যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের সম্মেলন এবার হচ্ছে!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিউইয়র্কে এবার ব্যাপকভাবে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের সংবর্ধনাকে বর্ণাঢ্য করতে যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ২২ সেপ্টেম্বর ম্যানহাটনের হোটেল হিলটনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এ জন্য হল বুকিংও দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। জ্যাকসন হাইটস থেকে ব্রুকলিন পর্যন্ত তাঁদের দৌড়ঝাঁপ সরগরম। তবে প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিবাদ-বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ উঠছে। তবে দলীয় প্রধানের সংবর্ধনা সফল করতে সবাই একযোগে কাজ করার কথাও বলছেন।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে আসছেন। তাঁর সফরসঙ্গী বা সফরসঙ্গীদের তালিকা এখনো পাওয়া যায়নি। প্রতিবারই প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নিউইয়র্ক বিশাল বহরের আগমন ঘটে। অনেকে নিজ ব্যয়ে এ সময়ে নিউইয়র্কে আসেন। অনেকেই আসেন নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ দেখানোর জন্য, কেউ কেউ নিছক ঘোরাঘুরি করতে আসেন।

সংবর্ধনা আয়োজনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নেতা–কর্মীদের নিয়ে মাঠে নেমে গেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ। প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগ শুরু করেছেন সংবর্ধনা সফল করার লক্ষ্যে। সভাপতি সিদ্দিকুর বলেছেন, ‘নেত্রীর সংবর্ধনা সফল করার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করব।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অসম্মান করার কোনো চেষ্টা করা হলে তার দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে।

দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের সম্মেলন না হওয়ায় বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। প্রতিবারই এ নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এবারও সভাপতির বিরোধী পক্ষ সম্মেলন নিয়ে সরব হতে শুরু করেছে।

দলের জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েছ আহমেদ বলেন, সম্মেলন করা, নতুন কমিটি করার ন্যায্য দাবি পাশ কাটানোর কোনো সুযোগ নেই। কোনো ব্যক্তি বিশেষের পছন্দ–অপছন্দ দূর করা সংগঠনের স্বার্থেই প্রয়োজন এবং বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের উচ্চপর্যায়ে আলাপ–আলোচনা চলছে।

কাজী কয়েছ বলেন, ‘২০২০ সালে টাইম স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীউদ্‌যাপন, নেত্রীর সংবর্ধনা ও যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের শূন্যপদ পূরণের ইস্যুগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ মুহূর্তে দলের সব নেতা–কর্মীকে ঐক্য ও সংহতি ধরে রাখার আহ্বান জানান তিনি।

প্রচার সম্পাদক হাজি এনামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, সেপ্টেম্বরে নেত্রী নিউইয়র্কে আসলে সম্মেলনের সম্ভাবনা আছে।

উপদেষ্টা প্রদীপ রঞ্জন করের নেতৃত্বে একটি পক্ষ সম্মেলনের দাবিতে নিয়মিত প্রতিবাদ সভা করে আসছে। এই পক্ষের চরম ক্ষোভ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের ওপর। তারা বলছে, সিদ্দিকুর রহমান নতুন চালে আছেন। অনেককেই পদ–পদবি দিয়ে মুখ বন্ধ করে নিজের অবস্থান নিশ্চিত রাখার টেষ্টা করছেন। নিজের ইচ্ছামতো পদ সৃষ্টি করার অভিযোগ আনেন তারা।

আওয়ামী লীগের বিরোধ এখন শুধু জ্যাকসন হাইটসে সীমাবদ্ধ নয়। ফজলুর রহমান ও মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একদল এখন ঢাকায় আছেন। দলের মধ্যে গুজব আছে, এই পক্ষ ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্দিকুর রহমান, মিজান চৌধুরী ও আবুল কাশেম গংদের চেয়ে পিছিয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট টাওয়ারের ব্যবসা পাওয়া ও সামাল দেওয়ার জন্য দলের দলাদলিকে কাজে লাগাচ্ছেন অনেকেই। যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা-কর্মীরা সব পক্ষের নেতা–কর্মী ওপরই ক্ষুব্ধ।

এদিকে নিউইয়র্কের একটি পত্রিকা ইঙ্গিতপূর্ণ শিরোনাম করে দুজন সরকারি কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব ঠিক করে দেওয়ার কথা বলেছে। এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান। বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান দেশ রত্ন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নিজ হাতে গড়া সংগঠন যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের সরকারি কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি ও নিউইয়র্ক কনস্যুলেট অফিস কর্মকর্তাদের নামে বিএনপি–জামায়াত সমর্থিত একটি পত্রিকায় অপপ্রচার চালানো হয়েছে। যারা অতীতে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তাদের ঘৃণ্য অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই । বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করার লক্ষ্যে বিশেষ করে প্রবাসে বিভক্তির পক্ষ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। দেশে–বিদেশে জনগণের সেবা ও কল্যাণে কাজ করুন।’

ড. সিদ্দিক দাবি করেন, পত্রিকাটি অতীতে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে মনগড়া মিথ্যা খবর প্রকাশ করেছিল যা এ দেশের আদালতে প্রমাণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। এ ছাড়া কতিপয় চিহ্নিত ব্যক্তি আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী পরিবারের নামে দলের ভেতরে থেকে দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। অতীতে এরাই নর্থ আমেরিকা আওয়ামী লীগ নামে সংগঠনের জন্ম দেয় যা দলীয় প্রধানের নির্দেশে বিলুপ্ত করা হয়।’

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগ আজ ঐক্যবদ্ধ, আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা–দ্বন্দ্ব নেই। সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ভাঙিয়ে নয় বরং তাঁর পরামর্শক্রমে আমরা দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য কমিটি গঠনের নির্দেশ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন, যা ইতিমধ্যে সফলভাবে শেষ হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কথা বলা হচ্ছে। আমরা সব সময় বলে আসছি, শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়া মাত্রই তাঁর উপস্থিতিতে নতুন কমিটি হবে।

যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, আমাদের বিএনপি–জামায়াতের অপপ্রচার ও বাধা অতিক্রম করে সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনাকে সর্বাত্মকভাবে সফল করতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।