নিউইয়র্কে শেষ হলো বাঙালির বই উৎসব

বইমেলার শেষ দিনে পাঠকদের অটোগ্রাফ দিচ্ছেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। ছবি: প্রথম আলো
বইমেলার শেষ দিনে পাঠকদের অটোগ্রাফ দিচ্ছেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। ছবি: প্রথম আলো

নিউইয়র্ক বইমেলা ও বাংলা উৎসব শেষ। ১৭ জুন শেষ দিনে মেলা বসেছিল জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে।

স্থানাভাবের কারণে এদিন মেলায় স্টলের সংখ্যা ছিল কম। সংগত কারণেই স্টল বরাদ্দ পেয়েছিলেন শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকে আগত প্রকাশকেরা। শেষ দিনটি নির্ধারিত ছিল গ্রন্থ প্রদর্শনী ও বিক্রির জন্য। এ ছাড়া আর কোনো অনুষ্ঠান ছিল না। মেলা শুরু হয়েছিল বিকেল চারটা থেকে।

মেলার শেষ দিনে বইয়ের কিছুটা মূল্যহ্রাস করা হয়েছিল। এই সুযোগটি লুফে নিয়েছিলেন অনেক পাঠক। তাই শেষ বেলায় বই কেনার ধুম দেখা গেছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা লেখক, প্রকাশকদের সঙ্গে উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের এই কয়েক দিনে দেখা, পরস্পর কুশল বিনিময়, আলাপচারিতা, অটোগ্রাফসহ বই ক্রয়-বিক্রয়, নিজের লেখা বই উপহার হিসেবে বিনিময় করতে গিয়ে তৈরি হয়েছে এক অনাবিল বন্ধুত্ব। এ ছাড়া সাহিত্য সেমিনার, বিভিন্ন সাহিত্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ, প্রাতরাশ, দুপুরের খাবার ও চা-পর্বে আনন্দময় সময় অতিবাহিত করতে গিয়ে যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল তাও অনেককেই নস্টালজিক করে তুলেছিল শেষ দিনে। মেলার শেষে অনেককেই দেখা গেছে কার্ড ও ফোন নম্বর বিনিময় করতে। এভাবেই বইমেলা দূরকে কাছের, পরকে আপন করে তোলে প্রতি বছর। চার দিনের এই মিলনমেলা যেন এক টুকরো বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল নিউইয়র্কের বুকে।

এবারের এই বইমেলায় বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয় দিলারা হাশেমকে। ১৫ জুন বইমেলার মূল মিলনায়তনে এই গুণীজনকে পুরস্কৃত করা হয়।

দিলারা হাশেম চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকায় বাস করছেন। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগে।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় নিউইয়র্কের অগ্রগণ্য সংস্কৃতিকর্মী ওয়ালেদ চৌধুরী ও বাংলাদেশের লেখক এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগরকে।

কালি ও কলমের সম্পাদক বেঙ্গল পাবলিকেশনসের কর্ণধার আবুল হাসনাত বলেন, ‘এই যে নিউইয়র্কে এসে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছি, বইমেলায় বাংলা ভাষায় রচিত বই বিক্রি হচ্ছে এটাই তো আমাদের জন্য বিশ্ব জয়ের শামিল। যেভাবে বইমেলাকে কেন্দ্র করে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, মেলার প্রসার ঘটছে এটাকে একটা মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। মা-বাবার হাত ধরে যে নতুন প্রজন্ম আজ মেলায় আসছে, ভবিষ্যতে এরাই প্রবাসে বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখবে। আমাদের সংস্কৃতি চর্চায় এটা নতুন মাত্রা তৈরি করবে বলে আমার বিশ্বাস।’

মেলা কেমন হলো এই প্রশ্নের জবাবে আবুল হাসনাত বলেন, ‘মেলা খুব ভালো হয়েছে। প্রায় ২০ টির মতো প্রকাশনা সংস্থা মেলায় অংশ নিয়েছে। নানা ধরনের, বিভিন্ন লেখকের বই এসেছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক। পাঠক নতুন নতুন বই ও বিখ্যাত লেখকদের পাশাপাশি নতুন লেখকদের সঙ্গেও পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তবে গতবারের তুলনায় বই বিক্রি কিছু কম হলেও ওভার অল ভালো। আমি হতাশ নই, আনন্দিত।’

বইমেলার স্টলের সামনে পাঠক ও লেখকদের ভিড়। ছবি: প্রথম আলো
বইমেলার স্টলের সামনে পাঠক ও লেখকদের ভিড়। ছবি: প্রথম আলো

মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিত সাহা বলেন, ‘বইমেলাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে বাংলা ভাষী বইয়ের লেখক আর পাঠকেরা নিউইয়র্কে এসে সমবেত হয়েছেন। দেখা হয়েছে নিউইয়র্কের লেখক আর পাঠকের সঙ্গে, তাই বইমেলা একাধারে হয়ে উঠেছে মিলনমেলা। আবার অন্যদিকে প্রকৃত পাঠক, যাঁরা বই ভালোবাসেন তাঁরা ঘুরে ঘুরে মেলার চার দিনই এসেছেন। অনেকেই বই কিনেছেন। আনন্দের সঙ্গে কিনেছেন। তবে বইকে অন্য পণ্যের সঙ্গে তুলনা করলে ভুল হবে। বই কেনার জন্য কিছু নির্দিষ্ট লোক আছে। সব মানুষই পাঠক নয়। মেলার সফলতা নিয়ে আমি আনন্দিত ও আশাবাদী।’

এক ধরনের আনন্দ আমাদের ঘিরে ছিল এ কয়েক দিন। আগামী বছরের বইমেলার প্রতীক্ষায় আবারও হৃদয়ে স্মৃতি সঞ্চিত করে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সবাইকে ফিরে যেতে হবে। প্রতি বছর এভাবে বইমেলা যেন বারবার ফিরে আসে—বইমেলা নিয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী কবি রওশন হাসান।

রাকিবা নামের কর্মজীবী এক নারী কাজ শেষ করে মেলায় ছুটে এসেছেন বই কিনতে। হাসিমুখে জানালেন, তিনি তাঁর প্রিয় লেখক আনিসুল হককে একবার দেখবেন আর সুযোগ পেলে তাঁর সঙ্গে ছবি তুলবেন।

মেলার শেষ দিনে অনেকে ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। প্রিয় লেখকের সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত দেখা যায় অনেককে। তবুও এক সময় সব আয়োজন শেষ হয়। যবনিকা টানতে হয় প্রাণের মেলা বইমেলারও।