মুজিব ইরমের কবিতা


ইরম পদাবলি

আমি তো ঋণের বোঝা বহন করেছি। যা কিছু কুড়িয়ে পাওয়া তাই তো রচেছি॥ সেই কবে পদাবলি করে আছে ভর। ‘রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর’॥ রচিতে পারিনি সেই কন্যার বাহান। যার রূপে বান্ধা পড়ে তামাম জাহান॥ মহাজন কবি নাম করি জপতপ। সেই রূপে বান্ধি পদ খুঁজিতে গৌরব॥ বাজারে বাজারে যারা পদ গেয়ে যায়। বাঁধিতে পারিলে গীত কবি আখ্যা পায়॥ আমি তো তাদের মতো হতে চাই বলে। রচেছি পুথির সুর কিছুটা কৌশলে॥ এই ভয় ওঠে মনে এই ভয় ওঠে। না জানি পুথির প্রেমে লোকলজ্জা জোটে॥

মুজিব ইরম কহে ভেবেছি অনেক। শব্দ বিনে জিতে মরা জীবন তিলেক॥ অন্তর শুকায় মোর শব্দ অভিলাষে। ইরমে গাইলো গীত দূর পরবাসে॥

মৌসুমি পয়ার

আগাম গরমে পাকে মালদই আম। আমার হৃদয়ে কাঁপে কার যেন নাম॥ থোকা থোকা কালো জাম গাছে পেকে থাকে। আমিও তুকাই তারে মনে রাখি যাকে॥ আনারস পেকে ধরে হলুদ বরণ। পড়িছে পড়িছে মনে রঙ্গের ধরন॥ লিচুগাছে পাকে লিচু আগুনের রং। আমার মনেতে জাগে করি রঙঢঙ॥ জোড়া জোড়া কামরাঙা রসে ভরা তন। সেও কি আমাকে রোজ করিছে স্মরণ॥ গাছে পাকা আতাফল পাতা ঝরে পড়ে। একাকী ফলের দুখ মনে বড়ো ধরে॥ ঘাটের ওপরে গাছ জলে ঝুঁকে ডাল। কে পাড়িবে জামরুল বেদনার কাল॥ মনে ব্যথা মনে খেদ জীবন অসার। দূরের মানুষ আমি যাতনা অপার॥

ফল ধরে ফল পাকে আসে মাস যায়। ইরমের কাঁদে মন হৃদয় শুকায়॥

পালাকার

বৈদেশে দৈবের বশে বাড়িয়াছে দুখ। পুথি সুরে গাঁথিয়াছি মনের অসুখ॥ পালা বাঁধি পালা গাই হয়ে পালাকার। পুথিকর নাম ধরি নানান প্রকার॥ মেয়েলি গীতের টান মনে জেগে থাকে। ধামালি নৃত্যের তালে মুরালিয়া হাঁকে॥ সূত্রধর নাম ধরি হয়েছি ফতুর। পাঁচালি রচিতে গিয়ে হয়েছি চতুর॥ সেই কবে লিখিয়াছি যাবনী মিশেল। পদাবলি প্রেমে পড়ে হারিয়েছি মেল॥ আড়বাঁশি ভেঙে দিয়ে নিজেরে হারাই। আমি তো কেবল তারে সুরে বেঁধে পাই॥ যে যাতনা পাসরিয়া আনবাড়ি থাকি। সে যাতনা আর কেউ না রাখিও বাকি॥

বেদনা যাতনা রচি জপি দমে দম। বিরচিল এই পদ মুজিব ইরম॥