নিউইয়র্কে এবার গরু ও খাসির বাজার চড়া

দেশে আর নিউইয়র্ক শহরে কোরবানি দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য অনেক। বাংলাদেশে কোরবানি জন্য হাট থেকে গরু কেনা হয়। আর এখানে কোরবানির এক মাস আগে থেকেই সব বাংলা গ্রোসারিতে লেখা থাকে, এখানে কোরবানির অর্ডার নেওয়া হয়। তাই কোরবানির জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো বাংলাদেশি মালিকানাধীন গ্রোসারিতে অর্ডার দেওয়া।
আবার কেউ কেউ আছেন, যারা কয়েকজন মিলে খামারে গিয়ে গরু বাছাই করে কোরবানি দেন। আবার অনেকেই এই প্রজন্মের বাচ্চাদের কোরবানি কী, তা বোঝানোর জন্য ছাগল কিনে শহর থেকে দূরে পরিবার নিয়ে গিয়ে ফার্মে ছাগল জবাই করে। গরিব যেহেতু এখানে নেই, তাই সেই মাংস ভাগাভাগি করে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুর বাড়িতে পাঠিয়ে কোরবানির পর্ব শেষ করেন। এখানে ফকির-মিসকিনদের দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই মাংস বিতরণে সমস্যার মধ্যেই পড়তে হয়। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ গরুর মাংস এড়িয়ে চলেন।
এখানে এক ভাগ গরু কোরবানি দিলে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ পাউন্ড মাংস পাওয়া যায়। একভাগের নিচে দেওয়া যায় না বলে পরিমাণও কমানো যায় না। 

বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত গ্রোসারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের ঈদে গরু ও খাসির সংকট রয়েছে। যে কারণে গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির ব্যয় বাড়তে পারে।
জ্যাকসন হাইটস, ব্রঙ্কস, জ্যামাইকাসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত গ্রোসারির মালিকদের সঙ্গে করা হয় গরু ও খাসির সংকট নিয়ে। তাঁরা বলেন, এখানে যারা হোলসেলার রয়েছে, তারা জেনে গেছেন, দাম বাড়লেও মুসলিম সম্প্রদায়কে কোরবানি দিতে হবে। যে কারণে তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।
গ্রোসারি মালিকেরা বলছেন, একসময় প্রবাসী বাংলাদেশি মুসলিমরা কোরবানির ঈদ এলে কোরবানির জন্য দেশে অর্থ পাঠিয়ে দিতেন। সেখানে পারিবারিকভাবে কোরবানি দেওয়া হতো। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বেশির ভাগ প্রবাসীই এখন এখানে কোরবানি দেন। নিউইয়র্ক বা তার আশপাশের গরু ও খাসির হোলসেলাররা বুঝে গেছেন, মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা আসছে। এই সময় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন কোরবানি দিয়ে থাকেন। সুতরাং তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রতি বছরই কোরবানির সময় গরু ও খাসির দাম বাড়াচ্ছে। এবার আবার অন্যান্য বছরের তুলনায় গরু ও খাসির বাজার চড়া।
তবে হোলসেলাররা দাবি করেন, গরুর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গরুর দাম বেড়ে গেছে। স্বভাবতই মাংসের দামও বেড়েছে। আবার আগের তুলনায় নিউইয়র্কে এখন বাঙালি বেশি। মাংসের চাহিদা অনেক বেড়েছে। দোকানিরা বলেন, গত বছর যে পরিমাণ অর্ডার পেয়েছেন এবারের অর্ডারের পরিমাণ তার চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশি এক ব্যবসায়ী বলছেন, হোল সেলারদের মুনাফার টার্গেট থাকে। খামার মালিকেরাও সারা বছর এই সময়ের অপেক্ষায় থাকে। পেনসিলভানিয়া বা নিউজার্সির খামার থেকে তাঁর দোকানের গরু আসে। আমেরিকায় গরু উৎপাদন তো শুধু কোরবানির ঈদ নির্ভর নয়। সারা বছরই সারা বিশ্বে গরু রপ্তানি করে আমেরিকা।
ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, হালাল মাংস পাওয়ার সুযোগ আগে খুবই সীমিত ছিল। তখন হালাল মাংস পেতে প্রবাসী পূর্বপুরুষদের ইহুদি কসাইদের শরণাপন্ন হতে হতো। কিন্তু সে পরিস্থিতি এখন অনেকটা বদলে গেছে।
নিউইয়র্কসহ আমেরিকার অনেক অঙ্গরাজ্যে চালু হয়েছে বুকিংয়ের মাধ্যমে কোরবানির ব্যবস্থা। শুধু আমেরিকায় নয়, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও এভাবে বুকিং প্রথায় কোরবানি চালু হয়েছে।