'ভালো লাগা থেকেই এ শহরে রয়ে গেলাম'

মেয়ের সঙ্গে অনুপ বড়ুয়া
মেয়ের সঙ্গে অনুপ বড়ুয়া

‘পারা আর না পারাতে যোজন যোজন দূর/ হৃদয় ভরা আশা নিয়ে কণ্ঠে বেঁধে সুর।’ ক্লোজ-আপ ওয়ানের থিম গানের শিল্পী অনুপ বড়ুয়া এখন নিউইয়র্কে। আমেরিকায় এসে প্রথম বাসিন্দা হন ডালাসের। কিন্তু সংগীত অন্তঃপ্রাণ এই শিল্পী শেষ পর্যন্ত মুক্ত আকাশ ও এক দারুণ ভালো লাগা থেকে বেছে নেন নিউইয়র্ককেই। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছিল এ শিল্পীর।
প্রথম আলো: আপনি আমেরিকায় কবে এলেন?
অনুপ বড়ুয়া: ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে পারিবারিক ইমিগ্রেশন নিয়ে আমেরিকায় আসি। আসার পর সবকিছু অনেক নতুন ও ভিন্ন মনে হয়েছে। বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই বাংলা মায়ের অনুপস্থিতি অনুভব করেছি ভীষণভাবে।
প্রথম আলো: এখানে এসে কোথার উঠলেন?
অনুপ বড়ুয়া: এখানে আসার পর প্রথম ছয় মাস অ্যারিজোনাতে বড় বোনের বাসায় ছিলাম। অ্যারিজোনাতে বেশি ভালো না লাগায় ডালাসে চলে যাই। সেখানে থেকেছি দু বছরের মতো। ওখানে কিছু ভালো সময় কাটিয়েছি।
প্রথম আলো: এখানকার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
অনুপ বড়ুয়া: এই দেশে এসেই জীবনে প্রথম কাজে যোগ দিই। পরিশ্রমের হলেও বেশ ভালো লেগেছে। বুঝেছি কেন এ দেশ অন্য সব দেশের চেয়ে এগিয়ে। সবকিছুই এখানে নিয়মমাফিক চলে। ভালো লেগেছে কাজের পরিবেশ, লোকজন। কেউ কাউকে অযথা কোনো প্রশ্ন করে না। একেবারে স্বাধীনভাবে মতামত ও চলাফেরা করা যায়।
প্রথম আলো: আপনি তো একজন সংগীত শিল্পী, আমেরিকায় সংগীত চর্চা সম্বন্ধে কিছু বলবেন?
অনুপ বড়ুয়া: সংগীতই আমার জীবন। এ জীবনে আর কিছুই করিনি সংগীত ছাড়া, জানিও না। কাজেই অন্য কাজ করা আর মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই সংগীত-বিষয়ক কিছু করার চেষ্টা করতে থাকলাম। কিন্তু ডালাসে ঠিক তেমন জমল না। আবার ভাবতে শুরু করলাম কী করা যায়। ডালাসে থাকাকালীন ক্যালিফোর্নিয়া, বোস্টন, ওয়াশিংটন ডিসিতে বেশ কিছু অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনা করি। ২০১৬ সালে নিউইয়র্ক থেকে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেলাম শতদল আয়োজিত নজরুল সংগীত সম্মেলনে গান পরিবেশনের জন্য। এ অনুষ্ঠানে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সংগীত পরিবেশন করে দর্শক শ্রোতার মন জয় করলাম।
প্রথম আলো: নিউইয়র্কে কীভাবে এলেন?
অনুপ বড়ুয়া: ওই যে বললাম, নজরুল সংগীত সম্মেলনে গান করি। আর তখনই কেন জানি নিউইয়র্ক শহর আমার খুব ভালো লেগে গেল। মনে হলো, আমার সংগীত চর্চা এখানেই হয়তো সম্ভব হবে। বিশিষ্ট তবলাবাদক তপন মোদক, সাংস্কৃতিক সংগঠক কবির কিরণসহ আরও অনেকের সঙ্গে পরিচয় হলো। তাঁদের প্রায় সবাই এখানে থেকে যেতে বললেন। অজানা ভালো লাগা থেকেই এই শহরে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং আজ অবধি রয়ে গেলাম।
প্রথম আলো: নিউইয়র্কের মতো ব্যস্ত শহরে সবাইকে প্রথমে কম-বেশি সংগ্রাম করতে হয়। আপনার অভিজ্ঞতা বলুন।
অনুপ বড়ুয়া: হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। নিউইয়র্ক এসে শুরুতে ‘অড জব’ করে নিজেকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় রত ছিলাম কিছুদিন। তারপর ধীরে ধীরে সংগীত স্কুল প্রতিষ্ঠা করলাম। আমার সংগীত স্কুলের নাম ‘সুরতীর্থ’। এখন আমার স্কুলে ছোট বড় অনেক শিক্ষার্থী সংগীতে তালিম নিচ্ছেন। উচ্চাঙ্গ সংগীত, নজরুল, রবীন্দ্র, লোক, আধুনিকসহ সব ধরনের গান শেখার সুযোগ রয়েছে এখানে।
প্রথম আলো: আমেরিকায় এসে আপনার কোনো বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে?
অনুপ বড়ুয়া: আমেরিকায় এসে আমার ভালো ছাড়া এখনো কোনো খারাপ অভিজ্ঞতা হয়নি। যা দেখি, সবই ভালো লাগে। বেশি ভালো লাগে আইনের সঠিক প্রয়োগ, নিয়ম-শৃঙ্খলা, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, মানুষের প্রতি মানুষের সম্মানবোধ।
প্রথম আলো: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
অনুপ বড়ুয়া: আপনাকেও ধন্যবাদ।