ট্রাম্প কি কৃতিত্ব পাবেন?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

চীনকে ঠেকাতে ট্রাম্প যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, এতে তাকে কি কৃতিত্ব দেওয়া যায়? বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের আগের প্রেসিডেন্টরা যা পারেননি, ট্রাম্প সেটাই করে দেখিয়েছেন। চীনকে বশে আনতে টুঁটি চেপে ধরেছেন দেশটির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের। ট্রাম্প–সমর্থকেরা বলছেন, তাঁর নীতিতেই বশ মানবে চীন। বাণিজ্য চুক্তি থেকে লাভবান হবে যুক্তরাষ্ট্র।

দ্য আটলান্টিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করে বিদেশি শত্রুদের তৈরি যন্ত্রাংশ যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাঁর নির্দেশ অনুসরণ করে চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েসহ কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে যন্ত্রাংশ বেচাকেনা করা ও সেবা পরিচালনা করতে পারবে না। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

ট্রাম্পের সমর্থকেরা প্রচার করছেন যে কেবল ট্রাম্পই চীনের ওপর এতটা কঠোর হতে পারেন এবং পেরেছেন। রোনাল্ড রিগ্যান যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পেরেছিলেন, ট্রাম্পকে এখন তাঁর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যে নীতিতে অগ্রসর হচ্ছে, এটাকে তাঁর ‘বিজয়’ বলা যায়।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা বিভিন্ন পণ্যের বিরুদ্ধে শুল্কারোপের বিষয়টি অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমর্থন করছেন। দীর্ঘদিনের দুর্দশার পর একে মার্কিন ব্যবসার জন্য বড় সুযোগ দেখছেন তাঁরা। নিউইয়র্ক টাইমসও বলছে, চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলা চুক্তির বহুমুখী ব্যর্থ প্রচেষ্টার বিষয়টি উল্টে দিয়েছেন ট্রাম্প।

প্রশ্ন উঠছে, চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ‘জয়’ পূর্বসূরিদের চেয়ে পৃথক? যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার সব শর্ত পূরণ না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের আগের অনেক প্রেসিডেন্ট চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ২০০০ সালে স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্কের মর্যাদাও দেওয়া হয়। তাঁরা ভেবেছিলেন, চীনকে বৈশ্বিক ক্লাবের সদস্য করা হলে চীন হয়তো ‘দায়িত্বশীল অংশীদার’ হবে। কিন্তু চীন সুযোগ নিয়ে নিজের পথেই চলছে। তোয়াক্কা করেনি অন্যের নিয়মনীতি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই প্রথম চীনা চ্যালেঞ্জের বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। মার্কিন নীতি তোয়াক্কা না করে চীনের বেড়ে ওঠার বিষয়টিতে প্রক্রিয়াগত চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেছেন তিনি। অন্য কোনো রাজনীতিবিদ তা বুঝতে পারেননি। অভিযোগ উঠেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মেধাস্বত্ব চুরি করছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জোর স্থানান্তর করছে তারা। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলোর সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে না। নিজ দেশের মুদ্রা নিয়ে ষড়যন্ত্র করে বাণিজ্যিক সুবিধা নেওয়ার মতো কাজগুলো করছে দেশটি।

এর আগে ওবামা প্রশাসন চীনকে ১৯ জাতি ট্রান্সপ্যাসিফিক পার্টনারশিপ তৈরি করে নতুন নিয়মে বাঁধার একটা চেষ্টা করেছিল। তবে কোনো প্রেসিডেন্ট চীনের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার সাহস পাননি। কিন্তু ট্রাম্প পেরেছেন। তাঁর কৌশল প্রয়োগ করলে তিনি সফল হবেন—এ বিশ্বাস তাঁর আছে।

ট্রাম্পের বাণিজ্য ও উৎপাদন নীতিমালাবিষয়ক পরিচালক পিটার নাভারোর ভাষ্য, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বাণিজ্য নিয়ে কঠোর হন ও আলোচনা করার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ না নেন, ওই লোকগুলো আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায় না। তাদের কথা বলার কোনো আগ্রহ নেই। কেউ কথা বলতে আসে না। কারণ, তারা লাভবান হচ্ছে আর আমরা লোকসান দিচ্ছি।’

তবে ট্রাম্পের এ কৌশল নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের ‘পাগলামি পদ্ধতি’ তখনই কার্যকর হবে, যখন অপর পক্ষ আলোচনার টেবিলে এসে যৌক্তিক দাবি করবে। তাঁর আচরণ অনেক দেশকে দেনদরবারের টেবিলে এনেছে। কিন্তু এরপর তিনি যে দাবি করেছেন, তা মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। তিনি যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করছেন, তা তাঁর পূর্বসূরিদের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। আগের প্রেসিডেন্টদের মতো মিত্র জোগাড় করে ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে কাজে লাগানোর ধারেকাছে যাননি তিনি। তাঁর প্রশাসনিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে শুল্কারোপ, দক্ষিণ চীন সাগরে স্বাধীন নেভিগেশন, কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আটকে দেওয়া, চীনা নাগরিকদের ভ্রমণ ও গবেষণায় বাধা দেওয়ার মতো বিষয়।

ট্রাম্পের তত্ত্ব হচ্ছে, মার্কিন মজবুত অর্থনীতি চীনকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করবে। তাঁর পদ্ধতি কাজে লাগতে শুরু করেছে। তিনি টুইট করেছেন, ‘তারা হারছে এবং হারবে।’