বৃহৎ পরিসরে বাফার পথচলা শুরু

বৃহৎ পরিসরে বাফার কার্যক্রম শুরু উপলক্ষে কেক কাটার আয়োজন করা হয়।  ছবি: এম বি তুষার
বৃহৎ পরিসরে বাফার কার্যক্রম শুরু উপলক্ষে কেক কাটার আয়োজন করা হয়। ছবি: এম বি তুষার

বৃহৎ পরিসরে যাত্রা করেছে বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্ট (বাফা)। পুরোনো এই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি, শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলাভাষা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। কমিউনিটি বড় হওয়ায় বাফায় স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। এ জন্য বৃহৎ পরিসরে বাফার কার্যক্রম শুরু উপলক্ষে ৯ আগস্ট বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নিউইয়র্কে যে কয়টি বাংলাদেশি নামী সাংস্কৃতিক সংগঠন আছে, যারা বাঙালি সংস্কৃতিকে মনেপ্রাণে লালনপালন করছে, বাফা তার মধ্যে অন্যতম। শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ধীরে ধীরে সাফল্যের সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এই সংগঠন। বাফা অনেক দিন যাবৎ নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্মের বাচ্চাদের নাচ, গান, আবৃত্তি, বাংলা ভাষা শিক্ষা দিয়ে আসছে। এত দিন সংগঠনটি একটা টিউটোরিয়াল সেন্টারের বেসমেন্টে ছোট একটা জায়গায় কাজ করে আসছিল। সময়ের পরিক্রমায় তাদের ছাত্রছাত্রী বেড়ে যাওয়ায় সেখানে জায়গার সংকুলান হচ্ছিল না।
৯ আগস্ট অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল পুরো স্টার্লিং সড়ক। সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। বাফার নতুন কার্যালয়ের যাত্রা উপলক্ষে বাফা কর্তৃপক্ষ ব্রঙ্কসের ২১৭২ স্টার্লিং অ্যাভিনিউ তাদের নতুন কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাফার কর্মকর্তা, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাফার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাফার নৃত্য বিভাগের প্রধান নৃত্যগুরু অনুপ কুমার দাশ, গানের শিক্ষক জাবেদ ইকবাল, বাংলা বিভাগের প্রধান আনোয়ারুল হক লাভলু, বাংলা শিক্ষক মিতু সরকার, জান্নাতুল আরা, বাফার অন্যতম পরিচালক ফারজানা ইয়াসমিন, লেখক সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, অধ্যাপক মতলুব আলী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শহীদ হাসান, নজরুল একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম দুলাল, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট সিরাজুল ইসলাম সোহাগ, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট আবদুস শহীদ, অধ্যাপক সৈয়দ মজিবুর রহমান, এন ইসলাম মামুন, রেহেনা সুলতানা, নীরা কাদরি, কবি কাজী আতিক, সাহিত্য একাডেমির পরিচালক মোশারফ হোসেন, কবি সোনিয়া কাদের, কবি জুলি রহমান, রানু ফেরদৌস, শামীম আরা বেগম, মানসী হাজরা, সাহিত্য সংগঠন পঞ্চায়েতের মাসুম আহমদ, লেখক ও গীতিকার ইশতিয়াক রুপু, সাংবাদিক ও লেখক রওশন হক, আবু সাঈদ রতন, লেখক পলি শাহীনা, অ্যাসেম্বলিওম্যান কারিনা রেইজের প্রতিনিধি সামিরা, মার্জিয়া স্মৃতি, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবুল বাসার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বাফা কীভাবে শুরু হলো, শত বাধা বিপত্তির মধ্যেও কীভাবে এটি এগিয়ে যাচ্ছে, কীভাবে চারদিকে এর প্রসার হচ্ছে, কীভাবে তাদের কর্মপরিধি বাড়ছে—সেসব নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। বক্তারা আরও বলেন, ‘বাফার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে বিদেশে তুলে ধরছি, বিদেশে বেড়ে উঠা এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বাফার মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতিকে জানতে, বুঝতে ও শিখতে পারছে। তাই আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো বাফার পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা। বাফা এখন শুধু আর নিউইয়র্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা তাদের অসাধারণ সব কাজের মাধ্যমে আমেরিকার অন্যান্য অঙ্গরাজ্যেও কাজ করছে। তারা আমেরিকার মূলধারাও পারফর্ম করে থাকে।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে অ্যাসেম্বলিওম্যান কারিনা রেইজের পক্ষ থেকে তার প্রতিনিধি সামিরা বাফার অতুলনীয় কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাফার পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিনের হাতে প্রক্লেমেশন সার্টিফিকেট তুলে দেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কেক কেটে বাফার নতুন এই যাত্রাকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর গান পরিবেশন করে শিল্পী পাপী মনা, শম্পা রহমানসহ অনেকে। উৎসবমুখর পরিবেশে তা চলে মাঝরাত পর্যন্ত।
বাফা ২০১০ সালে মাত্র ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। বাফার কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের আশা এবং স্বপ্ন ছিল তাদের নিজস্ব একটা কার্যালয় থাকবে। সময়ের পরিক্রমায় তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হলো।
বাফার নতুন ঠিকানা—২১৭২ স্টার্লিং অ্যাভিনিউ, ব্রঙ্কস, এনওয়াই ১০৪৬২। সংগঠনের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের ফোন নম্বর: ৩৪৭-৩৮৭-৭৮৯৭ ।