সাংবাদিক নারী বলে যত আপত্তি

রিপাবলিকান প্রার্থী রবার্ট ফস্টার ও সাংবাদিক ল্যারিসন ক্যাম্পবেল। ছবি: টুইটার
রিপাবলিকান প্রার্থী রবার্ট ফস্টার ও সাংবাদিক ল্যারিসন ক্যাম্পবেল। ছবি: টুইটার

প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার নিয়ে খবর হবে, পাঠক পড়বেন—সেটাই তো স্বাভাবিক! পাঠকের চাহিদা পূরণে প্রতিবেদককেও তাই ছুটতে হয় নির্বাচনী খবরের পেছনে, প্রার্থীর পেছনে। নির্বাচনের এই সময়ের জন্য নির্দিষ্ট প্রতিবেদককে সংবাদমাধ্যমগুলো নিযুক্ত করে খবরাখবর জোগাড়ে। প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়া থেকে শুরু করে প্রার্থীর সঙ্গে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ছুটে চলার ঘটনাও তাই স্বাভাবিকভাবে ঘটে। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হতে যাচ্ছিল। তবে প্রতিবেদক নারী, সেই অজুহাতে সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানালেন এক প্রার্থী। নির্বাচনী সফরে তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে পুরুষ সহকর্মী সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবে বলে সাফ জানালেন ওই প্রার্থী। তা-ও ঘটনাটি ঘটেছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে!

যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী রবার্ট ফস্টার (৩৬) এক নারী সাংবাদিককে তাঁর নির্বাচনী প্রচারের ১৫ ঘণ্টার ‘দীর্ঘ যাত্রায়’ অংশ নিতে দেননি। ল্যারিসন ক্যাম্পবেল (৪০) নামের ওই নারী সাংবাদিককে কোনো পুরুষ সঙ্গী ছাড়া সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ফস্টার। এ ব্যাপারে ফস্টার বলছেন, তিনি এই সময়ে তাঁর বৈবাহিক অবস্থা নিয়ে সন্দেহজনক কোনো প্রশ্ন তুলতে চান না। তাই সতর্কতা হিসেবেই এ কাজ করেছেন।

সিএনএনকে ফস্টার বলেছেন, ‘এটা আমার ট্রাক (নির্বাচনী ট্রাক) এবং এ ট্রাক আমার নিয়মে চলবে।’

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রবার্ট ফস্টার এবং মিসিসিপি টুডের সাংবাদিক ল্যারিসন ক্যাম্পবেল দুজনেরই সাক্ষাৎকার নেয় সিএনএন। ফস্টার তাঁর ধর্ম ও বিশ্বাসের কথা তুলে জোর দিয়ে বলেন, তিনি তাঁর স্ত্রীকে কথা দিয়েছেন একা কোনো নারীর সঙ্গে সময় কাটাবেন না। তিনি খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারক বিলি গ্রাহামের উদাহরণ টেনে বলেন, তিনি (বিলি গ্রাহাম) বলেছিলেন, স্ত্রী নয় এমন কারও সঙ্গে তিনি একা সময় কাটাননি। ফস্টার এ সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের উদাহরণও টেনে বলেন, মাইক তাঁর স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো নারীর সঙ্গে একা খাননি।

ফস্টার বলেন, ‘অনেক সময় লোকজন যখন যা দেখে সেটাই ধরে নেয়। তারা এ নিয়ে কোনো প্রশ্নও তোলে না। সত্য খোঁজারও চেষ্টা করে না। তাই আমি কাউকে কোনো সুযোগ দিতে চাই না।’ তিনি হ্যাশট্যাগ মিটু আন্দোলনের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে পুরুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। কোনো নারী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারে এমন পরিস্থিতিতে আমি পড়তে চাই না।’

তিনি কোনো পুরুষ সাংবাদিককে ১৫ ঘণ্টার দীর্ঘ নির্বাচনী প্রচারে সাক্ষাৎকার দেবেন কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার অবস্থানেই আছি।’

এর আগে বহুবার ফস্টারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ল্যারিসন। তিনি এ ঘটনা নারীর প্রতি বৈষম্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, নিজের নিয়মে চলতে হলে ফস্টার সঙ্গে একজন পুরুষ সহচর রাখার ব্যবস্থা করতে পারতেন। তবে ফস্টার বলছেন, তাঁর নির্বাচনী দল এতটাই ছোট যে পুরুষ সহচর রাখা সম্ভব না।

ল্যারিসন ফস্টারের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনি যা বলছেন তাতে মনে হচ্ছে, নারী প্রথমে একটি যৌনবিষয়ক বস্তু এবং এরপর সাংবাদিক।’ তিনি আরও বলেন, গভর্নর কার্যালয়ে অনেক নারী কর্মী রয়েছেন। তাহলে ফস্টার তাঁর ভোটারদের কীভাবে বলবেন যে তিনি একজন ভালো গভর্নর। তিনি তো এক কক্ষে কোনো নারীর সঙ্গে একা থাকবেন না।

ফস্টারের পক্ষে অনেকে যুক্তি দিয়ে বলছেন, এটা কর্মক্ষেত্রে পেশাদারির বিষয়। তবে অনেকেই এটাকে নারীর প্রতি বৈষম্য এবং পেশাদারি কাঠামোয় নারীর প্রতি অবিচার বলে সমালোচনা করেছেন।