শেষ হলো দুদিনব্যাপী টরন্টো বইমেলা

দুই দিনব্যাপী টরন্টো বইমেলা শেষ হয়েছে ৭ জুলাই। এদিন চমৎকার আবহাওয়ায় বেলা বারোটায় মেলা শুরু হয়েছে। মেলার শেষ দিনেও বর্ণিল নানা অনুষ্ঠান দিয়ে সাজানো ছিল মেলার সূচি। ডকুমেন্টারি বা প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন দিয়ে শুরু দিনের সূচি। বিষয়বস্তু ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ’। সঞ্চালনা সেলিম এস এইচ চৌধুরী। মধ্যদুপুরে আয়োজন ছিল ছোটদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ সাজ। নতুন প্রজন্মের কচিকাঁচাদের অপূর্ব সাজসজ্জা ও তাদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে।

লেখক জসিম মল্লিকের সঞ্চালনায় আয়োজন হয় ‘উত্তর আমেরিকা নতুন বই পরিচিতি’ অনুষ্ঠান। প্রবাসে সাংবাদিকতা, আশরাফ আলীর সঞ্চালনায় একটি অভিনব অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। উপস্থিত সাংবাদিক সোনিয়া হক, সেলিম চৌধুরী, দেলোয়ার এলাহী, সাংবাদিকতার নানাদিক নিয়ে আলোচনা করেন।

বিকেলে অনুষ্ঠিত হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংগীত পরিবেশন করে দর্শকদের বিমোহিত করেন শিল্পীরা। কবিতা আবৃত্তি করলেন ললিত কণ্ঠস্বর শৈলীর নন্দন বন্ধনীর নির্বাহী পরিচালক মৌ মধুবন্তী, পরিচালক সৈয়দা আমাতুল ফাতেমা ও শাহীন পারভীন। কবিতা ও সংগীতের মূর্ছনায় মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ।

সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে আসেন বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। পরে একই আসরে যোগ দেন কবি আসাদ চৌধুরী, কবি দিলারা হাফিজ, কবি হাসানাত আবদুল্লাহ, লেখক শেলী জামান খান, অনন্যার প্রকাশক মনিরুল হক, অন্বয় প্রকাশের প্রকাশক ও লেখক হুমায়ুন কবীর ঢালী, সন্দেশের প্রকাশক লুৎফুর রহমান চৌধুরী। একই মঞ্চে তখন জমে ওঠে লেখক-প্রকাশক আড্ডা। খোলামেলা আলোচনায় অনুষ্ঠানটি বেশ জমে ওঠে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে প্রকাশক ও লেখকদের আহ্বান করা হয়, তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে মনে ক্ষোভ জমা হয়ে থাকলে নির্ভয়ে তা প্রকাশ করার। প্রাণবন্ত এই আলোচনায় বেশ মন খুলে কথা বলেন মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

আড্ডায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বক্তব্যে বই প্রকাশের আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখকের সঙ্গে প্রকাশকের চুক্তি করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। বাংলা সাহিত্য ও বাঙালি লেখকদের লেখালেখিকে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করার ওপর তিনি জোর দেন। তিনি বাংলা একাডেমির কাছে প্রবাসী লেখক ও তাদের ডায়াসপোরা সাহিত্যিকে মূলধারার সাহিত্যের সঙ্গে সমান মর্যাদা ও মূল্যায়নের দাবি জানান। আড্ডা ও কথোপকথন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লেখক জসিম মল্লিক।

একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ওপর নির্মিত নয় মিনিটের একটি ভিডিও চিত্র ‘বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতা’ প্রদর্শন করা হয়। ভিডিও চিত্রের গানটি লিখেছেন লেখক সাংবাদিক অরপি আহমেদ। গানটির সুর করেছেন শফিক তুহিন। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন শফিক তুহিন, রুমানা ইতি ও কিশোর দাস। ভিডিও চিত্র নির্মাণ করেছেন আবদুল্লাহ চৌধুরী। আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে বইমেলা আরও ব্যাপক ও বিশেষভাবে আয়োজনের আশা প্রকাশ করেন আয়োজকেরা।

সংগীতানুষ্ঠান, ধন্যবাদ জ্ঞাপন, র‍্যাফেল ড্রয়ের ফলাফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে টরন্টো বইমেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।