ধিক্কার কুড়াচ্ছেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন কংগ্রেসের চার নারী সদস্যকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যকে বর্ণবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন ডেমোক্রেটিক রাজনীতিকেরা। প্রথমে নীরব থাকলেও ট্রাম্পের নিজের দলের সদস্যরাও ক্রমে তাঁর সমালোচনায় সোচ্চার হচ্ছেন। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতি নিন্দাজ্ঞাপন করে একটি প্রস্তাব এ সপ্তাহেই কংগ্রেসে উত্থাপন করা হবে।

বিতর্কের শুরু গত রোববার, ট্রাম্পের একাধিক টুইট থেকে। এতে ট্রাম্প বলেছিলেন, যে চার নারী কংগ্রেস সদস্য আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি অসন্তুষ্ট, তাঁদের উচিত হবে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়া। সেসব দেশের জঞ্জাল সাফ করার পর আমেরিকায় ফিরে এসে তাঁরা যেন জানান, এ দেশে কী করা দরকার।

গতকাল সোমবার ট্রাম্প নিজের বক্তব্য পুনরুল্লেখ করে বলেন, এঁরা চারজন কমিউনিস্ট, আমেরিকাকে তাঁরা ঘৃণা করেন। আমেরিকাকে এতই যখন অপছন্দ, তাঁদের উচিত হবে নিজের দেশেই ফিরে যাওয়া।

চার নারী কংগ্রেস সদস্য হলেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-করতেস, আইয়ানা প্রেসলি, রশিদা তালিব ও ইলহান ওমর। তাঁদের প্রথম তিনজন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন। শুধু ইলহান ওমর ছোটকালে সোমালিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি যথাসময়ে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন।

গতকাল এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চার নারী কঠোর ভাষায় ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন।

ওকাসিও-করতেজ বলেন, ট্রাম্প নিজের অনুসৃত নীতি সমর্থন করতে অক্ষম। তাই তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছেন। তাঁরা ট্রাম্পের টোপে পা দেবেন না।

ইলহান ওমর বলেন, ট্রাম্প এই মুহূর্তে সীমান্ত এলাকায় আশ্রয়গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলছেন। শিশুদের মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাদের শৌচাগার থেকে পানি পান করতে বাধ্য করছেন। এসব থেকে দৃষ্টি সরানোর জন্যই এমন নগ্ন বর্ণবাদী বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।

আইয়ানা প্রেসলি বলেন, যে দুর্নীতিপরায়ণ ও বিশৃঙ্খল প্রশাসনের নেতৃত্ব ট্রাম্প দিচ্ছেন, তা থেকে রক্ষা পাওয়ার একটাই পথ, আর তা হলো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু।

ট্রাম্পের বর্ণবাদী বক্তব্যের পর অভিশংসনের দাবি আরও জোরদার হবে, তাতে সন্দেহ নেই।

স্পিকার পেলোসি অবশ্য আপাতত সে পথে না গিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের নিন্দাজ্ঞাপন করে অবিলম্বে একটি প্রস্তাব উত্থাপনের কথা ঘোষণা করেছেন। জানা গেছে, এ প্রস্তাবে ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘বর্ণবাদী’ আখ্যা দিয়ে বলা হবে, তাঁর লক্ষ্য আমেরিকার নাগরিকদের বিভক্ত করা। অশ্বেতকায়দের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করা।

পেলোসি কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যদের এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

নিজ দলের সদস্যদের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে পেলোসি বলেছেন, ট্রাম্প ন্যক্কারজনক ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত। কিন্তু এবার তিনি নিজের সেই নীচতাকেও ছাড়িয়ে গেছেন।

পেলোসি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলছি, তাঁর (ট্রাম্প) এই কুৎসিত আক্রমণের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর প্রতিবাদ জানাব।’

কংগ্রেসের দু-চারজন রিপাবলিকান সদস্য ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তবে সিনেটের রিপাবলিকান নেতা ম্যাককনেল এখনো টুঁ শব্দটি করেননি।

সিনেটের মধ্যপন্থী হিসেবে বিবেচিত কয়েকজন সদস্য—যেমন: মিট রমনি, লিসা মুরকাউস্কি ও সুসান কলিন্স—ট্রাম্পের বক্তব্যের মৃদু সমালোচনা করেছেন। তবে তাঁদের কেউ ট্রাম্পকে বর্ণবাদী আখ্যা দেননি।

যে চারজন কংগ্রেস সদস্যকে আক্রমণ করে ট্রাম্প বক্তব্য দিয়েছেন, ভিন্নমতের কারণে নিজ দলের ভেতরেই তাঁদের ব্যাপারে ডেমোক্রেটিক নেতৃত্ব অসন্তুষ্ট ছিল। এখন ট্রাম্পের বক্তব্যকে ঘিরে দলের নেতৃত্ব ও সদস্যদের মধ্যে ঐক্যের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

তবে ট্রাম্পের অভিশংসনের প্রশ্নটি পেলোসির জন্য শিরপীড়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে। দলের এক-তৃতীয়াংশ কংগ্রেস সদস্য অবিলম্বে ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে আগেই মত দিয়েছেন। ট্রাম্পের বক্তব্যের পর এই সংখ্যা বাড়তে পারে।

টেক্সাস থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেটিক সদস্য আল গ্রিন জানিয়েছেন, তিনি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোনো সন্দেহ নেই, ট্রাম্প একজন বর্ণবাদী ও ভয়ানক মিথ্যাবাদী মানুষ। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য, এ কথা বললে খুব কমই বলা হয়।

পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ২০২০ সালের নির্বাচনী রণকৌশল হিসেবে ভেবেচিন্তেই ট্রাম্প নগ্ন বর্ণবাদী ভাষায় নারী ও অশ্বেতকায় কংগ্রেস সদস্যদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণিয়েছেন।

২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান অস্ত্রই ছিল অভিবাসনবিরোধী অবস্থান ও অশ্বেতকায়দের প্রতি প্রবল নিন্দা। এবারেও তিনি ‘আমরা বনাম বহিরাগত’—এই রণনীতি অনুসরণ করছেন। এই কথা উল্লেখ করে স্পিকার পেলোসি বলেছেন, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য আমেরিকাকে পুনরায় মহান করা নয়, আমেরিকাকে আবার শ্বেতকায়দের আবাসভূমিতে রূপান্তর করা।