আশরাফ আহমেদের তিনটি কবিতা

প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা

বিষণ্ন শীতের আড়ষ্ট বিকেলের নির্জনতা
বিবর্ণ ঘাস, পাতাঝরা ন্যাড়া নগ্ন গাছ-পালা,
পশ্চিমে হেলে যাওয়া সূর্যের নরম রক্তিম আভা
এরই মাঝে একটি দোয়েলের খাবার খোঁজার আকুলতা!
সাথির, নাকি উড়তে না-পারা বাচ্চাদের জন্য? গুঁড়ি গুঁড়ি বরফে দৃষ্টি আচ্ছন্ন করে ফেলেছে দ্রুত
বরফের কুঁচিতে ডানা আড়ষ্ট করে ফেলতে পারে সহসাই,
শীতল অনুভূতি ওড়ার শক্তিও শিথিল করে দিতে পারে
ত্বরায় শেষ চেষ্টায় মেলে ক’টা পোকা আর মাকড়।
রোদের শেষ ঝিলিক মিইয়ে যায় যায় সময় যাত্রা শুরু তুষারের নির্দয় নিষ্ঠুর কামড়ে, আড়ষ্ট, ক্লান্ত ডানা মেলে অদম্য বাসনায় ক্ষিপ্রতা আনে, গতি আনে যথাসাধ্য।
পৌঁছাতে হবে কোটরে যেখানে প্রিয়া আর ছানা সব
অধীর প্রতীক্ষায় খাবারের অপেক্ষায়
ক্ষুধার্ত বাচ্চা নিয়ে মা দোয়েল দুশ্চিন্তায় সময় কাটায়।


সত্য নির্ভেজাল

আমার জানালায় পড়ন্ত বিকেলের অপস্রিয়মান ছায়া
অস্বচ্ছ নীল আভা সরীসৃপের মতো পশ্চিম দিগন্তে ধায়
ধীরে ধীরে, যেন মৃত্যুর অবয়বে শব্দহীন কোনো কায়া
অস্পষ্ট হতে হতে মিলিয়ে যায় আকাশের জানালায়।
অন্ধকার আর কৃত্রিম আলোর আধো-আঁধারি পরিবেশে
ক্ষণিকের জন্য হলেও হালকা আমেজ আনে দেহ-মনে
মিলনের আকুতি আর প্রতীক্ষা শেষ হওয়ার আয়েশে
মানুষ জেগে থাকে, নিশাচর পাখি, জন্তু-জানোয়ার সবে
উদ্যোগ নেয় শিকারের, দিনের কোলাহল শেষ হলে তবে।
নড়ে চড়ে ওঠে কায়া, বসার প্রবল ইচ্ছে মনে জাগে
রক্তিম লাল আভা উঁকি দেয় ধীরে ধীরে পূর্ব দিগন্তে
কফির সুতীব্র গন্ধে কায়ার ইচ্ছে হয় মৃত্যু যন্ত্রণা ত্যাগে।
সন্ধ্যা, নিশিকথা, আশা-নিরাশা সবই সত্য নির্ভেজাল
দিনের বাস্তবতা কঠিন, আর আশা-নিরাশায় ভরা
তবুও চলতে হয় দিন-রাত্রি, সূর্যের, জীবনের তালে তাল।


ছন্দপতন

শব্দহীন গান আর অর্থহীন ঝড়ো হাওয়ার কবিতায়
দিনরাত খুঁজি তোমাকে প্রভু আমি কর্মহীন এক যোগী,
বারবার ভেসে আস আমার মনের গভীরে গাঁথা আয়নায়
এক বুক ব্যথা নিয়ে শোকে কাতর আমি একান্তে ভুগি।
জপে তপে ভেজা চোখও এক সময় শুকিয়ে যায়,
অন্তরের আর্তনাদে শত চেষ্টায়ও স্রষ্টার স্তব গাওয়া হয় না
নিদ্রাহীন আরাধনা, শব্দহীন গান গাওয়া থেমে গেছে, হায়
হাতড়ে মরি শব্দ সব আর পেলেও তো ছন্দোবদ্ধ হয় না।
ছন্দপতন খুঁজতে গিয়ে তাকে দেখি খোয়াই পাড়ে
পড়ন্ত এক বিকেলে অস্তাচলের সোনা মধুর ক্ষণটিতে
সংলাপ ছিল না, শুধু বুঝি অনুভব ছিল হৃদয়ে হৃদয়ে
লহমায় নিয়ে গেল সৃষ্টি সুখের সব উল্লাস আচম্বিতে
প্রিয় খোয়াই সাক্ষী হয়ে মনের সুখে ভাটি দেশে যায় ধেয়ে।