েছে সাড়ে চার শতাধিক বাংলাদেশি সংগঠন, যার মাধ্যমে দেশি সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রয়েছে।
নিউইয়র্ক নগরের ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন, কুইন্স, ম্যানহাটন, জ্যাকসন হাইটস প্রভৃতি এলাকায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের বসবাস বেশি। জ্যাকসন হাইটসের মতো কিছু এলাকায় গেলে অন্য কোনো দেশের মানুষের উপস্থিতি কদাচিৎ চোখে পড়ে। কাজকর্মে, খোশগল্পে, সভা-সেমিনার, মিটিং-মিছিল, আড্ডায় কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের মালিকানায় সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশি।
জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের পুরোটাতেই বাংলাদেশিদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও লোকেদের পদচারণা। আশপাশের সড়কগুলোতেও তাই। এখানে নতুন কেউ এলে তার বাংলাদেশ বলেই বিভ্রম হতে পারে। কারণ, দিনের ২৪ ঘণ্টাই এখানে দেশি মানুষের আনাগোনা। এখানকার বাসিন্দারা দিনের বেশির ভাগ সময় বাংলায় বলেই কাটিয়ে দিতে পারেন। তাদের ইংরেজিতে তেমন একটা কথা বলতে হয় না। বাংলাদেশিদের উপস্থিতি এই জায়গাটির এমন এক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে যে, অনেকেই প্রাণের টানে ছুটে আসেন এখানে। তাদের কাছে এই বিদেশ-বিভুঁইয়ে এটিই ছোট্ট বাংলাদেশ। ফলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও শহর থেকে অনেকে এখানে বেড়াতে আসেন। আসেন কেনাকাটা করতেও। কারণ দেশি বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া যায় হাতের নাগালেই।
আলবেনি থেকে জ্যাকসন হাইটসে ঘুরতে আসা আলিম উদ্দিন বলেন, ‘এখানে সব দেশি মানুষ; দেশি খাবার। এখানে আড্ডা ও ঘোরার মজাই আলাদা। জ্যাকসন হাইটসে এলে আমার খুব ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে এখানে ঘুরতে আসি।’
শুধু জ্যাকসন হাইটস নয়, ব্রঙ্কসের স্টার্লিং ও এলমহার্স্ট স্ট্রিটজুড়েও শুধু বাংলাদেশ। সকাল-সন্ধ্যা শত শত বাংলাদেশিকে দেখা যায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেনাকাটা করছে, আড্ডা দিচ্ছে। এই অঞ্চলের কোনো কোনো বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের পুরোটায় থাকছেন বাংলাদেশিরা। এখানেও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা ঘুরতে আসেন। মিশিগান থেকে আসা রিয়াজ হায়দার বলেন, ‘ব্রঙ্কসে যখন আসি, তখন আমার মনে হয় আমি আমেরিকায় থাকি না, বাংলাদেশ থাকি।’
ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড ও জ্যামাইকার হিলসাইড অ্যাভিনিউতেও বাংলাদেশিদের জয়জয়কার। সেখানে নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশি মালিকানাধীন টাওয়ার। গড়ে উঠেছে ব্যাপক ব্যবসা-বাণিজ্য। নিত্য প্রয়োজনীয় তরিতরকারি, হালাল মাংস, শাড়ি, থ্রিপিসসহ নানা ধরনের জিনিস হাতের নাগালেই মিলে। সব মিলিয়ে এই সুদূর আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এই নিউইয়র্ক শহর একটি ছোট বাংলাদেশের আবহ নিয়ে হাজির হয়, যেখানে এসে একটু প্রাণখুলে শ্বাস নেওয়া যায়।