সাবওয়ের আরও সাতটি কবিতা

কবিতার চর্চা আমাদের দেশের তুলনায় আমেরিকায় কম কি বেশি সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। তবে নিউইয়র্কে গণপরিবহনে লোকজন যেভাবে চলতে চলতে বই পড়ে, তা থেকে এটা ধরে নেওয়া যেতেই পারে যে, এখানে পাঠক অনেক। সেই সঙ্গে অনেকেই মোবাইল ফোন কিংবা আইপ্যাডে পড়ছেন আমাজনের কিন্ডল অ্যাপ থেকে। ২৫ বছর আগে থেকে আমেরিকার খ্যাতিমান কবিদের কবিতা ‘সাবওয়ে’ মানে নিউইয়র্কের পাতাল রেলের দেয়ালে সেঁটে দেওয়ার কার্যক্রম চালু হয়। সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্ম। সেখান থেকে নেওয়া আমেরিকার বিখ্যাত আট কবির আটটি কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করা হলো।

লেডি লিবার্টি
নাথালি হ্যা

সব তারকা ধাবিত নগরীর দিকে।
সে এক স্বর্গদূত, উন্মুক্ত করছে মধ্যরাতের মোড়ক।
অদৃশ্য ভেঁপুতে মুখরিত এক নদী
চাঁদের দু পাশের হেঁটে চলা পথ।
আলোয় বুঁদ হওয়া
সে এক দুঃখী
পাল তোলা নৌকার বুকে
ভালোবাসা নিয়ে ঘোরা যাত্রী,
খুঁজে পায় নিখুঁত এক দ্বীপ


হাস্যকর
কেভিন ইয়াং

গরমাগরম খাবারের মতো
আমি তোকে ভালোবাসি।
অনুরূপ ভালোবাসি উষ্ণ রুটি,
শীতল মাংসের গোলাকার ফালি,
মাখন শোভিত স্যামেচের আহ্বান
অথবা ‘থ্যাংকস গিভিং’ এর শেষে
কয়েক দিন পর, যখন আমি চাই
যা কিছু উচ্ছিষ্ট।


প্যাঁচা
আর্থার সি

ধূসরিত নবজাত সন্ধ্যার তালুতে ময়ূরী রঙের পথ।
দেখলাম প্যাঁচা এক অলস বসে আছে গাছের শাখায়। তার পাখা ঝাপটানোর কম্পনে ভূপাতিত ধূলিকণার হাহাকার ।
আমি তখনো নিশ্চুপ। নীরবতা ভেঙে
প্যাঁচার কণ্ঠে এবার বেজে ওঠে প্রভাতি সংকেত।
তারপর ভোর আসে, সবুজাভ পথ জেগে ওঠে
সম্ভাব্য আলোয়।

ভালোবাসার ধ্বংসাবশেষ
জিম মোরে

আমি দূরে একপ্রান্তে দাঁড়ানো আমার মাকে স্মরণ করছি।
খুব সন্তর্পণে নৈশভোজ শেষে ভাঁজ করছিলেন টেবিল ক্লথ,
যেন ওটা কোনো দেশের পতাকা
যে দেশের অস্তিত্ব এখন পৃথিবীর মানচিত্রে নেই।
কিন্তু একসময় সেই দেশটাই শাসন করত গোটা বিশ্ব।

একটি মুহূর্ত
মারি হাআও

আহ, ‘কোথাও নেই’ এমন একটি মুহূর্ত থেকে
কিছুই ঘটে না।
‘প্রতিদিনের করণীয় কাজ’ এই তালিকায় কিছু নেই,
এমন একটি মুহূর্ত আমার নেই।
হয়তো আধেক মুহূর্ত পরেই থেমে যায়
ট্রাফিকের হুড়োহুড়ি।
আমার কী হওয়া উচিত, আমার কী হওয়া উচিত,
আমার কী হওয়া উচিত—নিরন্তর উচ্চারিত এই শব্দকে
তাড়া করতে করতে নিস্তব্ধতায় বিলীন হয়ে যায় যাপিত জীবন।
সাদা কাপড়ের পর্দাটির চিরন্তন আহ্বান সামনে ঝুলতে থাকে।


ভালো জীবন
ট্রেসি কে স্মিথ

কিছু মানুষ যখন অর্থ-কড়ি নিয়ে কথা বলে
মনে হয় এটি রহস্যময় কোনো প্রেমিক অথবা প্রেমিকা,
দুধ কিনতে যাওয়ার কথা বলে
যে আর ফিরে আসেনি।
এবং এটি আমাকে স্মৃতিকাতর করে যখন আমি
বছরের পর বছর কফি এবং
রুটির ওপর বেঁচে আছি।
সব সময় ক্ষুধার্ত, কাজের জন্য হেঁটে বেরিয়ে পড়া।
পানি সংগ্রহের জন্য যেমন দূর গ্রামের টিউবওয়েলের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে কোনো নারী।
তারপর অন্যদের মতো এক-দুই রাত বেঁচে থাকে
চিকেন রোস্ট এবং রেড ওয়াইনের ওপর।


একটি কবিতার কী করা উচিত বলে তোমার মনে হয়
এনটোজাকি স্যাংগে

সহজেই
একটি কবিতায়
পুরোপুরিভাবে
কিছু একটা প্রাপ্তিতে নিজেকে
তোমার পরিপূর্ণ মনে করা উচিত।
সিডি তোমাকে মোহিত করবে,
বন্ধ করে দাও সেই পথ।
বদলে ফেল মন
কিংবা তাকে তৈরি করে নাও।
কবিতা তোমার কাছে শীতল জল অথবা
চুম্বন হয়ে ধরা দেওয়া উচিত।