রাস্তায় মোবাইল ব্যবহার

মানুষ ক্রমশই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। বর্তমান সময়ে এ ছাড়া উপায়ও নেই। আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মেলাতে হলে প্রযুক্তিকে সাদরে গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু এটিই সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যখন তা অতিনির্ভরতার দিকে যায়।

প্রযুক্তি মানুষের পৃথিবীর দূরত্বের ধারণাটি বদলে দিয়েছে। যে বিশ্বগ্রামের ধারণা আজ এত প্রভাব বিস্তার করছে, তার মূলে রয়েছে যোগাযোগ প্রযুক্তির অসাধারণ উন্নয়ন। কিন্তু এই যোগাযোগ প্রযুক্তিই আবার মানুষকে তার পাশের মানুষটি থেকে দূরেও সরিয়ে নিচ্ছে। মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো গেজেট মারফত যোগাযোগ হলেও বাস্তব জগতে সম্বন্ধরহিত থেকে যাচ্ছে মানুষ। স্মার্টফোনের মতো প্রযুক্তি আসার পর বিষয়টি অনেক বেড়ে গেছে। এই প্রযুক্তি মানুষকে সব সময় অনলাইনে সংযুক্ত থাকার সুযোগ এনে দিয়েছে। বিশেষত তরুণেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে  সব সময় যুক্ত থাকছে। এতে অনর্থও ঘটছে অনেক।

স্মার্টফোনের ম্যাসেজ করতে করতে কিংবা গেম খেলতে খেলতে রাস্তা চলতে গিয়ে হরহামেশাই নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, আমেরিকায় প্রতি বছর গড়ে ২৫ লাখের মতো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৫ লাখের সঙ্গেই কোনো না কোনোভাবে যুক্ত সেলফোন। হয় চালক, নয়তো পথচারী সেলফোন ব্যবহার করার সময় পথ চলেন। ফলে অবধারিতভাবেই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনা কেড়ে নিচ্ছে অনেকের প্রাণ।

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত অভিযুক্ত করা হয় চালককে। কিন্তু সম্প্রতি নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন ব্যস্ত নগরীতে পথচারীদের অসতর্ক চলাচলের জন্য প্রচুর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এ প্রেক্ষাপটে এরই মধ্যে আমেরিকার বেশ কয়েকটি শহরে রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন পাস হয়েছে। একই রকম আইন উত্থাপন করা হচ্ছে নিউইয়র্ক নগরেও। আইনটি পাস হলে, রাস্তা পারাপারের সময় কোনো পথচারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে, তাকে ৫০ থেকে ১৫০ ডলার জরিমানা গুনতে হতে পারে।

নগর ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিরাপদ সড়ক। গেল বছর এ নিরাপদ সড়কের দাবিতে বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। সে সময়ও মূলত চালকদের সতর্কতার বিষয়েই মূল মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর জোর ভিত্তি রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে পথচারীদের সচেতনতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সড়ককে নিরাপদ করতে এবার এদিকেই মনোযোগ দিচ্ছে নিউইয়র্ক প্রশাসন। আনা হচ্ছে নতুন আইন, যেখানে অসতর্ক চলাচলের জন্য জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।

নতুন এ আইন নিঃসন্দেহে অনেক ইতিবাচক। এ আইন সড়ককে আরও নিরাপদ করে তুলবে নিশ্চিতভাবে। কিন্তু শুধু এ আইন বা জরিমানার ভয়েই নয়, সবার উচিত নিজের জীবনের সুরক্ষার কথা ভেবেই সচেতন হওয়া। রাস্তা পারাপারে খুব বেশি সময় লাগে না। এটুকু সময় নিজের ডিভাইস থেকে চোখ তুলে সতর্ক হয়ে পথ চলুক সবাই। এতে শুধু প্রাণই বাঁচবে না, বাস্তব জগতের সঙ্গে ক্ষীণ হয়ে আসা যোগাযোগটিও তৈরি হবে।