জর্জনামা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

গরম পড়লে মার্কিন সহকর্মী জর্জের আচরণ রীতিমতো পাল্টে যায়। তাঁর নিত্যদিন বলা কৌতুক আরও শাণিত হয়ে উঠে। কোনো কোনো সময় আপাত দুর্বোধ্য কৌতুক না বুঝেই হাসতে শুরু করি। হাসার জের ধরে জর্জ নিজেও হাসেন। হাসি শেষ হলে ধাতস্থ হই। আবার হাসি। এবার জর্জ টের পান, ধরতে পেরেছি। পিট চাপড়ে তিনিও হাসিতে গড়িয়ে পড়েন।

তীব্র দাবদাহে পুড়ছে আমেরিকার উত্তর পূর্বাঞ্চল। জর্জ সেলসিয়াস বোঝেন না। আমি বলি, আজ নিউজার্সি আর ঢাকার তাপমাত্রা সমান। ৮৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট। গরম দেশের মানুষ বলে জর্জ প্রায়ই মোটা বুদ্ধির মানুষ হিসেবে খোঁচা দেন আমাকে। আমি বলি, জর্জ, সহসাই তাপমাত্রা ১১০ ফারেনহাইটে পৌঁছাবে।

—তাহলে এটা তোমার সেলসিয়াসে বদলে ফেল।

দ্রুত হিসেব করে জানিয়ে দিই সেলসিয়াসে তাপমাত্রাটি ৩২ ডিগ্রি হবে।

—সেই ভালো। এই নম্বরটি অনেক সহনীয়! এই কথা বলে জর্জ হাসতে থাকেন। হাসির ঝিলিকের মধ্যেই আমাকে সিএনএনের একটা নিউজ দেখান।

ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের ব্রেইন্ট্রি নগরীর পুলিশ দাবদাহের কারণে এক ভিন্ন ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছে। পুলিশ অপরাধীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে, দাবদাহ চলাকালীন সময়ে যেন তারা কোনো অপরাধ করা থেকে বিরত থাকেন। ফেসবুক বার্তায় পুলিশ বলেছে, এ গরমে কেউ যেন মন্দ কিছু করা থেকে বিরত থাকে। তীব্র গরমে অপরাধমূলক তৎপরতা বিপজ্জনক উল্লেখ করে পুলিশ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সোমবার দাবদাহ সহনীয় হলে দেখা হবে বন্ধুরা!

দাবদাহ হলে বা টানা বরফ পড়লে অবধারিতভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে আলোচনা চলে আসে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব বিশ্বাস করেন না। প্যারিস চুক্তি থেকে তিনি বেরিয়ে এসেছেন। বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে উদ্বিগ্ন আমেরিকার উদারনৈতিক আর ডেমোক্র্যাটদের উদ্দেশ্যে গত শীতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, বাইরে শীতে মানুষ কাঁপছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শীত আরও বাড়বে। কারা বলে উষ্ণতা বাড়ছে? বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ধান্দাবাজদের প্রচারণা বলে মনে করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

জর্জ জানালেন, ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় কোনো পত্রিকায় দেখেছেন রাজধানীর ৬৯ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন বৈশ্বিক উষ্ণতা সঠিক। এর মধ্যে কোনো ধানাই পানাই নেই।

জর্জ প্রশ্ন করলেন, তুমি কী বলতে পার বাকি ৩১ শতাংশ কেন তা বিশ্বাস করে না।

আমি ফোনের মধ্যে অহেতুক খোঁজ করতে শুরু করি।

—আরে বোকা, বাকি ৩১ শতাংশ হোয়াইট হাউসে কাজ করে।

তীব্র গরমে ট্রাম্পকে নিয়ে বিকেলটি জমে উঠছে দেখে আগ্রহী হয়ে উঠলাম। এবারে জর্জ শুরু করলেন বেশ আয়েশের সঙ্গে।

ইংল্যান্ড সফরকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে রানির সঙ্গে চা চক্রের আমন্ত্রণ জানানো হয়। রানি কীভাবে নিপুণভাবে সাম্রাজ্য চালান, পেছনে কী দর্শন কাজ করে-ট্রাম্প জানতে চান। রানি জানান, একদল বুদ্ধিমান লোক তাঁর পাশে থাকেন। প্রশ্ন করি, তাঁদের বুদ্ধিমত্তাটি জেনে নিই তাঁরা কেমন উত্তর দেয় তা দিয়ে। ব্রিটিশ বিনয় বজায় রেখে ইংল্যান্ডের রানি বলেন, অনুমতি দিলে আমি তা দেখিয়ে দিতে পারি আপনাকে। উৎসাহী হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রানি থেরেসা মেকে ফোন করেন।

—‘ম্যাডাম প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে এই প্রশ্নের উত্তর দিন। আপনার মায়ের আছে এক সন্তান এবং আপনার বাবারও এক সন্তান। শিশুটি আপনার ভাই বা বোন নয়। তাহলে এটা কে?’

থেরেসা মে দ্রুত উত্তর দেন, ‘ওই সন্তানটি আমি।’

ধন্যবাদ জানিয়ে রানি ফোন ছেড়ে দেন। ব্রিটিশ মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললেন, মি. ট্রাম্প, আপনি কী বুঝতে পারলেন কিছু?
—হ্যাঁ, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমি অবশ্যই এ কৌশল ব্যবহার করব।’
ওয়াশিংটনে ফিরে আসার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় নিযুক্ত মার্কিন দূতকে পরীক্ষা করে দেখবেন ইংল্যান্ডের রানির কৌশলে। হোয়াইট হাউসে ইলিয়ট আব্রামসকে ডাকা হলো। ট্রাম্প বললেন, ‘মি. আব্রামস, আপনি কি আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন?
—অবশ্যই মি. প্রেসিডেন্ট, প্রশ্নটা কি?
ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, ‘আপনার মায়ের আছে এক সন্তান এবং আপনার বাবারও এক সন্তান। শিশুটি আপনার ভাই বা বোন নয়। এটা কে?’
ইলিয়ট আব্রামস ভাবনায় পড়লেন। বললেন, আমি কি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আপনার কাছে ফিরে আসতে পারি মি. প্রেসিডেন্ট।
—অবশ্যই। টেক ইওর টাইম!—এটা মার্কিন সৌজন্যতা। ডোনাল্ড ট্রাম্পও এর চর্চা করেন মাঝে মধ্যে।
ইলিয়ট আব্রামস দ্রুত অন্যান্য দূতদের একটি সভা আহ্বান করেন। প্রেসিডেন্টের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য দ্রুত সহযোগিতা চান কিন্তু কেউ উত্তর দিতে পারেন না। অবশেষে আব্রামস নিকি হেলিকে ডাকলেন এবং তাঁকে প্রশ্নটি করলেন।
—নিকি, আপনার মায়ের আছে এক সন্তান এবং আপনার বাবারও এক সন্তান। শিশুটি আপনার ভাই বা বোন নয়। এটা কে?
হেলির দ্রুত উত্তর, ‘এটা আমি-গাধা কোথাকার!
এবারে আব্রামস হোয়াইট হাউসে ফিরে এলেন। বললেন, ‘আমি উত্তর জানি, স্যার! আমি জানি কে এটা! এটা নিকি হেলি।’
—ভুল! গর্দভ কোথাকার-তিনি হচ্ছেন থেরেসা মে!

ইব্রাহীম চৌধুরী: আবাসিক সম্পাদক
প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা
ই-মেইল: [email protected]