সংগ্রামীরা আজ অবহেলিত

পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের হাল ধরে রাখার মানুষ ছিলেন হাতে গোনা। এ অবস্থা ছিল মাঠ পর্যায়েও। ক্ষমতায় থাকাকালে সুযোগ সন্ধানীদের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। রাজপথ তৎকালীন সরকারি দলের আয়ত্তে চলে যায়। তারপরও সে সময়ে মাঠের সাহসী সৈনিকেরা কিন্তু হাল ছাড়েননি। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেননি।
তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মরহুম মনিরুল ইসলাম চৌধুরী, যাকে সবাই মনির মামা বলেই ডাকতেন। আশ্চর্য হলেও সত্য, ’৯৬ সালে দল ক্ষমতায় এলেও দুর্দিনের কান্ডারি মনিরুল ইসলামকে মূল্যায়ন করা হয়নি। তাঁর সুযোগ্য সন্তানেরাও বঞ্চিত হয়েছেন রাজনীতিতে।
আশির দশকে সিলেটের রাজপথে জাসদ ছাত্রলীগের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী ছাত্রলীগ নেতার সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। সে সময় রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতা এম সি কলেজ সংসদের এ জি এস তৌহিদ ফিরাত হোসেনের কথা মনে পড়ে। এদের মতো ছাত্র নেতাদের শক্ত অবস্থানেই সিলেট আওয়ামী পরিবারের প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসে। সে সময়ের বৈরী বাস্তবতায় কলেজ সংসদের জি এস পদটি ভাগিয়ে নেওয়া চাট্টিখানি কথা ছিল না। তাঁর সঙ্গে অনেকের নামই আজ মনে পড়ে। মনির মামার ছেলে তোফায়েল চৌধুরী, সোয়েব আদমজী, আমিনুল ইসলাম, শাহরিয়ার কবির, আসাদুজ্জমান পাপলু—এসব ছাত্র নেতার রাজপথ কাঁপানো সময় আজ কেবলই স্মৃতি।
আজ দলের রমরমা অবস্থায় অনেকেই যেন হারিয়ে গেছেন। কেউ চামচাদের জাঁতাকলে পিষ্ট। কেউবা কোনোমতে একটা পদবি নিয়ে টিকে আছেন। এ শুধু একটি জেলা বা অঞ্চলের কথা নয়। খোঁজ নিলে জানা যাবে, প্রতিটি জেলায় সমান সমস্যা। আজ যেমন ক্ষমতার চারপাশে বসন্তের কোকিল, দুর্দিন আসলে ওদের খোঁজে পাওয়া যাবে না।
রাজপথের সৈনিকেরা আজ ছড়িয়ে আছেন প্রবাসেও। দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য আওয়ামী পরিবার এখন কিছু খলিফাদের দখলে চলে গেছে। ক্ষমতা কেন্দ্রের আশপাশে ঘুর ঘুর করা ব্যক্তিদের কোনো দিন দেশে রাজপথে দেখিনি। অবাক বিস্ময়ে এখন দেখি, এখন এরাই নানা সুবিধাপ্রাপ্তিতে এগিয়ে আছে।
হুলিয়া নিয়ে, জীবন বাজি রেখে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করেছিলেন ছাত্রনেতা তৌহিদ। ’৯১ সালে পায়ে গুলি না লেগে যদি বুকের বা পাশ ছিদ্র করে যেত, কার কি ক্ষতি হতো? কোন এক অদৃশ্য কারণে এসব নেতা রাজনীতির মাঠে স্থান করে নিতে পারছে না। সভা সমাবেশে সমাদৃত হলো কি না—এ ভাবনা না করেই তৌহিদরা হাজির হন দলের সভা-সমাবেশে। বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে বিলেতের মতো জায়গায় বহুবার চাকরি হারাতে হয়েছে এমন সাবেক ছাত্র নেতাদের দেখা পাই।
নিবেদিত প্রাণ সাবেক ছাত্রনেতা সুজাত মনছুর, শাহ বেলাল, খসরুজ্জামান খসরু। মুজিব সৈনিক পরিবারে বেড়ে ওঠা এক তরুণ শাহ বেলাল জীবনের মূল্যবান সময় ব্যয় করেছেন রাজনীতির ময়দানে। বিএনপির শাসনামলে যারা ক্রিম বাটার খেয়ে মেদ বৃদ্ধি করেছেন, তারা আজ নিষ্ক্রিয়। অবহেলিত ত্যাগীরাই এখনো মিটিং-মিছিল করে যাচ্ছে।