সরকারি সুযোগ-সুবিধার সন্ধানে

অনেক বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে নানা স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, শহর থেকে অভিবাসীরা পাড়ি জমান আমেরিকায়। কিন্তু আমেরিকায় আসার কয়েক দিন পর বেশির ভাগই বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারেন। অনেকেই বুঝতে পারেন, স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় টিকে থাকা এত সহজ নয়। এর পেছনে রয়েছে নানা কারণ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হলো—ইংরেজি ভাষায় দুর্বলতা, কাজ করতে অক্ষমতা, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উচ্চ দাম। আর তাই অনেকে নিজে চলতে অথবা পরিবার চালাতে হিমশিম খান।
সমস্যা যেমন আছে তেমনি সব সমস্যার সমাধানও আছে। নতুন আসা বাঙালি অভিবাসীদের অনেকেই আমেরিকান সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অবগত নন। জীবনধারণের জন্য আমেরিকান সরকার খাদ্য, চিকিৎসা, আবাসন, শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এ লেখায় এসব সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব, যাতে কেউ পর্যাপ্ত তথ্য না জানার জন্য ভোগান্তির শিকার হন।
প্রথমেই আসা যাক খাদ্যের কথায়। যারা পর্যাপ্ত উপার্জন করতে পারছেন না, তাদের জন্য আমেরিকান সরকার ‘Supplemental Nutrition Assistance Programme’ (SNAP) অথবা বহুল প্রচলিত ‘ফুড স্ট্যাম্প’-এর ব্যবস্থা করে রেখেছে। ফুড স্ট্যাম্প বেনিফিট কার্ডের মাধ্যমে ক্রেডিট অথবা ডেবিট কার্ডের মতো বিভিন্ন স্থানীয় গ্রোসারি দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী কিনে নেওয়া সম্ভব। যার ফলে পরিবারের জন্য খাদ্যসামগ্রী কেনার বোঝা নিজের ওপর থেকে অনেকাংশই কমানো সম্ভব।
আমেরিকার মতো দেশে চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। কিন্তু আমেরিকান সরকার চিকিৎসার জন্য ‘মেডিকেল কার্ড’-এর ব্যবস্থা করে রেখেছে, যার ফলে অনায়াসেই প্রায় বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা নেওয়া সম্ভব। আবার যাদের উপার্জন বেশি হওয়ার কারণে ‘মেডিকেল কার্ড’-এর সুবিধা নিতে পারেন না, তারা আবার পরিবারের শিশুদের জন্য ‘Children’s Health Insurance Programme’ (CHIP)-এর সুবিধা নিতে পারেন। ১৯ বছরের কম বয়সী শিশুরা এ সেবা পাবে।
আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বসবাস করতে গিয়ে আবাসন নিয়ে বাঙালি অভিবাসীরা হিমশিম অবস্থায় পড়েন। এর কারণ উচ্চমূল্যের বাড়ি ভাড়া। বাড়ির আকাশচুম্বী দামের কারণে অনেকে বাড়ি কেনার কথা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেন না। তবে এই সমস্যারও সমাধান রয়েছে। যেসব পরিবার একেবারেই আবাসন খরচ বহন করতে অক্ষম, তাদের জন্য বিভিন্ন সরকারি আবাসন ব্যবস্থার সুবিধা রয়েছে। যার মধ্যে সাবসিডাইজ হাউজিং, হাউজিং ভাউচারস অ্যান্ড পাবলিক হাউজিং প্রোগ্রামস অন্যতম। দ্য ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হাউজিং অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্টের (এইচইউডি) মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানীয় আবাসন এজেন্সি (এইচএ) নিম্ন আয়ের পরিবারকে আবাসন ব্যবস্থার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। যার ফলে আবাসন ব্যবস্থার জন্য আর কোনো চিন্তা করতে হয় না। বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের জন্য রয়েছে ‘হোম ইমারজেন্সি অ্যাসিসট্যান্স প্রেগ্রাম (এইচইএপি)। বিভিন্ন শর্তাবলির ওপর ভিত্তি করে বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল সরকার দিয়ে থাকে যার ফলে এসব খাতে ব্যয় অনেকটাই কমানো সম্ভব।
আমেরিকান সরকার নিম্ন আয়ের পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবেও সাহায্য করে থাকে। অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়ার কয়েকটি উপায় রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি তুলে ধরা হলো টেম্পরারি অ্যাসিসট্যান্স ফর নিডি ফ্যামিলিজের (টিএএনএফ) মাধ্যমে নিম্ন আয়ের পরিবারকে সাময়িকভাবে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়ে থাকে যাতে তারা সাময়িক আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন। পাবলিক অ্যাসিসট্যান্স গ্র্যান্টের (পিএ) মাধ্যমেও নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যরা আর্থিক সাহায্য পেতে পারেন। পর্যাপ্ত উপার্জন করতে ব্যর্থ হলে পিএ-এর জন্য আবেদন করা যেতে পারে।
আবার অনেকেই আছেন বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধার জন্য কাজ করতে অক্ষম। তাদের জন্য রয়েছে সাপ্লিমেন্টাল সিকিউরিটি ইনকাম (এসএসআই), সোশ্যাল সিকিউরিটি ডিজঅ্যাবিলি (এসএসডি)। শারীরিকভাবে কাজ করতে অক্ষম হলে এসব সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ আবেদন করা যেতে পারে।
অনেকেই আছেন অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরির পরও কাজের সুবিধা করতে পারেন না। তাদের জন্য রয়েছে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিটস, যা কাজ না পাওয়ার প্রায় ৭৩ সপ্তাহ পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া রিটায়ারমেন্ট বেনিফিটস (পেনশন) তো রয়েছেই।
ওপরে যেসব সুযোগ-সুবিধার কথা আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ নির্দিষ্ট আবেদন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। আবেদন করার পর আপনি যে মনোনীত হবেন এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আবার এসব সুযোগ-সুবিধার বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। এ লেখায় মূলত কী রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যেতে পেতে পারে, সেসব নিয়ে মোটামুটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
সবশেষে একটাই চাওয়া, বিদেশ-বিভুঁইয়ে যেন আমরা সবাই হাতে-হাত মিলিয়ে চলতে পারি। একে অন্যের বিপদ-আপদে সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারি। আর এসব সুযোগ-সুবিধা শুধু নিজে উপভোগ না করে যাতে অন্যরাও এসব সম্পর্কে অবহিত হতে পারে।