জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লেখক-সাংবাদিক রিতা

নিউইয়র্কের বইমেলায় এইচ বি রিতা (ডানে)। প্রথম আলো ফাইল ছবি
নিউইয়র্কের বইমেলায় এইচ বি রিতা (ডানে)। প্রথম আলো ফাইল ছবি

এইচ বি রিতা, আমার বন্ধু, সহকর্মী। অনলাইনে ‘ডার্ক এভিল’ নামে তিনি পরিচিত, সমাদৃত। কথায় বলে সৃষ্টিশীল মানুষেরা একটু খেয়ালি হয়। রিতাও তেমনি খেয়ালি একজন মানুষ। তাই তিনি নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতেই ভালোবাসেন। স্কুলের চাকরি, লেখালেখি ছাড়াও তিনি নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন মানবসেবা তথা সমাজসেবায়। কারও আপদে-বিপদে আমরা যখন হাত গুটিয়ে বসে থাকি, নয়তো নিরাপদ দূরত্ব সরে দাঁড়াই অথবা ভাবি, ‘আমার কিইবা করার আছে?’ তখন রিতা আদাজল খেয়ে বিপন্ন মানুষটির পাশে দাঁড়ায়, তাকে সাহায্য করার সর্বতো চেষ্টা চালায়।

আমরা সুবিধাবাদী মানুষেরা দূর থেকে রিতার এসব কাণ্ডকারখানা দেখে পাগল বলি। তার এসব পাগলামির জন্যই অনেক মানুষ বিপদমুক্ত হয়, রোগে চিকিৎসা পায়, অভাবে অন্নবস্ত্রহীন মানুষ অর্থ সাহায্য পায়। তারই তৈরি এমনি একটি প্রতিষ্ঠান হলো ‘থিংকিং অব দ্য হিউম্যানিটি’। নিজে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থেকেও তাঁর মতোই লিউপাস রোগে আক্রান্ত মৌসুমীর চিকিৎসা আর তাকে বাঁচানোর জন্য অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। অবশেষে মানুষের সহযোগিতার অভাব, সুদূর বাংলাদেশে এই রোগের চিকিৎসার অভাবে মৌসুমীর মৃত্যু হলে ভেঙে পড়েছিলেন রিতা। মানুষের হৃদয়হীনতা তাঁকে দুমড়ে দিয়েছিল।

সেই রিতা এখন নিজেই হাসপাতালের বিছানায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আছেন লাইফ সাপোর্টে। শনিবার স্বামীকে চিনতে পেরেছেন। কিন্তু এখন আর চিনতে পারছেন না। তাঁর স্বামী জানালেন, এখন রিতার সেন্স নেই। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর লিভার কাজ করছে না। অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন।

নানারকম ঝুটঝামেলা, স্কুলের কাজ, দুটি ছেলে আর মাকে নিয়ে ঘর-সংসার সামলে এইচ বি রিতা প্রায় সময়ই হাঁপাতে হাঁপাতেই প্রতি বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর আড্ডায় এসে হাজির হতেন। এই আসার জন্য কেউ তাঁকে দিব্যি দেয়নি, কেউ বলেনি আসতেই হবে। তবুও তিনি আসতেন। কখনো না আসতে পারলে খুব অনুশোচনায় ভুগতেন। খাবারের প্যাকেট বা গরম কফির ট্রে হাতে কড়া রোদ্দুরে, বৃষ্টি বা বরফ ভেঙে তিনি আড্ডায় আসতেন। সবার আগে, সেরা রিপোর্ট লেখার একটি তাড়া যেন তাকে তাড়িত করত। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি শুধু প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার একজন প্রিয় লেখক-সাংবাদিক হয়ে উঠেছিলেন।

লড়াকু রিতা, আমরা প্রথম আলো পরিবারের সদস্যরা মনেপ্রাণে চাই, রিতা, তুমি এই লড়াইয়ে জিতে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসো। তোমার মতো কিছু কর্মোদ্যমী আমাদের বড় প্রয়োজন। ফিরে এসে রিতা, আমরা তোমাকে ভালোবাসি!