ফারুক ফয়সলের কবিতা

মানুষের বসতের ভেতর

তখন উর্বর পলি সম্ভাবনা দারুণ বর্ষাকাল
নদীতে সে বেলা ভরা জোয়ারের টান
উদ্দাম বাঁধনহারা তাণ্ডব বাতাসের
মাঝির তখন তীরে ভেড়ার তাড়া।

মাঝির বইঠা জলের স্রোতে সুঠাম ঘাই হাঁকায়
শক্ত সুঠাম বুকের খাঁচায় হাপরের হাঁপ
স্বপ্ন দেখা ঘোরলাগা চোখে বইঠা মারে ছলাৎ ছল
নদীর তখন জলের ভেতর আরেক জল কল কল।

তাণ্ডব থেমে গেলে নতুন দিনের উষা নতুন কিরণ ছড়ায়
চারিদিক সুনসান শান্ত, নরম হাওয়া মনের বাগান কাঁপায়।
নীরবে বীজ রোপণ হয়, ফসল সম্ভাবনা উদীয়মান চরে
নদী ও মাঝির যুগল স্বপ্ন, সত্য হয়ে মানুষের বসত গড়ে।


মৃত্যু তাকে পৌঁছে দেয় অন্য উচ্চতায়

চোখ দুটি তার উজ্জ্বল রোদের ভেতরেও জ্বলজ্বলে,
ভাটার আগুন জ্বলছে যেন অক্ষিগোলকের তারায়,
ক্রোধ জমা বুকের ভেতর তুষের আগুন ধিকি ধিকি জ্বলে
হৃদ্কন্দরে আগুনের ফুল, বারুদ গন্ধ নাকের ডগায়।

বুকের কোন গহিন বনে বেজে চলে মাদল দ্রিমিকি দ্রিমিক
অসম যুদ্ধ খেলায় বেজে যায় রণসংগীতের গোপন গিমিক।
এক পাশে প্রস্তুত রাজ সেনারা, রাষ্ট্রের বেতনভুক কর্মচারী
স্লোগান মুখে এগিয়ে আসে মিছিল গণতন্ত্রের ঝান্ডাধারী

পিঠে ও বুকে গণতন্ত্রের সনদ লিখে এগিয়ে আসে দৃপ্ত পায়ে
প্রতিবাদের ভাষা প্রতিরোধ হয়ে সামনে দাঁড়ায় বুক চিতিয়ে।
অতিসাধারণ মানুষ একজন অনন্যসাধারণের উচ্চতায়
বীরের মৃত্যু মানুষটিকে কোটি মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করায়।

একাকী একজন

বিষণ্ন দুঃখী রাত কখনো নিঃসঙ্গ নয়।
রাতভর তার ডানায় আশ্রয় নেয় কত
কত নিঃসঙ্গ মানুষ।
হাজার বছরের জমাট শিলা-প্রস্তরে গঠিত
হিমাচল দাঁড়িয়ে থাকা নিলাদ্রিও একা নয়,
যত একা একজন মানুষ।
নিলাদ্রির মাথা ছুঁয়ে আছে সুবন্ধু সুনীল আকাশ,
সময়ে সবান্ধব, অসময়ে মানুষেরই কেবল দীর্ঘশ্বাস।

আজও স্বভাব আদিম বনের পশু সকল দলবদ্ধ গুচ্ছ,
পক্ষীকূল এখনো ডানা মেলে উড়াল দেয় ঝাঁক বেঁধে,
নীড়ে যখন ফেরে, সাঁঝের আঁধারে, ঘরকন্না একসঙ্গে
নদীও নয় একা, নানা পথ ঘুরে সেও সাগরে ঘর বাঁধে।

পৃথক মানুষ দুজন, এক হয়ে এক সম্পর্ক, এক ঘর
যোজন দূরত্ব মনের ঘরে, একে অপরের বড্ড পর।

প্রেমিক কখনো পরাজিত নয়

আধ খাওয়া পোড়া সিগারেটের টুকরোর মতো ভাঙা
আধখানা চাঁদও আজ আমার বড্ড প্রিয়।
চার পাশের কোলাহল, শিশুদের কান্না, কারখানার শিফট চেঞ্জের সাইরেন
আজ আমার কাছে শব্দদূষণ নয়,
আজকের গুমোট গরম, লোডশেডিং, গলির বেওয়ারিশ কুকুরের অহেতুক চিৎকার
কিছুই আমাকে বিরক্ত করছে না।

আজ এই রাত, এখন এই সময় আমার করায়ত্তে।
আমার রাজ্যের আজ আমিই রাজা।
আমার হাতের তালুতে নাচছে আজ অধরা রাজকুমারী,
তার চোখের কোনায় ভাসতে দেখি ব্যথাদীর্ণ ছবি আমারই।

হৃদয় আমার নাচেরে, কী সুখে আমি নাচি!
যে কষ্ট নিয়ে বেঁচেছি এতটা দিন, আজও বাঁচি
আজ তার মৃত্যু ঘণ্টা শুনেছি, তার সমাধি দেখেছি।
অপমানের আগুন, অভিমানের বেদনা আজ জল করেছি।