ইরানের ওপরে দোষ চাপাচ্ছেন ট্রাম্প

ওমান উপসাগরে ঢোকার মুখে দুটি তেলবাহী ট্যাংকারের ওপর হামলার ঘটনায় ইরানের ওপর দোষ চাপিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল শুক্রবার ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বাণিজ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ইরানকে দোষারোপ করে আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের আহ্বান জানানো হয়। ওয়াশিংটনের ওই অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

গত বৃহস্পতিবার সকালে ওমান উপসাগরে দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণ ঘটে। ট্যাংকার দুটির একটি মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী ফ্রন্ট অ্যালটেয়ার, অন্যটি পানামার পতাকাবাহী কোকুকা কারেজিয়াস। ফ্রন্ট অ্যালটেয়ার নরওয়ের মালিকানাধীন আর কোকুকা জাপানের মালিকানাধীন ট্যাংকার। বৃহস্পতিবার বিস্ফোরণের পর দুই ট্যাংকার থেকে ৪৪ জন ক্রুকে উদ্ধার করে ইরানি কর্তৃপক্ষ। বিস্ফোরণের কারণ জানা না গেলেও যুক্তরাষ্ট্র এর জন্য দায়ী করছে ইরানকে। এর আগে একটি ভিডিও ক্লিপসের সূত্র ধরে ওয়াশিংটন দাবি করছে, বৃহস্পতিবারের ওই হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জড়িত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের অভিযোগ প্রত্যাখ্যানের দাবি উড়িয়ে দিয়ে ফক্স নিউজকে বলেছেন, ‘ইরানই এটা করেছে। সেখানে ইরানের নৌকা দেখা গেছে, তাই তারাই এটা করছে।’ তিনি এ ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রকাশকৃত একটি ভিডিওর কথা উল্লেখ করেন।

মার্কিন সেনাবাহিনীর সরবরাহ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ইরানি নৌবাহিনীর সদস্যরা জাপানের মালিকানাধীন কোকুকা কারেজিয়াস নামক ট্যাংকার থেকে অবিস্ফোরিত মাইন সরিয়ে নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার বিস্ফোরণের কবলে পড়া দুই ট্যাংকারের এটি একটি। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, হামলার স্থল থেকে আলামত সরানোর চেষ্টার অংশ হিসেবেই এ কাজ করেছে ইরান।

ইরানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওই ভিডিওতে কিছুই প্রমাণ হয় না। তাদের বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ ‘শঙ্কাজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছে তেহরান।

ইরান অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও এ অঞ্চলে তাদের মিত্র সৌদি আরব ও ইউনাইটেড আরব আমিরাত যুদ্ধ বাধানোর পাঁয়তারা হিসেবে এসব করছে।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে শক্ত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যা ইরানের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর জবাবে ইরানের পক্ষ থেকে পারমাণবিক কর্মসূচি জোরদার করার হুমকি দেওয়া হয়। এর আগে তেহরানের পক্ষ থেকে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

এ ঘটনায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন।

রাশিয়া এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেছে, দ্রুত কোনো সমাধানে আসা ঠিক হবে না।

২০১৭ সালের পর থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক অবনতি হতে শুরু করে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়।

ট্রাম্পের আগে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ট্যাংকারে হামলায় ইরানের জড়িত থাকার কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শ্যানন বলেন, আন্তর্জাতিক এ সমস্যা সমাধানে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার কাজ করবেন তাঁরা।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি গতকাল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। তিনি ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করা প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে দেন।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, প্রকৃত প্রমাণ না দিয়ে নাশকতার কূটনীতি করছে যুক্তরাষ্ট্র। তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।