তিন বিমানবন্দর অচল করে দেওয়ার হুমকি

নিউইয়র্কের ক্যাব চালকেরা এয়ারপোর্ট অচল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। পেশাদার ড্রাইভার বা চালকেরা পোর্ট অথোরিটির নতুন পিকআপ ও ড্রপঅফের জন্য নতুন করে বাড়তি চার ডলার ফি আরোপের প্রতিবাদে ধর্মঘটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে সব ধরনের ক্যাব, উবার, লিফ্টসহ অ্যাপসভিত্তিক ড্রাইভারদের প্রতি যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স।

নিউইয়র্ক নগর এলাকার তিনটি এয়ারপোর্ট লাগার্ডিয়া, জেএফকে ও ন্যুয়ার্ককে অচল করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেছে নিউইয়র্ক সিটি ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স।

সম্প্রতি পোর্ট অথোরিটি কর্তৃপক্ষ ট্যাক্সি ক্যাব, উবার, লিফ্টসহ সব ধরনের ফর-হায়ার ড্রাইভারদের ওপর এয়ারপোর্ট পিকআপ ও ড্রপঅফে প্রতি ট্রিপে আরও চার ডলার করে সারচার্জ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে ম্যানহাটনে আড়াই ডলার কনজেশন সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। এর ওপর নতুন চার ডলার সারচার্জ নতুন সংযোজন।

ইয়েলো ক্যাবের রেভিনিউ ৩৬ শতাংশ নেমে গেছে। ট্যাক্সি-পরিবহন সেক্টরের দৃশ্যমান নাজেহাল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরনের ফি আরোপের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী বলে মনে করা হচ্ছে। কয়েক যুগ ধরে এয়ারপোর্টগুলোকে যাত্রী পরিবহন করে সতেজ রেখে আসছিল ট্যাক্সিক্যাব সেক্টর। একে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে নিউইয়র্ক স্টেট লেভেল থেকে একটা গোপন পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্সের এক বিবৃতিতে দাবি করেছে। 

ড্রাইভাররা বিপদে আছে জেনেও সমাধান বের করা তো দূরের কথা, উল্টো তাদের বিরুদ্ধে যথারীতি যুদ্ধে নেমেছে পোর্ট অথরিটি। অ্যালায়েন্স বিবৃতিতে হুমকি দিয়ে বলেছে, ‘আমরাও এর মোকাবিলা করতে যুদ্ধে নামব!’ সময়মতো নির্দেশনা আসলে এয়ারপোর্টগুলোকে অচল করে দেওয়ার জন্যও ড্রাইভারদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

পোর্ট অথোরিটির এই ফি বৃদ্ধি মূলত কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিককালের ব্রিজ, টানেল টোল ও এর আওতাধীন ট্রেন, ট্রানজিটের ভাড়া বৃদ্ধির অংশ হিসেবে করা হয়েছে। তারা বলেছেন, ন্যুয়ার্ক এয়ারপোর্টে নতুন টার্মিনাল, এয়ারট্রেন সংযোজনসহ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্পে ও ২০০ মিলিয়ন ডলারের প্যাথ ট্রেন সম্প্রসারণ প্রকল্পে ব্যয় হবে এই ফি বৃদ্ধির টাকা।

উবার ও লিফ্ট কর্তৃপক্ষ এই প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছে। উবারের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা সব সময় পোর্ট অথোরিটির সঙ্গে মিলেই কাজ করতে চাই। কিন্তু যাত্রীরা এটা জানতে চান—এত শত মিলিয়ন ডলারের নতুন ফি সংগ্রহের পর তা প্রকৃতই যাত্রীসেবায় কাজে লাগছে। বরবাদ হচ্ছে না।’

পুরো বিষয়টি নিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে যে গ্রুপটাকে গণ্য করা হয়, সেই ড্রাইভাররা কী ভাবছে, তা নিয়ে কারও তেমন মাথা ব্যথা নেই। রিপোর্টটি পড়ার পর কয়েকজন ক্যাবচালক ও উবার ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তারা বেশ ক্ষুব্ধ। ড্রাইভারদের প্রায় সবাই এই বিষয়ে একমত যে, নিউইয়র্ক স্টেট, পোর্ট অথোরিটি অথবা উবার-লিফ্ট বা যেকোনো অ্যাপসভিত্তিক কোম্পানিই হোক না কেন—কেউই ড্রাইভারদের অধিকার নিয়ে চিন্তা করে না।

ওজোন পার্কের মাসুদ রহমান নামের একজন ক্যাব ড্রাইভার তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বললেন, ড্রাইভাররা অধিকার বঞ্চিত হলে অথবা মানবেতর জীবনযাপন করলে যেন কারও কোনো দায় নেই। এমনকি পেশাগত সংকটে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেও এই নিয়ে কারও কোনো উদ্বেগ আছে বলে মনে হয় না। থাকলে অবশ্যই বারবার লাগামহীন ফি বৃদ্ধির মতো অপরিণামদর্শী কাজ করা হতো না। ড্রাইভারদের প্রতি অমানবিক সিদ্ধান্ত নিতে সব মহল বিরত থাকলে ক্যাব ইন্ড্রাস্টিটাও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেত।

বাংলাদেশি ক্যাবচালক আহমেদ হোসেন বলেন, ‘ড্রাইভারদের স্বার্থে কথা বলার যেহেতু কেউ নেই, সুতরাং নিজেরাই নিজেদের কথা বলতে হবে। সংগঠিত হয়ে এবং সংঘবদ্ধভাবে আমাদের প্রতিবাদের আওয়াজ নিউইয়র্ক সিটি, স্টেট, টিএলসি, উবার-লিফ্টসহ সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। প্রয়োজনে এই নতুন চার ডলার এয়ারপোর্ট ড্রপঅফ-পিকআপ ফি প্রতিরোধ করতে নিউইয়র্কের তিন এয়ারপোর্টকে ধর্মঘটে অচল করে দিয়ে এর প্রতিবাদ করতে হবে।

আবদুল্লাহ নামের আরেক উবার ড্রাইভার যিনি এষ্টোরিয়ায় থাকেন, তিনি অবশ্য ভিন্ন ধারণা পোষণ করেন। আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স যে ড্রাইভারদের পক্ষে আন্তরিকভাবে কাজ করবে তা পরীক্ষা করে দেখার সময় এসেছে। আসলে সময় এসেছে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটা নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠন করার। যেখান থেকে আমরা নিজেরাই নিজেদের জন্য লড়তে পারব। বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে পারব।’