ধরপাকড়ের পাশাপাশি নাজুক আদালত

আমেরিকা জুড়ে ইমিগ্রান্টদের ধর পাকড় চলছে। নিউইয়র্ক থেকে মিসিসিপি পর্যন্ত এ ধরপাকড়ে নাজেহাল ইমিগ্রান্টরা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, খামার, ফ্যাক্টরিতে ইমিগ্রেশন বিভাগ হানা দিচ্ছে। এ সপ্তাহে এক দিনে মিসিসিপি থেকে প্রায় ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট এজেন্ট বা আইস।
পুরো আমেরিকায় মধ্যে নানা কারণে নিউইয়র্কের ইমিগ্রেশন আদালতে ভোগান্তি এখন চরমে উঠেছে। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় নিউইয়র্কের ইমিগ্রেশন আদালত। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় ইমিগ্রেশন মামলাগুলো পড়ে আছে বছরের পর বছর। বিচারক থেকে অনুবাদক সংকটের কারণে বিচারকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। নির্দিষ্ট কোটা পূরণ করতে গিয়ে বিচারকেরা হিমশিম খাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রণ নীতির পাশাপাশি ইমিগ্রেশন আদালতের সংকট ইমিগ্রান্টদের জন্য বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যারা পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ইমিগ্রান্টদের স্বর্গরাজ্য মনে করে আমেরিকায় এসেছেন তাঁরা এসে হোঁচট খাচ্ছেন নিউইয়র্কে। নানা উপায়ে আসা আমেরিকায় এসে যারা আশ্রয়ের আবেদন করেছেন, তাঁদের বছরের পর বছর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ২৬ ফেডারেল প্লাজা হিসেবে পরিচিত ম্যানহাটনের বিশাল ভবনটিতে ঠাঁই নাই অবস্থা। বিচারকেরা কর্মচারীদের ভাগ নিয়ে কাজ করছেন। অনেক বিচারককে প্রয়োজনীয় কর্মচারী না থাকায় নিজেকে নথিপত্র আর ক্লিনিক্যাল কাজ করতে হচ্ছে। অফিসের বাইরে করিডরে কাগজের স্তূপ জমছে। নানা দেশ থেকে আসা, নানা ভাষায় কথা বলা ইমিগ্রান্টদের জন্য পর্যাপ্ত অনুবাদক পাওয়া যাচ্ছে না। ফেডারেল প্লাজায় ধরনা দেওয়া আশ্রয়ের জন্য আবেদনকারী বহু ইমিগ্রান্টের অবস্থা এখন নাজুক। 

ইমিগ্রেশন বিচারক আমিনা খান নিজেই এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। বলেছেন, ‘আমরা চরম এক অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’ ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইমিগ্রেশন জাজেস–এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট আমেনা খান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমাদের কাজের জন্য পর্যাপ্ত জোগান নেই। বিচারকদের অতিরিক্ত কাজ করার কথা সব সময় বলা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু না দিয়েই বলা হচ্ছে বেশি কাজ করতে হবে।’ পদ্ধতিটি ধীরে ধীরে এমন অবস্থায় এসে ঠেকেছে বলে এই বিচারক মন্তব্য করেন। তিনি বলেছেন, ইমিগ্রেশন জাজদের বছরে কমপক্ষে ৭০০ মামলা সুরাহা করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কের ইমিগ্রেশন আদালতে প্রায় এক লাখ ১৭ হাজার মামলা পড়ে আছে। এই সংখ্যা আমেরিকার অন্য যে কোনো রাজ্যের থেকে বেশি। জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে জানানো হয়েছে, নিউইয়র্কে নতুন ছয়টি ইমিগ্রেশন আদালত নির্মাণ হচ্ছে ২৯০ ব্রডওয়ে ঠিকানায়। একই ঠিকানায় আগে থেকেই পরিবেশ এবং আই আর এস–এর অফিস রয়েছে।
ইমিগ্রেশন আদালতগুলোর দেখভালের দায়িত্ব এক্সিকিউটিভ অফিস অব ইমিগ্রেশন রিভিউ বিভাগের। তারা জানিয়েছে, ইমিগ্রেশন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে প্রয়াস অব্যাহত আছে। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৯ সালের প্রথম আট মাসে বেশি সংখ্যক ইমিগ্রেশন মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ইমিগ্রেশন আদালতে নতুন সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নতুন বিচারক নেওয়া হচ্ছে, এর মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং, ভিডিও কনফারেন্সিং—এ সব করা হচ্ছে। বিচারক আমেনা খান বলেন, এ সব কিছুই মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির নিশ্চয়তা দেয় না। ২০২৩ জন্য ডিপোর্টেশনের মামলাগুলো নিয়ে এখন তাঁকে কাজ করতে হচ্ছে।
মাইগ্রেশন স্টাডিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ডোনাল্ড কেরুইন বলেছেন, ইমিগ্রেশন আইনের কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে, আইনের প্রয়োগ বাড়ানো হয়েছে। এ সব করার জন্য যে লোকবল বা জোগান দরকার তার কোনোটাই করা হয়নি। ফলে দিনে দিনে মামলা জট বেড়েছে। বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন নীতি পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। ইমিগ্রেশন বিচারকরাই বলছেন, ট্রাম্পের আমলে ইমিগ্রেশন আদালত অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার জন্য পর্যাপ্ত লোকবল ও অন্যান্য জোগানের জন্য এমনটি ঘটছে। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী একজন বিচারকের জন্য দুজন সহযোগী প্রয়োজন। বিচারকেরা তা পাচ্ছেন না।
ইমিগ্রেশন আইনজীবী জেনিফার উইলিয়াম বলেছেন, এসব কারণে ইমিগ্রান্টরা অনেক ক্ষেত্রেই ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য চাপ থাকার কারণে বিচারকেরা অনেক স্বাক্ষ্যকে শুনানিতে ডাকছেন না। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে এমনটি হচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছেন আইনের আশ্রয় চাওয়া মানুষ।